নিজস্ব সংবাদদাতা • চন্দননগর |
সাট্টা ও জুয়া খেলার প্রতিবাদ করায় হাসপাতাল থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হল এক অসুস্থ অটোচালককে। রেয়াত করা হল না তাঁর স্ত্রীকেও।
ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা সুব্রত দে নামে ওই অটোচালক সোমবার স্ত্রীকে নিয়ে চন্দননগর হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সুব্রতকে চিকিৎসকের ঘর থেকে বের করে এনে রাস্তায় ফেলে মারে বেশ কিছু যুবক। তাদের মধ্যে অটোচালকদের একাংশও ছিল বলে অভিযোগ। রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে সুব্রতকে ওই হাসপাতালেই ভর্তি করানো হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই অটোচালকের মাথার আঘাত গুরুতর। ‘স্ক্যান’ জরুরি। কপালে গভীর ক্ষত রয়েছে। এসডিপিও (চন্দননগর) তথাগত বসু জানিয়েছেন, মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। পুলিশেরও অনুমান, সাট্টা-জুয়ার কারবারিদের বিরুদ্ধে সরব হওয়াতেই ওই অটোচালকের উপরে হামলা হয়েছে।
এক সময়ে ভদ্রেশ্বর স্টেশন-চন্দননগর হাসপাতাল রুটে অটো চালাতেন সুব্রত। ওই স্টেশন চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে সাট্টা ও জুয়ার ঠেক চলছে এবং তাতে অটোচালকদের একাংশও জড়িত বলে অভিযোগ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এই ‘পরিস্থিতি’র প্রতিবাদ করতেন সুব্রত। তাই ওই স্ট্যান্ডে তাঁকে দাঁড়াতে দেওয়া হত না বলে ভদ্রেশ্বর থানায় একাধিক বার অভিযোগ দায়ের করেছেন বলেও জানান সুব্রতবাবু। কিন্তু সাট্টা-জুয়া বন্ধ হয়নি। স্ট্যান্ডের অটোচালকদের একাংশের ‘রোষে’ পড়ে সম্প্রতি ভাড়ায় অটো চালাচ্ছিলেন সুব্রত। আগের গোলমালের জেরে রবিবার ভদ্রেশ্বর স্টেশন লাগোয়া স্ট্যান্ডের এক অটোচালকের সঙ্গে তাঁর বচসা ও মারামারি হয়। বুকে আঘাত পান সুব্রত। সে ব্যাপারে তিনি ওই রাতেই ভদ্রেশ্বর থানায় অভিযোগও দায়ের করেন। শরীর খারাপ লাগায় সোমবার সকালে সুব্রত স্ত্রীকে নিয়ে চন্দননগর হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসককে দেখাতে যান। |
এ দিকে, সুব্রত যে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন, তা জানতে পেরে যান অটোচালকদের একাংশ। সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ বেশ কয়েকটি অটোতে ২০-২৫ জন চড়াও হয় চন্দননগর হাসপাতালে। সেই দলে কয়েক জন মহিলাও ছিল। হামলাকারীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র এবং ধারালো অস্ত্রও ছিল বলে অভিযোগ। চিকিৎসকের ঘর থেকে টেনে-হিঁচড়ে হাসপাতালের বাইরে রাস্তায় আনা হয় সুব্রতকে। শুরু হয় কিল-চড়-লাথির বৃষ্টি। হামলকারীরা দলে ভারী থাকায় স্থানীয় দোকানদার বা সাধারণ মানুষ এগোতে সাহস করেননি। পরে অবশ্য তাঁরাই রক্তাক্ত সুব্রতকে হাসপাতালে ভর্তি করান। সুব্রত বলেন, “সাট্টা-জুয়ার প্রতিবাদ করেছিলাম বলেই ওরা আমাকে স্ট্যান্ডে দাঁড়াতে দিত না।
এ বার মারধর করে আমার উপরে রাগ মেটাল। বোধ হয় আমাকে খুনই করতে চেয়েছিল। সেই কারণে রিভলভার, চপার নিয়ে এসেছিল।” শিবানী বলেন, “ওদের সঙ্গে আসা কয়েক জন মহিলা আমাকেও বেধড়ক মারে। শাড়ি ছিঁড়ে দেয়।”
হাসপাতালের উল্টো দিকেই একটি চায়ের দোকানের মালিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন, “ওই ভাবে যে কাউকে মারা হতে পারে, ভাবতে পারছি না। কিছু বোঝার আগেই হামলাকারীরা চলে যায়।” আর এক দোকানি বলেন, “হামলকারীরা সংখ্যায় বেশি ছিল বলে এগোতে ভয় পাচ্ছিলাম।”
হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক উন্মেষ বসু ঘটনার কথা পুলিশকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “হাসপাতালের রোগী, চিকিৎসক ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ পিকেট বসানোর জন্য বলা হয়েছে।” |