বেসরকারি ডাক্তারের ‘গাফিলতি’
তদন্ত করবে কে, জটেই আটকে দম্পতির অভিযোগ
রাজ্যে কোনও বেসরকারি ডাক্তারের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ মানুষ কোথায় জানাবেন? মেডিক্যাল কাউন্সিল, পুলিশ না স্বাস্থ্য দফতর, তদন্ত করবে কে? আগরপাড়ার এক গৃহবধূ সুতপা মণ্ডলের গর্ভপাতের ঘটনা ঘিরে এই প্রশ্নই উঠে এসেছে স্বাস্থ্যকর্তা ও পুলিশের সামনে। আরও প্রশ্ন, গত ছ’মাস ধরে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যাবতীয় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগের বিচার বন্ধ হয়ে আছে কেন? কেন সরকার কাউন্সিল সচল করা নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না?
গত ডিসেম্বরে আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা সুতপার আচমকা রক্তপাত শুরু হলে তিনি তাঁর চিকিৎসক, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অভিযোগ, সুতপাকে না-দেখেই তাঁর স্বামী সুবীন্ত মণ্ডলের হাতে বিকাশবাবু ওষুধ দেন। সেই ওষুধে সুতপার রক্তপাত দ্বিগুণ হয়ে যায়, কিন্তু সারারাত ফোন করেও বিকাশবাবুকে পাওয়া যায়নি। পরের দিন হাসপাতালে ভর্তির পরেও বিকাশবাবু যাননি বলে অভিযোগ। বেলা সাড়ে এগারোটায় যখন তিনি পৌঁছন, গর্ভপাত হয়ে গিয়েছে।
১৩ জানুয়ারি বিকাশবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ওই দম্পতি। অভিযোগ করা হয় মেডিক্যাল কাউন্সিল ও স্বাস্থ্য ভবনেও। কিন্তু এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বিকাশবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদও করেনি পুলিশ। ওই দম্পতির কথায়, পুলিশ বলছে, স্বাস্থ্য ভবন যদি মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে চিকিৎসককে দোষী ঘোষণা করে তবেই তাঁকে গ্রেফতার করা সম্ভব। স্বাস্থ্য ভবনের বক্তব্য, সরকারি ডাক্তারের বিরুদ্ধে তারা তদন্ত করতে ও শাস্তি দিতে পারে। বেসরকারি চিকিৎসকের ক্ষেত্রে বোর্ড বসিয়ে মত নিলেও চূড়ান্ত রায়ের জন্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে পাঠানো হয়। অথচ, সেই কাউন্সিলেই গত জুলাই থেকে তদন্তের সব কাজ বন্ধ। কাউন্সিল সূত্রে খবর, তৃণমূল ও সিপিএম-পন্থী সদস্যদের বিরোধেই এত দিন পুরনো বোর্ড কাজ করেনি, নতুন বোর্ড নির্বাচিতও হয়নি। সম্প্রতি রাজ্যপাল নতুন অর্ডিন্যান্সে সই করেছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সরকার কবে নতুন বোর্ড নির্বাচন করবে এবং কবে সেই বোর্ড গাফিলতির মামলার তদন্ত শুরু করবে তা এখনই জানানো যাবে না।
সুতপার প্রশ্ন, তা হলে কি বেসরকারি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগে সুবিচার মিলবে না? তাঁর কথায়, “৩০ ডিসেম্বর ভোরে ট্যাক্সি নিয়ে বিকাশবাবুর বাড়ি গেলে উনি নীচেও নামেননি। বাইপাসের এক হাসপাতালে যেতে বলেন। সেখানে ভর্তির পরেও সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত এলেন না। শরীর তখন রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তবু কোনও চিকিৎসক আসেননি। আল্ট্রাসনোগ্রাফি হয়নি। যখন বিকাশবাবু এলেন, গর্ভপাত হয়ে গিয়েছে।”
তিনি যে রোগিণীকে না দেখে ওষুধ দিয়েছিলেন এবং দেরি করে হাসপাতালে যান, তা কার্যত স্বীকার করে বিকাশবাবু বলেন, “অন্তঃসত্ত্বাদের সব সময়ে চেম্বারে আসতে বলি না। তাতে সমস্যা বাড়ে। তাই ওঁর স্বামীর হাতে ওষুধ দিয়েছিলাম।” তাঁর দাবি, ওই ওষুধের সঙ্গে রক্তপাত বাড়ার সম্পর্ক নেই। বাড়িতে আনার পরেও রোগিণীকে দেখতে অস্বীকার করা এবং হাসপাতালে দেরিতে পৌঁছনো নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “বাড়িতে রোগী দেখি না। জ্বর ছিল বলে হাসপাতালে যেতে দেরি হয়েছিল। তবে তাড়াতাড়ি গিয়েও কিছু করার ছিল না। গর্ভপাত আটকানো যেত না।”
মেডিকো-লিগ্যাল বিশেষজ্ঞ অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, গুরুতর অভিযোগেও পুলিশের কিছু করার নেই। মেডিক্যাল কাউন্সিলই ব্যবস্থা নেবে। গোলমাল সেখানেই। তা হলে সুতপাদের কী হবে? কেউ উত্তর দিতে পারেননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.