কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকল্প রূপায়ণের সময়সীমা ধার্য করে দেওয়া হয়েছিল তিন বছর। নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও প্রায় দেড়বছর কেটে গেলেও উত্তর দিনাজপুর জেলায় রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুৎ যোজনার কাজ শেষ হয়নি। গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ওই প্রকল্পে জেলার ৯ টি ব্লকের ৯৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৫০ শতাংশ বিদ্যুদয়নের কাজ শেষ হয়েছে। সবথেকে খারাপ হাল জেলার ইসলামপুর, গোয়ালপোখর ও চাকুলিয়া ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার। ওই তিনটি ব্লকে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ বিদ্যুদায়নের কাজ হয়েছে। আবেদন জানিয়েও জেলার ৯টি ব্লকের ১ লক্ষ বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবার অন্ধকারে।
কংগ্রেস, তৃণমূল ও প্রকল্পের কর্তাদের অভিযোগ, পূর্বতন রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সময়মতো প্রজেক্ট রিপোর্ট জমা না দেওয়ার কারণেই বিদ্যুদয়নের কাজে অগ্রগতি হয়নি। সম্প্রতি, রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত, কালিয়াগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক রাজ্যের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দফতরের প্রতিমন্ত্রী প্রমথনাথ রায়-সহ প্রকল্পের জেলা কর্তারা কলকাতায় গিয়ে রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী মণীশ গুপ্তকে সবিস্তার জানিয়ে অবিলম্বে বিদ্যুদয়নের কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন। কংগ্রেস পরিচালিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোক্তার আলি সর্দার বলেন, “পূর্বতন রাজ্য সরকারের গাফিলতির জেরেই জেলায় নির্ধারিত সময়সীমার দেড়বছর পরে মাত্র ৫০ শতাংশ বিদ্যুদয়নের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে জেলার ৯টি ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিদ্যুদয়নের কাজ চলছে। জেলা প্রশাসন এনটিপিসি ও রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানিকে সবরকম সাহায্য করছে। আশা করছি, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বিদ্যুদয়নের কাজ শেষ হয়ে যাবে।” ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে প্রাক্তন সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সরকার ১৪৪ কোটি টাকা খরচে জেলায় রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুৎ যোজনার অনুমোদন দেয়। গোয়ালপোখর ব্লকে প্রিয়বাবুর উপস্থিতিতে প্রকল্পের সূচনা করেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী সুশীলকুমার সিন্ধে। ওই প্রকল্পে জেলার ৯টি ব্লকের ৯৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মোট ১৩৪২টি মৌজায় বিদ্যুদয়নের কাজ হওয়ার কথা। বিদ্যুদয়নের কাজে কেন্দ্রীয় সরকার কয়েক দফায় প্রায় ৯০ হাজার বিদ্যুতের খুঁটি বরাদ্দ করে। ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ওই প্রকল্পে বিদ্যুদয়নের কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। প্রকল্পে জেলার ১৩৪২ মৌজার বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারকে বিনে পয়সায় সংযোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। এপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারকে ৩৭৯ টাকার বিনিময়ে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হবে বলেও কেন্দ্রের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়সীমার প্রায় দেড় বছর গড়াতে চললেও এ পর্যন্ত ৭০০টি মৌজায় বিদ্যুদয়নের কাজ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পের জেলা কো অর্ডিনেটর তথা জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দের অভিযোগ, “পূর্বতন রাজ্য সরকার সময়মতো কেন্দ্রীয় সরকারকে বিদ্যুদয়নের কাজের অগ্রগতির প্রজেক্ট রিপোর্ট জমা না দেওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যায়নি!” জেলা তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক অরিন্দম সরকার জানান, দলের তরফে সমস্ত বিষয় মুখ্যমন্ত্রী ও বিদ্যুৎ মন্ত্রীকে জানিয়ে অবিলম্বে কাজ শেষ করার ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে। |