বধূ-মৃত্যু ঘিরে উত্তাল দমদম, আক্রান্ত পুলিশও
ক গৃহবধূর মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে গেল গোটা পাড়ায়। কাউকে না জানিয়ে মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ায় ওই বধূকে মেরে ফেলা হয়েছে, এই অভিযোগে ভাঙচুর চলল শ্বশুরবাড়িতে। এমনকী, পুলিশ অভিযুক্তদের উদ্ধার করতে গেলে ইটবৃষ্টি হল তাদের উপরেও। জখম হলেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। পুলিশের একটি জিপেও উত্তেজিত জনতা আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। সোমবার সকালে এই ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে দমদমের চাষিপাড়া এলাকা।
পুলিশ জানায়, মৃতার নাম মৌসুমী নন্দী (২৮)। ওই বধূকে তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি শারীরিক অত্যাচার করে মেরে ফেলেছেন, এই মর্মে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মৌসুমীর খুড়তুতো ভাই রাজু দাস। যদিও পুলিশের দাবি, ডেথ সার্টিফিকেট অনুযায়ী, অসুস্থ হয়েই মৃত্যু হয়েছে মৌসুমীর।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে মৌসুমী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর স্বামী ভাস্কর নন্দী। সেখানেই কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যান মৌসুমী। সোমবার ভোর চারটে নাগাদ হাসপাতাল থেকে মৌসুমীর দেহ চাষিপাড়ার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। অভিযোগ, পাড়ার কাউকে না জানিয়ে ভোর পাঁচটা নাগাদ তড়িঘড়ি স্ত্রী-র মরদেহ নিয়ে শ্মশানে রওনা হন ভাস্কর ও তার কয়েক জন বন্ধু। ওই বধূর দেহ এলাকা থেকে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁর শ্বশুর দীনবন্ধু নন্দী পাড়ার লোকজন ও মৌসুমীর আত্মীয়দের মৌসুমীর মৃত্যুর খবর দেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওই বধূর আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তাঁরা দাবি করতে থাকেন, শববাহী গাড়ি ফিরিয়ে আনতে হবে। গাড়িটি শেষ পর্যন্ত পাড়ায় ফিরে এলে এলাকার মানুষের অসন্তোষ আরও বাড়ে। তাঁর বারবারই অভিযোগ করতে থাকেন, মৌসুমীকে গোপনে মেরে ফেলে কাউকে খবর না দিয়ে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এর পরেই উত্তেজিত জনতা মৌসুমীর শ্বশুরবাড়িতে ঢুকে কয়েকটি ঘরে ভাঙচুর শুরু করে। খবর পেয়ে দমদম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।
জ্বলছে পুলিশের জিপ। সোমবার, চাষিপাড়ায়। — নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ উত্তেজিত জনতার হাত থেকে দীনবন্ধুবাবু ও তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যাদেবীকে নিজেদের হেফাজতে নিতে গেলে জনতা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাঁদের অভিযোগ, মৌসুমীর ওপর দীর্ঘদিন ধরেই অত্যাচার চালাতেন তাঁর স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি। দীনবন্ধু, সন্ধ্যাদেবী ও ভাস্করকে তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে, এই দাবিও ওঠে। পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছুড়তে থাকে উত্তেজিত জনতা। এমনকী, চাষিপাড়া থেকে একটু দূরে কালিন্দী ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে দাঁড়ানো একটি পুলিশের জিপে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে যান ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের
ডিসি (ট্রাফিক) ও গোয়েন্দাপ্রধান দীপনারায়ণ গোস্বামী।
নন্দী পরিবারের প্রতিবেশী সীমা সেনাপতির অভিযোগ, “মৌসুমীকে ওর বর ও শ্বশুর-শাশুড়ি মিলে দীর্ঘদিন ধরেই অত্যাচার করত। আমরা কান্নাকাটির আওয়াজও শুনেছি। তবে মৌসুমী খুব লাজুক ছিল বলে আমাদের কিছু বলত না।” আর এক প্রতিবেশী সুতপা দিন্দা বলেন, “রবিবার বিকেলেও আমার সঙ্গে মৌসুমীর কথা হয়েছে। তার পরে রাতের মধ্যে এমন কী অসুস্থতা হল যে, মারা গেল?” মৌসুমীর জেঠিমা সোনা দাস বলেন, “মেয়েটা মারা গেল। আমাদের জানানোরও প্রয়োজন মনে করল না ওরা?” স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর বারো আগে ভাস্করের সঙ্গে বিয়ে হয় মৌসুমীর। যে বাড়িতে ওই পরিবার থাকে, সেটি ওই বধূর বাপের বাড়ি। মৌসুমীর স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি ওই বাড়িতে ভাড়ায় আসেন বছর পনেরো আগে। মৌসুমীর মা-বাবার মৃত্যুর পরে ওই বাড়িতেই তাঁরা থাকতে শুরু করেন।
এ দিকে পুলিশ জানিয়েছে, হাসপাতালের দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেট অনুযায়ী মৌসুমীর মৃত্যু হয়েছে অসুস্থ হয়েই। আর জি করের ডেপুটি সুপার সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, “হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৌসুমীর মৃত্যু হয়। জটিল এক ধরনের বাত (লুপাস) নিয়ে ওই বধূকে সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। অন্য কোনও ধরনের অস্বাভাবিকতা আছে বলে ডাক্তারদের দেখে মনে হয়নি।”
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (সদর) কল্লোল গনাই বলেন, “দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। মৃতার পরিজনদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভাস্কর, দীনবন্ধু ও সন্ধ্যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আজ ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই ছিল। হঠাৎ কিছু লোক উত্তেজিত হয়ে খড়দহ থানার একটি জিপে আগুন ধরিয়ে দেয়।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.