সুশান্ত বণিক ও অর্পিতা মজুমদার • আসানসোল ও দুর্গাপুর |
তাকে লুকিয়ে-চুরিয়ে দেখেই হয়তো কেটে গিয়েছে পুরো একটা বছর। কারও আবার বছরভরের ব্যস্ততায় প্রেমই খাচ্ছে হাবুডুবু। পুরনো প্রেমকে গুছিয়ে নিতে আর নতুন প্রেমের খাতা খুলতে তাই আবার হাজির ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’।
অন্য বারের মতো প্রিয়জনকে গ্রিটিংস কার্ড, বিভিন্ন উপহার দেওয়ার পাশাপাশি তাকে পাশে নিয়ে একেবারে নিজের মতো করে দিনটা কাটাতে তৈরি খনি ও শিল্বাঞ্চল। তবে এ ব্যাপারে মতভেদও রয়েছে। কেউ বলেন, প্রেমের নামে উৎসর্গ করা এমন একটি দিন দরকার। আবার কেউ বলেন, ভালোবাসার আবার কোনও দিন হয় না কি!
বাঙালির ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ শুরু হয় বসন্ত পঞ্চমীর দিন থেকে। পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার ফাঁকে আড় চোখে দেখে নেওয়া পাশের জনের সঙ্গে আলাপ যেন পূর্ণতা পায় আজকের দিনটিতেই। এ রকম অভিজ্ঞতা কুহু বাগচি ও প্রশান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের। আসানসোলের একটি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়া ওঁরা। কলেজের মাঠে দাঁড়িয়ে কুহু বলেন, “এই বছর প্রথম ভ্যালেন্টাইন্স ডে সেলিব্রেট করব আমরা দু’জনে।” প্রশান্ত বলেন, “এ বারই সরস্বতী পুজোর দিন আমাদের আলাপ জমেছে। তাই দিনটা নিজেদের মতো করে কাটাতে চাই।” |
প্রিয়জনের জন্য পছন্দের উপহার কিনতে গত কয়েক দিন ধরেই দোকান, শপিং মলে জমাচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা। কী নেই উপহার সামগ্রীর তালিকায়! ‘শো-পিস’, টেডি, ব্যাগের পাশাপাশি মোবাইল, আইপড, আবার আংটি, কানের দুল থেকে বহুমূল্য হিরের পেনডেন্ট পর্যন্ত। দুর্গাপুরের বিভিন্ন উপহার সামগ্রী, গ্রিটিংস কার্ড, গয়নার দোকান ঘুরে দেখা গিয়েছে, সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই এ সব দোকানে বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে। দিনটি উপলক্ষে বিভিন্ন দোকানে রয়েছে বিশেষ ‘অফার’-ও। গয়নার দোকানে বিশেষ বিশেষ ডিজাইনের উপর মজুরিতে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তৈরি শহরের পার্কগুলিও।
দুর্গাপুরে বেনাচিতির এক গ্রিটিংস কার্ডের দোকানে গিয়ে দেখা গেল, এ বার বাংলা গ্রিটিংস কার্ড বিক্রি হচ্ছে ভালই। দোকান মালিক সমীরণ সাহা বললেন, “আগের বছর পর্যন্ত বাংলা কার্ডের এমন রমরমা ছিল না।” দোকানে তখন গ্রিটিংস কার্ড কিনতে এসেছিলেন কলেজ ছাত্রী সুপ্তোত্থিতা, প্রেরণারা। তাঁরা বললেন, “আগে বাংলা কার্ডের গেট আপ খুব খারাপ ছিল। কিন্তু এখন ঝকঝকে কার্ড দেখে মন ভরে যায়। প্রিয়জনকে দিতে ইচ্ছে করে।” দশ বছর আগেও এই দিনটির কোনও অস্তিত্ব ছিল না প্রদীপ তা-র কাছে। আসানসোলের বাজারে তাঁর গ্রিটিংস কার্ড ও উপহার সামগ্রীর দোকান রয়েছে। তাঁর কথায়, “নববর্ষের থেকেও ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে আমাদের বিক্রি এখন ভাল হয়। ”
দুর্গাপুরে একটি শপিং মলের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর দোকানের মালিক চন্দন দত্ত জানালেন, ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ উপলক্ষে মোবাইলের বিক্রি বেড়েছে। অনেক দিন পরে কয়েকটি আইপডও বিক্রি হয়েছে। তার বক্তব্য, “আইপড বিক্রি হওয়াটা আশ্চর্যের বৈ কি। আজকের দিনে মোবাল প্রয়োজন মিটে যায়।” সি টি সেন্টারের এক অলঙ্কারের দোকানে গিয়ে দেখা গেল ভিড় বেশ ভালই। বেসরকারি সংস্থার কর্মী বুম্বা অগ্রবাল, স্বপন মুখোপাধ্যায়রা বললেন, “যখন কলেজে পড়তাম, তখন প্রেমিকাকে ছোট শো-পিসের বেশি উপহার দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। এখন রোজগার করছি। তাই এতটা ভাবতে পারছি।” |
উপহারের সঙ্গে চলছে ‘প্ল্যানিং’-ও। “এ দিনই তো একাকিত্ব ভুলে নিজের ভালোবাসার জনকে খুঁজে পেতে ইচ্ছে করে।” কিছুক্ষণ থামলেন রিমা দে। তার পরে জানালেন, বার্নপুরের অভিষেক মাজির সঙ্গে তাঁর বছর চারেকের আলাপ। এখন সে কলকাতায় আইটি সেক্টরে কাজ করে। কলেজের মাঠে দাঁড়িয়ে স্ক্রিন টাচ মোবাইলে অভিষেকের সঙ্গে কথা বলেই তাই সারতে হচ্ছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে কাটানোর প্রস্তুতি। “এ বছর এই দিনটা একেবারে আলাদা।” বললেন, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়। বহু দিন আগে একটা কিছুর অস্তিত্ব টের পেয়েছেন। কিন্তু তা কাছে এসেও ধরা পড়েনি। আজ সেই ধরা দেওয়া ও পড়ার দিন। প্রতিবেশী ইপ্সিতা হালদার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্রী। তিনি কথা দিয়েছেন, মঙ্গলবার ইন্দ্রনীলের সঙ্গে একসঙ্গে কাটাবেন বার্নপুরের নেহেরু পার্কের নির্জনতায়।
প্রতীক্ষা শেষ। আজ শুধু প্রিয়জনের চোখে হারিয়ে যাওয়া। তা নিরালা পার্কই হোক বা বিলাসবহুল রেস্তোঁরা। তাতে কী! |