তিনি মাঠের মধ্যে নেই। কিন্তু আবার ভীষণ ভাবে আছেনও।
তাঁকে দেখার জন্য কেউ মাঠে আসেননি। তবু মেলবোর্ন থেকে সকালের ফ্লাইট ধরে প্রীতপাল সিংহ, অনুজ কপূররা তাঁর জন্য পোস্টার লিখে নিয়ে এসেছেন। আর বেলা দেড়টার মধ্যে অ্যাডিলেড ওভাল যখন প্রায় কানায় কানায় ভর্তি হয়ে গেল, দেখা গেল দর্শকদের মধ্যে নীল জার্সি গায়ে অনেক ‘প্রীতপাল’-এর হাতের প্ল্যাকার্ডেও তিনি।
আসলে ক্যানসারে আক্রান্ত যুবরাজ সিংহের লড়াইটা যাতে গোটা টিম ইন্ডিয়ার মধ্যে ছড়িয়ে যায়, সেটাই ছিল কয়েক হাজার ‘প্রীতপাল’-এর উদ্দেশ্য। যুবরাজের আরোগ্য কামনা করে পোস্টার যেমন ছিল, তেমনই একটি পোস্টারে লেখা, “যুবরাজ ইজ ফাইটিং, ফাইট ইন্ডিয়া ফাইট।’’ টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ, প্রথম ওয়ান ডে-তে হার, টি-টোয়েন্টিতেও পুরোপুরি শোধ তোলা যায়নি। তাই যুবরাজকে সামনে রেখে ত্রিদেশীয় সিরিজে ভারত ঘুরে দাঁড়াক, এমনটাই চাইছিলেন দর্শকদের মধ্যে অনেকে। |
আর খেলা কিছুটা গড়াতেই মাঠের গর্জন শুনে মনে হচ্ছিল, পাঁচ-দশ বছর আগের ইডেন গার্ডেন্সে বসে আছি। বিনয় কুমারের বলে পন্টিং আউট। এ দিন ওয়ার্নারের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেছিলেন প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক। ক্রিজে জমতে না জমতেই ফিরে গেলেন। ‘জয় হিন্দ’, ‘জিতেগা ভাই জিতেগা’ আওয়াজে তখন কান পাতা দায়। যুবরাজের জন্য আনা পোস্টারগুলি তখন প্রবল ভাবে আন্দোলিত হচ্ছে। ভারতীয় দল যেন অক্সিজেন পেল কিছুটা।
গ্যালারিতে আমার ঠিক পাশে বসেছিলেন সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এক সময়ের শেফিল্ড শিল্ডে খেলা কেন্ট সিনক্লেয়ার। গত বিশ্বকাপে ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্টের এ বার দলে না থাকাটা ভারতকে অনেকটাই ধাক্কা দিয়েছে বলে মনে করেন কেন্ট। বিশ্ব ক্রিকেটের হাঁড়ির খবর রাখা কেন্ট বলছিলেন, যুবরাজের অফ ফর্ম অনেক বারই এসেছে। কিন্তু ও ভীষণ ভাবে ফিরে এসেছে। ভারতীয় দলে এই কামব্যাকটাই দরকার। কেন্টের আশা, অসুখ থেকে সেরে উঠে ফের মাঠে ফিরবেন যুবরাজ।
এ দিন বাইশ গজের ভিতর ছিলেন না আরও এক জন। সচিন তেন্ডুলকর। ভারতীয় ইনিংস শুরুর পর দেখা গেল, অস্ট্রেলীয় সমর্থকেরা একটা বিশাল ফেস্টুন নিয়ে এ দিক-ও দিক দৌড়ে যাচ্ছেন। তাতে কিছুটা বিদ্রুপ করে লেখা, “আরে বাবা, রান তো করো, নইলে দেশে ফিরে যাও। মা তরকারি তৈরি করে রেখেছে।” পাশ থেকে কেন্ট বললেন, “সচিন নেই, তাই তোমরা মানসিক ভাবে কিছুটা ব্যাকফুটে।”
সহবাগ এবং গম্ভীর খেলাটা ধরে নেওয়ার পর সেই ফেস্টুনটা আর দেখা গেল না। তবে, মাঠের উত্তর দিকের জায়ান্ট স্ক্রিনে দু’বার অনুপস্থিত দু’জনের নাম ফুটে উঠল। এক বার প্রশ্ন করা হল, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কোন ভারতীয় সবথেকে বেশি ছয় মেরেছেন? যুবরাজ, সচিন না সহবাগ?
গ্যালারি বলল, যুবরাজ। ফের যুবরাজের সুস্থতা কামনা করে প্ল্যাকার্ড উঠল। এ রকম দু’বার হল। তার পরে উত্তর এল: সঠিক জবাব সচিন। ৩৬। ভারতীয় ক্রিকেটারেরা যেখানে বসেছেন, তার দু’পাশের গ্যালারিতে মেক্সিকান ঢেউ উঠল। আওয়াজ উঠল, ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’। গৌতম গম্ভীর ও রোহিত শর্মা তখন মাঠের চার দিকে বল পাঠিয়ে এক-দুই নিয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু কিছু পরেই ভারত ফের চাপে। আবার উঠে এল অনুপস্থিত দু’জনের কথা। শুনতে পাচ্ছিলাম, কেউ কেউ বলছে এই ম্যাচটা সচিন অন্তত খেললে পারতেন। শেষ ওভারে ১৩। এই অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার দর্শকেরা চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছেন। ওই সময়টাকেই বেছে নিলেন ভারত অধিনায়ক। ব্যাট বদলালেন। স্ট্রাইকে এলেন। তার পরেই বিশাল ছক্কা...
খেলার শেষে শুধু গম্ভীর আর ধোনিকে নিয়ে নাচানাচি। যুবরাজ, সচিনের নাম তখন আর শোনা গেল না। বন্দেমাতরম আর জাতীয় পতাকা নিয়ে হুল্লোড় চলছে গ্যালারি আর রাস্তায়।
|
যুবি তাড়াতাড়ি সেরে উঠুক, প্রার্থনা ধোনিদের
সংবাদসংস্থা • অ্যাডিলেড |
চলতি সফরে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম বার হারানোর আনন্দের পাশাপাশি ভারতীয় শিবিরে থাকছে যুবরাজ সিংহের জন্য প্রার্থনাও। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি থেকে গৌতম গম্ভীর, সবার গলায় সতীর্থের তাড়াতাড়ি সেরে ওঠার আশা। “যুবরাজ তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে। ও চ্যালেঞ্জ খুব ভালবাসে। আমি নিশ্চিত, এই ঘটনা ওকে মানুষ হিসেবে আরও শক্ত করে তুলবে,” এ দিন বলেছেন ভারত অধিনায়ক। রবিবার ম্যাচের সেরা গম্ভীরও বলেছেন, “আমরা সবাই চাই যুবরাজ খুব দ্রুত সেরে উঠুক। জাতীয় দলটাই ওর আসল জায়গা। ওকে প্রচণ্ড মিস করছি।” |