প্রায় সাড়ে তিন বছর পরে এ রাজ্যে পা রাখতে চলেছে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল। পশ্চিমবঙ্গে পালাবদলের পরে এই প্রথম।
সিঙ্গুর-কাণ্ডের জেরে লগ্নি পরিকল্পনায় ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ’-এর আশঙ্কা থেকে এক সময় মার্কিন শিল্পমহলের কাছে ব্রাত্য হয়ে পড়েছিল এ রাজ্য। দেশের অন্য শহরে পা রাখলেও তখন কলকাতাকে এড়িয়ে গিয়েছিল ‘ইউ এস ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিলের (ইউএসআইবিসি) একটি বড়সড় বাণিজ্যদলও। দলের নেতৃত্বে ছিলেন কারগিল ও বোয়িং-এর কর্তারা।
ভারতে মার্কিন দূতাবাসের ‘সিনিয়র কমার্শিয়াল অফিসার’ জুডি র্যাঙ্কা সোমবার জানান, আগামী শুক্রবার দু’দিনের সফরে কলকাতায় আসছে ওই বাণিজ্যদলটি। মূলত বন্দর ও সেই সংক্রান্ত পরিকাঠামো শিল্পে যুক্ত ৭টি বেসরকারি ও ২টি সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি থাকবেন সেই দলে। এরপর দলটি দেশের অন্য শহরে পাড়ি দেবে।
জুডি এবং কলকাতায় মার্কিন কনস্যুলেট-এর ‘প্রিন্সিপাল কমার্শিয়াল অফিসার’ রিচার্ড ক্রেগ জানান, দলটির মূল উদ্দেশ্য আপাতত এখানে তাদের পণ্য ও প্রযুক্তি বিপণন। সে জন্য অংশীদারের খোঁজে বেঙ্গল চেম্বারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনাচক্রে যোগ দেবে তারা। সেখানে কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায় ও কলকাতা বন্দরের পদস্থ কর্তারাও থাকবেন। পর দিন দলটি হলদিয়া বন্দর পরিদর্শনে যাবে।
জুড জানান, সে ভাবে লগ্নিকারী কেউ থাকছেন না ওই দলে। সেই কারণেই দলটি মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যের অন্য কোনও মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবে না। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই বলেই দাবি মার্কিন দূতাবাস কর্তাদের। তবে ভবিষ্যতে এই ব্যবসায়িক গাঁটছড়া থেকেই লগ্নির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বলে তাঁদের আশা। সাধারণ ভাবে বাণিজ্যদলে লগ্নিকারীরা থাকলে তবেই তাঁরা তাঁদের পরিকল্পনা নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করেন। দলটিতে দি পোর্ট অফ বাল্টিমোর, এলিকট ড্রেজেস, ডিএসসি ড্রেজ, র্যাপিস্কান সিস্টেম-এ মতো সংস্থার প্রতিনিধিরা থাকবেন। মূলত বন্দরের ড্রেজিং বা নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবসাতেই তারা যুক্ত।
এপ্রিলের শেষে এ শহরে আসবে জলসম্পদ উন্নয়ন ও সেই সংক্রান্ত প্রযুক্তি নিয়ে কর্মরত আর একটি মার্কিন বাণিজ্যদল। জুডের মতে, ভারতে জলের সমস্যা থাকায় এ ক্ষেত্রে ব্যবসার সুযোগও বেশি।
প্রসঙ্গত, ২০০৮-এর সেপ্টেম্বরে সিআইআই-এর সভায় কলকাতায় তৎকালীন মার্কিন কনসাল জেনারেল বেথ পেন স্পষ্ট বলেছিলেন, সিঙ্গুরকে কেন্দ্র করে তাঁদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যদি রতন টাটাই এখানে সুষ্ঠু ভাবে ব্যবসা করতে না-পারেন, তাহলে অন্যরা কী ভাবে লগ্নি করবেন? তাঁদের আশঙ্কা ছিল, এখানে লগ্নি করলেও পরে রাজনৈতিক কারণে চুক্তি বাতিল হয়ে যেতে পারে।
তাহলে কি এখন এ রাজ্য সম্পর্কে তাঁদের মনোভাব বদলাচ্ছে? জুডের দাবি, এই বাণিজ্য সফরের অর্থ এটা নয় যে, হঠাৎ এখানে লগ্নির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। শুধু এ রাজ্য বা পূর্বাঞ্চলই নয়, গোটা দেশেই মার্কিন শিল্পমহলের উপস্থিতি আরও ভাল ভাবে তুলে ধরতেই তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন, দাবি জুড-এর। তিনি এও বলেন, “কেন্দ্রের ‘পুবে তাকাও’ নীতি সম্পর্কেও আমরা উৎসাহী।” |