আধুনিক পদ্ধতিতে চাষের জেরে জেলায় রেশম গুটির উৎপাদন বাড়ায় মালদহের কালিয়াচক এলাকার চাষিরা অনেকেই ধান, গম ছেড়ে রেশম চাষ করার দিকে ঝুঁকছেন। চলতি বছরে জেলায় রেশম চাষে ২০ শতাংশ উৎপাদন বেড়েছে। অন্যদিকে, ধান চাষ করেও দাম পাননি বহু চাষি। এই পরিস্থিতিতে রেশম চাষে আগ্রহ প্রকাশ করে বহু চাষি রেশম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। রাজ্য টেক্সটাইল দফতরের মালদহের উপ অধিকর্তা সুব্রত দাস বলেন, “এর আগে মালদহে মরসুমের পাঁচটি চাষের মধ্যে কোনও একটি বরাবরই মার খেত। ফলে উৎপাদনও কিছুটা মার খেত। গত দুই বছর থেকে জেলার একটি চাষ মার খাচ্ছে না। ফলে জেলায় রেশম উৎপাদনও ২০ শতাংশের উপরে বেড়ে গিয়েছে। তাতেই রেশম চাষের উপর সাধারণ চাষিদের আগ্রহ বেড়ে গিয়েছে। জেলা কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা সজল ঘোষ বলেন, “ধান, গম চাষ ছেড়ে রেশম চাষের দিকে কিছু চাষি ঝুঁকছে একথা ঠিক। কয়েক বছর ধরে রেশমের গুটির দাম যেভাবে বেড়েছে এতে অনেক চাষিই রেশম চাষে নামবেন বলে আশা করছি। কেননা, যেখানে পয়সা বেশি পাবেন সেখানেই তো চাষিরা ঝুঁকবেন।” কালিয়াচকের রেশম ব্যবসায়ী জুলফিকার আলি বলেন, “১৯৯২-৯৩ সালে চিন থেকে রেশম গুটি ঢোকার ফলে জেলায় রেশম চাষ সেই সময় একদম কমে যায়। অনেকেই সেই সময় রেশম চাষ ছেড়ে দেন। গত ৩-৪ বছর ধরে জেলার উৎপাদিত রেশমের দাম বেড়ে যাওয়ায় রেশম চাষের দিকে প্রচুর চাষি ঝুঁকেছেন। ফলে জেলায় রেশম উৎপাদনও বেড়ে গিয়েছে। আমার এলাকায় ১০-১২ জন চাষি ধান চাষ ছেড়ে রেশম চাষ শুরু করেছেন। আরও অনেক চাষি রেশম চাষ করার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।” কালিয়াচকের শাহাবাজপুরের ডোমাইচকের তপন মন্ডল বলেন, “আমার ৫০ শতক জমিতে ধান চাষ করতাম। ধান চাষ করে তেমন লাভ করতে পারিনি। ধান চাষ বন্ধ করে সেই জমিতে তুঁত চাষ করেছি। পাশাপাশি রেশম চাষ শুরু করেছি। গত বছর ৯ হাজার টাকা মণ গুটি বিক্রি করেছি। আর কোনও দিন জমিতে ধান চাষ করব না।” ওই গ্রামেরই মন্টু মন্ডল ধান চাষ ছেড়ে তাঁর ৬৬ শতক জমিতে রেশম চাষ শুরু করেছেন। তাঁর কথায়, “ধান বিক্রি করতে না পেরে চাষিরা আত্মহত্যা করছেন। ২ বছর আগে রেশম চাষ শুরু না করলে আমাকেও আজ আত্মহত্যা করতে হত।” একই কথা জানিয়েছেন নওদা যদুপুরের সহিদুর রহমান। এখন তিনি তাঁর ৩৩ শতক জমিতে রেশম চাষ করছেন। মালদহ জেলায় ২০ হাজার একর জমিতে রেশম চাষ হয়। প্রায় ৫৮ হাজার পরিবার রেশম চাষের সঙ্গে যুক্ত ছিল। দুই বছরে তা অনেকটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে। চাষিদের উন্নত মানের জীবাণুমুক্ত ডিম সরবরাহ করা, রেশম প্রতিপালন করার ঘর জীবাণুমুক্ত করার ফলে রেশম উৎপাদন বেড়ে গিয়েছে। উপ অধিকর্তা বলেন, “আগে জেলায় বছরে ১১ হাজার মেট্রিক টন গুটি হত। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার মেট্রিক টন।” |