সপ্তাহান্তের সারা দিন শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরলেন পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর ও পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য। লক্ষ্য যানজট কী করে কমানো যায়।
শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ এসপি ও পুরপ্রধান এক সঙ্গে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বের হয়ে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে মধুপুর বাবুলবোনা রোডে যান। সেখানে গাড়ি থেকে নেমে তাঁরা গোটা এলাকা পরিদর্শন করেন। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “ওই এলাকায় সবচেয়ে বড় সমস্যা পঞ্চাননতলা রেলগেটের দু-পারে লরি সিন্ডিকেট কর্তৃপক্ষ রাস্তা দখল করে লরি দাঁড় করিয়ে রাখে। ফলে স্বচ্ছন্দে যান চলাচল করতে পারে না। এতে যানজট চরম আকার নেয়।” সমস্যা সমাধানের জন্য বাবুলবোনা রোডে দাঁড়িয়েই লরি সিন্ডিকেটের কর্তাদের সঙ্গে ফোন করে পুলিশ সুপার এ ব্যাপারে কথা বলেন। হুমায়ুন কবীর বলেন, “পঞ্চাননতলা রেলগেটের দিকে যাওয়ার পথে ডান দিকে রাস্তা সম্প্রসারণের জায়গা রয়েছে। ওই রাস্তা সম্প্রসারণ করা হলে বাঁ দিকের রাস্তা দিয়ে শুধু ছোট গাড়ি যাতায়াতের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। আর ডান দিকের রাস্তা দিয়ে বড় গাড়িগুলি যাতে স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করার জন্য পুর-কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়েছি।” পুরপ্রধান বলেন, “ওই রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য সোমবার থেকে খুঁটি পুঁতে চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হবে। সেক্ষেত্রে ডান দিকে অস্থায়ী যে দোকান ঘরগুলি রয়েছে, তা আরও পিছিয়ে দেওয়া হবে।”
এর পরে পঞ্চাননতলা দিয়ে চুঁয়াপুর হয়ে স্টেশন রোড ঘুরে উত্তরবঙ্গ বাস টার্মিনাস এলাকায় আসেন তাঁরা। পুরপ্রধান বলেন, “ওই এলাকায় একটি বড় পুকুর জেলা পুলিশের অধীনে রয়েছে। ওই পুকুরটি বহরমপুর পুরসভাকে লিজে দেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেছি। ওই আবেদনে সাড়া দিয়ে পুলিশ প্রশাসন আমাদের হস্তান্তর করলে পুকুরকে ঘিরে চারপাশ সৌন্দর্যায়ন করা হবে। সেই সঙ্গে একটি পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে আমাদের।”
ট্রেকার স্ট্যান্ডের দিক থেকে যাওয়ার পথে বাসস্ট্যান্ড ঢোকার মুখে ওই রাস্তা নিচু ও অসমান থাকায় সারা বছর সেখানে জল জমে থাকে। রাস্তার অবস্থাও বেহাল। তা দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন পুলিশ সুপার এবং ওই রাস্তা উন্নয়নের কথা পুরপ্রধানকে জানান। এসপি বলেন, “ওই এলাকার অস্থায়ী দোকান ঘরগুলি রাস্তার উপরে এসে পড়েছে। সেগুলি পিছনের দিকে একটি সরিয়ে দিয়ে ওই রাস্তা চওড়া করা হবে। পাশাপাশি এলাকার জল যাতে দাঁড়াতে না পারে, তাই বড় নর্দমা তৈরির কথাও পুরপ্রধানকে জানানো হয়েছে। ওই নর্দমার উপরে কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া হবে পথচারীদের যাতায়াতের জন্য। রাস্তার পাশ বরাবর রেলিংও দেওয়া হবে।”
সেখান থেকে পুরপ্রধান ও পুলিশ সুপার চলে যান ভাগীরথীর পাড় বরাবর কাজি নজরুল সরণি এলাকা। তখন দুপুর ২টো। পুরপ্রধান বলেন, “রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সেতু থেকে বহরমপুরে ঢোকার রাস্তার দু-পাড় অনেক নীচু হওয়ায় পাশ দিয়ে ছোট গাড়ি যাতায়াতে অসুবিধা হয়। যদিও ওই রাস্তাটি ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি দেখভাল করে। তা সত্ত্বেও পুলিশ সুপারের পরামর্শ ও অনুরোধে ওই রাস্তার দু-পাড়ে খোয়া ইট ফেলে রোলার দিয়ে সমান করে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে।” সেই সঙ্গে কৃষ্ণনাথ রোড বরাবর গির্জার মোড় থেকে খাগড়া পর্যন্ত এলাকা বরাবর বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান তাদের দোকানের সামগ্রী ফুটপাথ দখল করে দোকানের বাইরে রেখে দেন বলে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ। পুরপ্রধান বলেন, “ওই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলির উদ্দেশ্যে মাইকে প্রচার চালানো হবে। তাতে সাড়া পেলে ভাল। নয়তো পুলিশ ও পুরসভা যৌথ ভাবে অভিযান চালিয়ে ওই সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করবে বলেও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” |