দুই পায়ের উপরে ভরসা করেই এগিতে যেতে চায় বিধাননগর প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সুস্মিতা মণ্ডল। জন্ম থেকে তার দুটো হাত থেকেও নেই। ডান হাত লম্বায় ৩ ইঞ্চি। বাঁ হাত ৮ ইঞ্চি। শারীরিক বিকৃতির জন্য তার জীবন অন্যদের চেয়ে আলাদা। যে পা দিয়ে সে হাঁটে, সেই পা দিয়েই লেখালেখি করে, ছবিও আঁকে। পড়াশোনায় ভাল। মেধাবী। প্রতিবারে বার্ষিক পরীক্ষায় ভাল নম্বর পায়। প্রথম, দ্বিতীয় হয়। বিধাননগর প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির এই এক রত্তি মেয়েটির মধ্যে যে এত প্রতিভা রয়েছে তা নিয়ে এলাকার কেউ মাথাও ঘামান না। কিন্তু মেয়েটির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন দিনমজুর মা সংলগ্ন বিধাননগর খেলার মাঠে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অনুষ্ঠান চলাকালীন স্কুলের যাওয়ার সময় হোঁচট খেয়ে মাঠের মধ্যে পড়ে গেলে বিষয়টি নজরে পড়ে। সংগঠন সভাপতি শিবেশ ভৌমিক বলেন, “মেয়েটাকে পড়ে দেখে দৌড়ে গিয়ে তুলতে গিয়ে দেখি দুই হাতই নেই। বাঁ হাতটা একেবারে সরু। কবজি ঝুলছে। তাতে একটি আঙ্গুল রয়েছে। বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলাম তাদের সংসারের করুণ অবস্থা। আমাদের ওই অনুষ্ঠানে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। অনুষ্ঠানে ফাঁসিদেওয়ার বিধায়ক রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুনীল তিরকিকে সমস্ত ঘটনা জানানো হয়।” |
মন্ত্রী সুনীলবাবু বলেন, “মেয়েটিকে দেখে আমারও দুঃখ হয়। জানতে পারলাম, পড়াশোনায় খুব ভাল। তার জন্য কিছু করা যায় কি না, চিন্তাভাবনা করছি।” প্রশাসনের উদ্যোগে সুস্মিতাকে ইতিমধ্যেই প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। ফাঁসিদেওয়ার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রণবেশ মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি জানি। মেয়েটির পরিবার আবেদন করলে কিছু একটা ব্যবস্থা করা হবে।” স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান মনোরঞ্জন রায় বলেন, “মেয়েটির প্রতিভার বিকাশের জন্য আমরা সব রকমের সাহায্য করতে রাজি আছি।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমল রায় বলেন, “আমাদের স্কুলের ওই ছাত্রী পড়াশোনায় ভাল। মেধাবীও বটে। পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় হয়। সর্বশিক্ষা মিশনে সব জানানো হয়েছে। সেখান থেকেই পড়াশোনার যাবতীয় উপকরণ দেওয়া হচ্ছে।” বিধাননগরের মিলনপল্লি এলাকায় সুস্মিতার বাড়ি। বাবা সুভাষবাবু ভুটানে কাজ করেন। সেখানেই থাকেন। এক-দু মাস অন্তর বাড়িতে এসে কিছু টাকাপয়সা দিয়ে যান। সে টাকায় সংসার চলে না বলে মা অঞ্জলিদেবী কাগজ কলে দিনমজুরি করেন। ৮০ টাকা হাজিরা পান। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল অভাবের ছাপ। স্বামী-স্ত্রী সহ তাঁদের দুই মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে ৫ জনের সংসার। তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সুস্মিতা ছোট। বড় সুচিত্রা দশম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে নরজিত অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। অঞ্জলিদেবী বলেন, “অভাবের সংসারেও কষ্টসৃষ্টে ছেলেমেয়েদের পড়াছি। সুস্মিতার জন্য খুব দুশ্চিন্তায় দিন কাটাতে হচ্ছে। তার হাত দুটি না থাকায় ভবিষ্যতে কী হবে ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছি না।” সুস্মিতার দিদি সুচিত্রা জানায়, হাত না থাকায় সুস্মিতার স্নান, খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে তাঁদের সাহায্য করতে হয়। সে বাঁ পায়ে ভাল ছবি আঁকতে পারে। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে সুস্মিতার জন্য স্থানীয় একটি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টে সংস্থার পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার টাকাও জমা করা হয়েছে। |