নিরাপত্তা রক্ষীদের অভিযানের জেরে ধাক্কা খেল হাইলাকান্দির রিয়াং জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া। আলোচনা অনেকটাই এগিয়েছিল। রাজ্য পুলিশের এডিজি খগেন শর্মার সঙ্গে দিন পনেরো আগে কথা বলে এসেছেন উবাতি রিয়াংয়ের নেতৃত্বাধীন এক প্রতিনিধি দল। খগেনবাবু তাঁদের আলোচনা শুরুর উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির পরামর্শ দিয়েছিলেন। এর পরই বুধবার সেনা-পুলিশ বিপুল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ে রিয়াং জঙ্গিদের অস্থায়ী ঘাঁটির উপর।
হাইলাকান্দি জেলার কালাছড়ায় ওই দিন নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে প্রাণ হারায় তিন রিয়াং জঙ্গি। তাদের কাছ থেকে একে ৫৬-সহ বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছে বিশ্বনাথ রিয়াং নামে এক প্রৌঢ়কে। পুলিশ সুপার ব্রজেন্দ্রজিৎ সিংহর অনুমান, বিশ্বনাথই আদতে এই জঙ্গি সংগঠনটির স্বঘোষিত চেয়ারম্যান।
এই ঘটনায় উদলা-র আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হল বলেই মন্তব্য করেন উবাতি। উবাতির দাবি, বিশ্বনাথ শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ। ৬২ বছর বয়স তাঁর। এলাকায় শান্তি ফেরাতে খগেন শর্মার সঙ্গে যে আলোচনা হয়, সেখানে বিশ্বনাথও ছিলেন। বিশ্বনাথকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে হামলার মুখে ফেলে পুলিশ এখন তাঁকে উদলার চেয়ারম্যান সাজাতে চাইছে। উবাতির প্রশ্ন, “নিরাপত্তা রক্ষীরাই বা এত দিন কেন বিশ্বনাথের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি কেন? কেনই বা আনুষ্ঠানিক শান্তি প্রক্রিয়া আলোচনা শুরুর আগে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বললেন পুলিশের এডিজি?”
উদলাকে আত্মসমর্পণ করাতে উদ্যোগী হলেও উবাতি জানান, এই বিষয়ে জঙ্গি সংগঠনটির স্বঘোষিত সেনাধ্যক্ষ ধন্যরাম রিয়াং-এর সঙ্গে তার কোনও কথা হয়নি। তিনি এ ব্যাপারে বিশ্বনাথকেই কাজে লাগাতেন। ধন্যরাম প্রথমে আলোচনার ব্যাপারে আশাবাদী ছিল না। নানা কৌশলে বিশ্বনাথ তাঁকে মোটামুটি রাজি করান। এখন নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালানোয় ‘সব শেষ হয়ে গেল’। ক্ষুব্ধ উবাতি রিয়াং বলেন, “ভাবছিলাম, পার্বত্য উপজাতি পরিষদটি আদায় করা গেলে নাগাড়ে উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করা হত। ফলে, অন্তত বরাক উপত্যকায় রিয়াং যুবকদের আর অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হত না। কিন্তু এখন আর কোনও দায়িত্ব নিতে রাজি নই।” এর আগে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব বরাকভ্যালি (ইউএলএফবিভি)-কে মূলস্রোতে ফেরাতেও মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়েছিলেন এই মহিলা।
উবাতি বলেন, “জেলা পার্বত্য উপজাতি উন্নয়ন পরিষদ গঠন এবং বনাঞ্চলে থাকা রিয়াংদের জমির স্থায়ী পাট্টা তাদের দুটিই দাবি। প্রথমটি পূরণ হলে অন্তত কিছু সমস্যা সমাধানের সুযোগ মিলত। আর জমির পাট্টার দাবি নতুন কোনও বিষয় নয়। আইনেও এর স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার সে ব্যাপারে উদ্যোগী হচ্ছে না। এরই সুযোগে বনাঞ্চল ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য কখনও বনবিভাগ নির্দেশ দেয়, কখনও বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল তাদের উৎখাতের ষড়যন্ত্র করে।”
এ দিকে, হাইলাকান্দির রিয়াং জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের সম্ভাবনা নিয়ে মন্তব্যে রাজি না-হলেও পুলিশ সুপার সিংহ সোজাসুজি বলেন, আনুষ্ঠানিক ভাবে সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা না-হওয়া পর্যন্ত বুধবারের মতো ঘটনা ঘটাই স্বাভাবিক।
সব মিলিয়ে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া আপাতত ব্যাহত হল। |