বিদ্যুদয়নের কাজ ঠিকঠাক ভাবে না-হলে দফতরের অফিসারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন রাজ্যের বিদ্যুৎ, উন্নয়ন ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। রবিবার কোচবিহার সার্কিট হাউজে গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের প্রকল্পের পর্যালোচনা করতে জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্তা এবং দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের কাজের অগ্রগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। এমনকী প্রকল্পের কাজের ঢিলেমি নিয়ে এক আধিকারিকের জবাবে সন্তুষ্ট না-হয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। ওই আধিকারিক জেলার দিনহাটার বাসিন্দা হয়েও তিন বছর কোচবিহারে কর্মরত জেনে বিদ্যুৎ মন্ত্রী সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “বাড়ির কাছে চাকরি করছেন। পাথরপ্রতিমায় বদলি করে দিলে কেমন হবে? ঠিকঠাক ভাবে কাজ করুন।” পাশাপাশি মণীশবাবু এ দিন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বেহাল আর্থিক হাল ফেরানোর ব্যাপারেও বিশদে খোঁজখবর নিয়েছেন। সরেজমিনে নিগমের প্রায় অচল নিউ কোচবিহারের সেন্ট্রাল ওয়ার্কশপ, শহরের কেন্দ্রীয় টার্মিনাস ও কোচবিহার-১ ডিপো ঘুরে দেখেন। নিগমের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, পরিচালন বোর্ডের সদস্য আব্দুল জলিল আহমেদও সঙ্গে ছিলেন। পরে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শহর লাগোয়া হরিণচওড়া এলাকায় একটি জমি ঘুরে দেখেন তিনি। বিদ্যুৎ মন্ত্রী বলেন, “বিগত দিনে কাজে ঢিলেমি ছিল। বর্তমান সরকার সে সব কাটিয়ে প্রতিটি ঘরে আলো পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর।” |
জেলার ঘোকসাডাঙায় আয়োজিত রাজ্য ভাওয়াইয়া উৎসবের শেষদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিদ্যুৎ মন্ত্রী এদিন কোচবিহারে যান। দিনের প্রথমার্ধেই সার্কিট হাউজে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি, রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুদায়ন প্রকল্পের আধিকারিকরা ছাড়াও জেলাশাসক মোহন গাঁধি, অতিরিক্ত জেলাশাসক সি মরুগণ-সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে কোচবিহার জেলায় ২০১০ সালের মধ্যে জেলায় রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ না-হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। প্রকল্পের এক আধিকারিক জানান, ৯০ হাজার পরিবারকে বিদ্যুদয়নের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও এখনও অবধি প্রায় ৫০ হাজার পরিবার সংযোগ পেয়েছেন। ওই আধিকারিকের অভিযোগ, ঠিকাদার সংস্থার ঠিলেমির জন্যই ওই অবস্থা তৈরি হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ মন্ত্রী ওই যুক্তিতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তার জেরে এক আধিকারিককে ধমক দেন। বৈঠকে ইঞ্জিনিয়রদের প্রত্যেককে সময়সীমা বেঁধে কাজের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী। দফতরের কোচবিহারের প্রজেক্ট ম্যানেজার লিটন ভৌমিক কোন মন্তব্য করতে চাননি। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “বৈঠকে বিভিন্ন কাজের পর্যালোচনা হয়েছে।” উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের আর্থিক হাল ফেরাতে পরিত্যক্ত জমি, ভবন ব্যবহার করে আয়ের উৎস বাড়ানো, অচল হয়ে থাকা সেন্ট্রাল ওয়ার্কশপের পুনরুজ্জীবনের ব্যাপারেও খোঁজ নেন মন্ত্রী। পরে মণীশবাবু বলেন, “জমি, জায়গা ব্যবহার করা গেলে টাকা বাঁচবে।” প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিও তাঁর পছন্দ হয়েছে বলে জানিয়ে দেন তিনি। নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “সেণ্ট্রাল ওয়ার্কশপে প্রায় ৮ একর জমি রয়েছে। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরে টায়ার রিসোলিং মেশিন সেখানে বসানো হয়েছে। অন্য বিকল্প আয়ের কথাও ভাবতে হচ্ছে। নিগমের পরিচালন বোর্ডের সদস্য আব্দুল জলিল আহমেদ জানান, সংস্থা বাঁচাতে মন্ত্রী আন্তরিক। পরিত্যক্ত জমি, জায়গা পরিকল্পনা মাফিক ব্যবহার হলে কাজ হবে। |