|
|
|
|
মহকুমাস্তরের পরিকাঠামোও নেই ‘জেলা হাসপাতালে’ |
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
নামেই জেলা হাসপাতাল! মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ‘আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের’ এক মাস পরেও ঝাড়গ্রাম হাসপাতাল রয়ে গিয়েছে সেই মহকুমা হাসপাতালের পর্যায়েই। এবং পুরনো খামতি নিয়েই।
এই যেমন শনিবার সকাল পৌনে ১১টাতেও আউটডোরে গয়ংগচ্ছ ভাব। ৮ নম্বর ঘরে স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা নেই। অথচ, সকাল ৯টায় চিকিৎসকদের আউটডোরে আসার কথা। বিনপুরের শিলদার শ্রীমতী দেশওয়ালি, ঝাড়গ্রামের আঁধারিশোলের সরুবালা মাহাতোরা অধৈর্য হয়ে জানালেন, নির্দিষ্ট সময়ের ঘন্টা দু’য়েক পরে আউটডোরে আসাটাই এখানকার ডাক্তারবাবুদের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকাল ১১টা নাগাদ পৌঁছলেন চিকিৎসক রাজীব সরকার। জানা গেল, অন্য কোথাও নয় তিনি এতক্ষণ ছিলেন হাসপাতালেরই অপারেশন থিয়েটারে। প্রয়োজনের থেকে চিকিৎসক কম হওয়াতেই সব দিক সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। ডাক্তারের অভাবে আউটডোরের সব বিভাগগুলি প্রতি দিন খোলাও যাচ্ছে না। শনিবার যেমন ইএনটি, দাঁত, অস্থি ও চর্ম-বিভাগ বন্ধই ছিল। সপ্তাহে গড়ে ৩-৪ দিন বড়জোর ওই বিভাগগুলিতে চিকিৎসকেরা বসেন।
৬ নম্বর ঘরে শল্যবিভাগের চিকিৎসক শীর্ষেন্দু গিরি পৌঁছলেন আরও পরে। ১১টা ১০-এ। হার্নিয়ার যন্ত্রণায় কাতর তিন বছরের শুভদীপ গিরিকে কোলে নিয়ে ঠায় বসেছিলেন ঠাকুমা, জামবনির ঝপলা গ্রামের শেখরবালা গিরি। তিনি আক্ষেপ করছিলেন, “সেই ভোরবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। এখানে দু’ঘন্টারও বেশি বসে।” আউটডোরের ১৬ নম্বর ঘরে মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অনির্বাণ রায়ও ন’টার নির্ধারিত সময়ের বদলে পৌঁছন সাড়ে দশটা নাগাদ। অন্তর্বিভাগে ভর্তি রোগীদের দেখে আসতে গিয়েই দেরি হয় শীর্ষেন্দুবাবু ও অনির্বাণবাবুর। |
|
শনিবার এই চিত্রই ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
লালগড়ের পাপটপুরের সুদর্শন প্রতিহার, বিনপুরের বনআউলিয়ার বৃদ্ধ কমলাকান্ত দাস, জামবনির বামুনডিহার কেদার মাহাতোর মতো আউটডোরে আসা রোগীদের বক্তব্য, “ঘটা করে জেলা হাসপাতাল করা হল, অথচ প্রয়োজনীয় সংখ্যায় বেড পর্যন্ত নেই। ডাক্তার নেই। তেমন প্রয়োজনে সেই মেদিনীপুর মেডিক্যালেই যেতে হচ্ছে আমাদের।” চিকিৎসকেরাও মানছেন, শীতকাল বলে রক্ষে। গরম পড়লে রোগীর চাপ বাড়বে। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আরও কঠিন হবে। আউটডোরের হোমিওপ্যাথি বিভাগেও চিকিৎসক নেই। দুর্ঘটনায় জখম হয়ে তিনি আপাতত ছুটিতে। আউটডোরের চক্ষু-বিভাগের ঘরটিতে বাতানুকূল ব্যবস্থা না-থাকায় চক্ষু-পরীক্ষার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটি যে কোনও সময়ে বিগড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। ব্লাডব্যাঙ্কে গিয়ে দেখা গেল মজুত রয়েছে ৯১ প্যাকেট রক্ত। ভারপ্রাপ্ত কর্মী জানালেন, ব্লাডব্যাঙ্কের নিজস্ব গাড়ি না থাকায় বিভিন্ন শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ করে আনতে সমস্যা হয়। এ দিন গাড়ি ভাড়া করে একশো কিলোমিটার উজিয়ে ঘাটালের শিবিরে রক্ত সংগ্রহে গিয়েছেন কর্মীরা।
অন্তর্বিভাগে ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডটির সংস্কারের কাজ চলছে। ফলে, একতলায় আউটডোরের একাংশেই পার্টিশন দিয়ে অস্থায়ী ভাবে অন্তর্বিভাগ চলছে! শিশুদের ওয়ার্ডে শয্যা ২৮টি। অথচ শনিবারই ভর্তি ছিল ৫৫টি শিশু। ২৭টি শিশুর ঠাঁই হয় ওয়ার্ডের মেঝেয়। বাঁকুড়ার রাইপুরের মণ্ডলকুলি গ্রামের বধূ রিনা চুনারির ৭ মাসের ছেলে রাখহরি ব্রঙ্কিওলাইটিসে ভুগছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া কম্বল মেঝেয় পেতে ছেলেকে নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন রিনাদেবী। তিনি বলেন, “শীতের সময়েও এ ভাবে ছেলেটাকে মেঝেয় শোয়াতে হচ্ছে। বাড়াবাড়ি না হয়ে যায়!” সিক নিও-নেটাল কেয়ার ইউনিটও এখনও চালু হয়নি ঝাড়গ্রামে।
দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ সুপার সুদীপ কাঁড়ার (এত দিন মহকুমা হাসপাতালের সুপার থাকা সুদীপবাবু এখন জেলা হাসপাতালের ‘ভারপ্রাপ্ত সুপার’) বিভিন্ন ওয়ার্ডে রুটিন টহলের সময় দেখলেন, ভিজিটিং আওয়ারের পরেও রোগীর পরিজনেরা তখনও ওয়ার্ডে। কর্মী এত কম, ধমক দিয়ে তাঁদের ওয়ার্ড থেকে বের করার কাজটাও করতে হল সুপারকেই। বেহাল পরিকাঠামোর ছবিটাই যেন আরও এক বার ফুটে বেরোল! |
‘নেই’ আর ‘নেই’ |
আইসিইউ/আইটিইউ নেই।
এসএনসিউ চালু হয়নি।
ক্যান্সার নির্ণয়কেন্দ্র নেই।
রেডিওথেরাপি ইউনিট নেই।
সিটিস্ক্যান ইউনিট নেই।
বার্ন ইউনিট নেই।
অডিওমেট্রি বিভাগ নেই।
অর্থোপেডিক ওটি নেই।
রেডিওলজিস্ট নেই।
পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে বিভাগীয় চিকিৎসক-নার্স নেই।
|
শূন্যপদ, শয্যা অপ্রতুল |
৬০ চিকিৎসক-পদের ২৯টিই শূন্য।
নার্স চাই অন্তত ১২৫,
আছেন ৮৪ জন।
কর্মীর পদ ১২০, আছেন ৬৬ জন।
শয্যা মাত্র ২৫৪ (প্রতিশ্রুত ৫০০)। |
|
|
|
|
|
|