দু’দিন পর গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার রিপোর্ট প্রকাশ করবে বিশেষ তদন্তকারী দল সিট। তার পরেও নরেন্দ্র মোদী যদি উত্তরপ্রদেশে ভোট প্রচারে না যান, তা হলে এ বছরের শেষে গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে সাহায্য করবে না সঙ্ঘ। মোদীকে সেই বার্তা ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দিয়েছেন সঙ্ঘ নেতৃত্ব।
উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে দাবি এসেছে, মোদী প্রচারে আসুন। কিন্তু পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড তো বটেই, মায়াবতীর রাজ্য, যেখানে আর দু’দিন বাদে তৃতীয় পর্যায়ের ভোট, সেখানেই বা কবে তিনি প্রচারে যাবেন, তার কোনও নির্দিষ্ট দিন দেননি। যদিও দলের নেতাদের জানিয়েছেন, এত দিন তিনি সদ্ভাবনা মিশনে ব্যস্ত ছিলেন। সেটি গত কাল শেষ হয়েছে। গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গা নিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দলের রিপোর্টও আজ প্রকাশের কথা ছিল। আদালত সেটি ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছে। সেখানে ক্লিনচিট পাওয়ার আশায় রয়েছেন মোদী। এই পর্ব সমাপ্ত হলেই তিনি প্রচারের দিনক্ষণ জানাবেন।
কিন্তু এত দিন ধরে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও মোদী যে মনোভাব নিয়ে এসেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি এবং সঙ্ঘ নেতাদের ধারণা, এর পরেও তিনি প্রচারে না-ও যেতে পারেন। ক্ষুব্ধ সঙ্ঘ নেতৃত্ব মোদীকে জানিয়ে দিয়েছেন, দলের নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁর ক্ষোভ থাকতে পারে। সেটি আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু কোনও রাজ্যে ভোটের দায়িত্ব কোনও এক নেতার নয়। এটি গোটা দলের দায়িত্ব। সব কেন্দ্রীয় নেতাই যখন ভোট প্রচার করছেন, তখন মোদীকেও যেতে হবে। সঙ্ঘের এক নেতা আজ জানান, “মোদীর ভুলে গেলে চলবে না, তাঁর রাজ্যেও এ বছরের শেষে ভোট রয়েছে।” শীর্ষ নেতারা অনুরোধ করা সত্ত্বেও মোদী দুই রাজ্যে প্রচার করেননি। উত্তরপ্রদেশে প্রচারে যাওয়ার বিষয়টিও ‘আজ যাচ্ছি-কাল যাচ্ছি’ বলে ঝুলিয়ে রেখেছেন। অথচ তাঁর মৌখিক প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যেই মোদীর প্রচারে যাওয়ার কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন। এ কথা জানিয়ে সঙ্ঘের ওই নেতা বলেন, “গোধরার রিপোর্ট আসার পর যদি মোদী প্রচার না করেন, তা হলে গুজরাত নির্বাচনেও তাঁকে সাহায্য করা হবে না।”
সঙ্ঘ শিবিরের মতে, যে ‘সদ্ভাবনা’য় ব্যস্ত থাকার দোহাই দিচ্ছেন মোদী, তা শুরুর আগেও আরএসএস বা বিজেপির সঙ্গে আলোচনা করেননি। লালকৃষ্ণ আডবাণী রথযাত্রা ঘোষণা করার পরপরই জাতীয় রাজনীতিতে আসতে ‘অস্থির’ মোদী একতরফা অনশন কর্মসূচি নিয়ে ফেলেন। স্থানীয় সঙ্ঘ নেতাদের সঙ্গে মোদীর প্রবল বিবাদ সত্ত্বেও সে সময় আরএসএস তাঁর ‘মিশন’কে স্বাগত জানিয়েছিল। অনশন মঞ্চে তাঁরা উপস্থিতও ছিলেন। তাই দলের জন্য তাঁকেও এগিয়ে আসতে হবে।
মোদী ঘনিষ্ঠ এক নেতার পাল্টা বক্তব্য, সঞ্জয় জোশীকে নিয়ে বিবাদ যা-ই থাকুক, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী প্রচারে করতে চান না, এমনটা নয়। এর আগে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের সময় মোদী প্রচার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তাতে প্রবল আপত্তি তোলেন। তখন বিজেপি নেতৃত্ব নীতীশকেই বেশি প্রাধান্য দেন। এর পরেও মোদী প্রচার করবেন না, তা কোথাও বলেননি। তবে পরপর কর্মসূচিতে ব্যস্ত তিনি। তাই কবে প্রচারে যাবেন, তা তিনিই বলতে পারেন।
|