নির্বাচন কমিশনকে ‘সন্তুষ্ট’ করতে এবং প্রধান বিরোধী দল বিজেপিকে থামাতে আপাতত কিছুটা পিছু হটছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বিতর্ক থামাতে ‘প্রতীকী’ দুঃখপ্রকাশ করতে পারেন তিনি। সরকারের তরফেও কমিশনের চিঠির জবাব দেওয়া হবে। কিন্তু একই সঙ্গে কংগ্রেস মনে করছে, সংখ্যালঘু সংরক্ষণের কথা বলে খুরশিদ কোনও ভুল করেননি। উল্টে খুরশিদের বিরুদ্ধে যে আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে নির্বাচন কমিশন, সেই আচরণবিধির কোনও আইনি স্বীকৃতি নেই বলে এ বার পাল্টা বিতর্ক উস্কে দিয়েছে কংগ্রেস।
বিরোধীরা অবশ্য আজও খুরশিদ-বিতর্কে সরব ছিল। লালকৃষ্ণ আডবাণী, নিতিন গডকড়ী, উমা ভারতী-সহ একাধিক শীর্ষ বিজেপি নেতা এ দিন মনমোহন সিংহের সরকারকে আক্রমণ করেছেন। পাল্টা জবাবে কংগ্রেস বলছে, বিজেপির আচরণে হতাশা ফুটে উঠছে। কারণ তারা বুঝতে পারছে, উত্তরপ্রদেশে দলের ফল ভাল হবে না। পঞ্জাব এবং উত্তরাখণ্ডও হাতছাড়া হতে চলেছে। বিজেপিকে বিঁধলেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে অবশ্য খুরশিদের পাশে প্রকাশ্যে দাঁড়াচ্ছে না দল। এআইসিসি নেতৃত্বের বক্তব্য, হতেই পারে, আগামিকাল নির্বাচন কমিশন বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনল। তখন কংগ্রেস কিছু বললে অন্যরা যাতে খোঁটা দিতে না পারে, সেটাও ভাবা দরকার। তাই গত কাল জনার্দন দ্বিবেদী প্রকাশ্যে খুরশিদকে সতর্ক করেন।
এখন প্রশ্ন হল, কমিশনের চিঠির কী জবাব দেওয়া হবে? সরকারি সূত্রের খবর, সাপ মরে অথচ লাঠি না ভাঙে, এমন কৌশল নেওয়ার কথাই ভাবা হচ্ছে। খুরশিদকে এমন জবাব দিতে হবে যাতে কমিশন সন্তুষ্ট হয় এবং এই বার্তাও যায় যে, তিনি কোনও ভুল করেননি। এখনই তাড়াহুড়ো না করে বিতর্ক থিতিয়ে যাওয়ার পরে জবাব দেওয়া ভাল হবে বলেও অনেকে মনে করছেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। যখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে, সকলেই জানতে পারবেন।” কংগ্রেস নেতৃত্বের যুক্তি, ভোটের প্রচারে এই ধরনের অনেক কথা বলা হয়। দলীয় ইস্তাহারের বাইরে প্রচারে অন্য কিছু বলা যাবে না, এমন কোনও নিয়ম নেই। আজ রায়বরেলীতে গিয়ে এমন যুক্তি দিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা বঢরাও। তিনি বলেন, “এ সময় সকলেরই নিজের মত জানানোর অধিকার রয়েছে। কমিশনেরও সেই অধিকার রয়েছে।”
কিন্তু কমিশন অধিকারের সীমা ছাড়িয়েছে কি না, আজ ঘুরপথে সেই প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেন, “নির্বাচনের সময় যে আদর্শ আচরণবিধি প্রযোজ্য হয়, তাকে বোধহয় এ বার আইনি স্বীকৃতি দেওয়া দরকার। হয়তো নির্বাচন কমিশন পাঁচ রাজ্যের ভোট মেটার পরে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।” আদর্শ আচরণবিধির আইনি স্বীকৃতি নেই, পরোক্ষে এ কথাই বলেছেন মণীশ। কংগ্রেসের বক্তব্য, ভোটের আগে দলগুলি কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে আদর্শ আচরণবিধি মেনে চলার পক্ষে সায় দেয়। সেখানে কমিশন পর্যবেক্ষকের ভূমিকা নেয়। কিন্তু খুরশিদের ক্ষেত্রে কমিশন বিচারকের ভূমিকা নিয়েছে। আদর্শ আচরণবিধি আইনি স্বীকৃতি পেলে, তা লঙ্ঘনের প্রশ্নটি খতিয়ে দেখবে আদালত। তা ছাড়া, কমিশনের যে আদতে কিছুই করার ক্ষমতা নেই, এ ঘটনাতেই তা প্রমাণিত। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, খুরশিদ সতর্ক থাকবেন। ঠিক সময়ে তিনি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে এবং কমিশনের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে বিবৃতিও দেবেন। কিন্তু কমিশনের অধিকারের সীমারেখা নিয়েই যখন অস্পষ্টতা রয়েছে, তখন তাদেরও সতর্ক থাকা উচিত।
|