ভোটারের বয়স ৬০, কিন্তু ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে কমিশনের প্রতিনিধি ওই ভোটারের যে ছবি তুলেছেন তা দেখে কমিশন হতবাক। ভোটদাতার বয়স মেরেকেটে ২০। অপর এক ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, খাতায় কলমে ভোটদাতা যুবক। কিন্তু ভোট দেওয়ার আগে তাঁর যে ছবি তোলা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ভোটার এক দীর্ঘকেশী মহিলা!
ভুয়ো ভোট কমাতে এ বারের মণিপুর বিধানসভা নির্বাচনে, প্রতিটি বুথে বাধ্যতামূলক ভাবে ভোটারদের ছবি তোলার নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। গত কাল ও আজ সচিত্র ভোটার তালিকা ও বুথে তেলা সংশ্লিষ্ট ভোটারের ছবি মেলাতে গিয়ে এমন বিস্তর গরমিল ধরা পড়েছে। সর্ষের মধ্যেই ভূত থাকায় মণিপুরের পাঁচ জেলার বহু বুথে ফের ভোটগ্রহণ করা হতে পারে বলে রাজ্য নির্বাচন দফতর সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।
রাজ্যে, বিশেষ করে পার্বত্য মণিপুরের ক্ষেত্রে ভুয়ো ভোট, ছাপ্পা ভোট, রিগিং নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ছিল ভোটের আগেই। ভুয়ো ভোটে রাশ টানতেই নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিয়েছিল, রাজ্যের প্রায় ২৩০০ বুথের, প্রতিটিতে ডিজিট্যাল ক্যামেরা রাখতে হবে। আঙুলে কালি লাগাবার পরে ক্যামেরায় ভোটারের ছবি তোলা হবে। তারপর মিলবে ইভিএম অবধি যাওয়ার অনুমতি।
কিন্তু প্রথমেই বিপত্তি। অতগুলি বুথে ক্যামেরা দেওয়ার মতো সামর্থ্য না থাকার কারণ দেখিয়ে রাজ্য বুথ প্রতি একটি করে হাজার টাকার লেমন মোবাইল ফোন দিয়ে দেয়। সেই মোবাইল ক্যামেরার জোর নামমাত্র। তাতে ঘরের অন্ধকারে ভাল ছবি ওঠার সম্ভাবনাই ছিল না। ভোটপর্ব মেটার পরে চান্ডেল, তামেংলং, সেনাপতি, কাংপোকপি, উখরুল, চূড়াচাঁদপুর থেকে বিস্তর অভিযোগ আসতে থাকে। গত কাল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতরে ভোটদাতার নাম ও ছবি মেলাবার পালা শুরু হয়। চলে আজ রাত অবধি। তিন বিশেষ পর্যবেক্ষক ও মুখ্য নির্বাচনী অফিসার লাউমকুংগা প্রায় ২০০ অভিযোগ মিলিয়ে দেখেন। এর মধ্যে প্রায় ৫০টিই সত্যি বলে প্রমাণ হয়। ছবি মেলাবার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার জন্য দফতরের বাইরে তিনটি টিভি পর্দা টাঙানো হয়েছিল। সেখানেই ভোটারের নাম, লিঙ্গ, বয়স, পরিচয়পত্রের নম্বর ফুটে ওঠে। পাশে দেখানো হয় ভোটের সময় তোলা ছবি। একে একে নামের গরমিল, ছবির গরমিল, লিঙ্গ ও বয়সের গরমিলগুলি সামনে আসে। বহু ছবিই এত অন্ধকার ও ঝাপসা যে তা থেকে আসল ব্যক্তির চেহারাই শনাক্ত করা যায়নি। থঙ্গল সুরুং-এর একটি বুথে মোবাইলের মেমরি কার্ডটিই খোয়া গিয়েছে। লাউমকুংগা স্বীকার করেন, “বুথে ছবি তোলা নিয়ে বিস্তর বেনিয়ম হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকরা তাঁদের রিপোর্ট তৈরি করছেন। সেই রিপোর্ট দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হবে। প্রয়োজন বুঝে কিছু বুথে ফের ভোট গ্রহণ হবে কিনা তা দিল্লিতে কমিশনই ঠিক করবে।” |