সাংবিধানিক সঙ্কট: বিজেপি
কুরেশির চিঠিতে চাপে প্রধানমন্ত্রী, বিতর্ক এড়াতে সুর নরম খুরশিদেরও
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদের বিরুদ্ধে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশির কড়া অভিযোগ নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে মনমোহন সিংহের সরকার তথা কংগ্রেস। রাষ্ট্রপতিকে পাঠানো মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের চিঠির জবাব ঠিক করতে আগামিকাল মন্ত্রিসভার প্রবীণ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। দল ও সরকারের একটা বড় অংশই মনে করছে, খুরশিদের বিরুদ্ধে কমিশন যে রকম কড়া ভাষায় অভিযোগ জানিয়েছে, তা ‘অভূতপূর্ব’। খুরশিদ-বিতর্ক উত্তরপ্রদেশের ভোটে কোনও রাজনৈতিক ফায়দা তো এনে দেবেই না, উল্টে ভোটের মেরুকরণ ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের। সেই কারণে খুরশিদকে প্রকাশ্যে সমর্থন না-করে দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি গোটা বিতর্ক দ্রুত সামাল দেওয়ার পথ খুঁজতে চান তাঁরা। কংগ্রেসের একটা ছোট অংশ অবশ্য এই পরিস্থিতিতেও কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর পাশে দাঁড়াচ্ছে। তাদের মতে, এতে আখেরে সংখ্যালঘু ভোট পেতে কংগ্রেসের সুবিধাই হবে।
খুরশিদ নিজে অবশ্য আজ সুর কিছুটা নরম করেছেন। অন্তত প্রকাশ্যে। এ দিন তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চাইনি। দলের ইস্তেহারে যা রয়েছে, শুধু তা-ই বলেছি।” তবে একই সঙ্গে তিনি জানান, তাঁর মন্তব্য পুরোপুরি প্রশাসনিক বিষয়। তার সঙ্গে ভোটের সম্পর্ক নেই। আজ সন্ধ্যায় লখনউ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে এই ব্যাখ্যাই দিয়েছেন তিনি।
কমিশনকে সন্তুষ্ট করতে খুরশিদ লিখিত ভাবে তাঁর ও সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করুন, এমন পরামর্শও দিচ্ছেন অনেকে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, এই পরামর্শ মেনে নিতে পারেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী। বিতর্ক চাপা দিতে দুঃখপ্রকাশ’ করে কমিশনের কাছে তিনি চিঠি দিতে পারেন।
খুরশিদ-বিতর্কে দল যে মোটের উপর অসন্তুষ্ট, সেটা স্পষ্ট হয়েছে জনার্দন দ্বিবেদীর মন্তব্যে। খুরশিদের নাম না করলেও কংগ্রেস মুখপাত্র রীতিমতো কড়া সুরে বলেন, “নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। কংগ্রেস সব সময় চায়, দলের নেতারা আইন মেনে কথা বলুন।” এই বিতর্ক থেকে দল ও সরকার যে দূরত্ব বজায় রাখতে চায়, তা বোঝাতে কপিল সিব্বল বা আনন্দ শর্মার মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও আজ এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি।
এতেও অবশ্য মনমোহন-সরকারের উপর থেকে চাপ কমছে না। খুরশিদের আচরণে ক্ষুব্ধ কুরেশি গত কাল তাঁর কাছে যে অভিযোগ জানিয়েছিল, তা পত্রপাঠ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল। ফলে প্রধানমন্ত্রীকে ওই চিঠির কোনও না কোনও জবাব দিতেই হবে। কংগ্রেসও মানছে, কমিশন রাষ্ট্রপতির কাছে খুরশিদ সম্পর্কে যে ভাবে নালিশ করেছে, তা আগে কখনও হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি। গোটা ঘটনাকে ‘সাংবিধানিক সঙ্কট’ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে তারা। কমিশনের মতো ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অবজ্ঞা করা’র জন্য খুরশিদকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর দাবি তুলেছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যাও দাবি করছে তারা। বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজের দাবি, প্রধানমন্ত্রী এখনই খুরশিদকে সরান। খুরশিদ গদি ছাড়তে না চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁকে বরখাস্ত করার সুপারিশের দাবিও তুলেছেন তিনি। আইনমন্ত্রী হয়েও খুরশিদ কী ভাবে বেআইনি কাজ করেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি। তাঁর অভিযোগ, প্রথমে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন, তার পরে সিএজি, এখন নির্বাচন কমিশন একের পর এক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অবজ্ঞা করছে মনমোহন-সরকার।
এই পরিস্থিতিতে ইউপিএ নেতৃত্ব মনে করছেন, নির্বাচন কমিশনের অভিযোগ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। বিষয়টাকে ঝুলিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তা হলে প্রধানমন্ত্রীর উপর চাপ থেকেই যাবে। রাষ্ট্রপতি নিয়ম মেনেই প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছেন। এখন বিজেপি-সহ বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীকেই আক্রমণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সামনে সমস্যা হল, এ বিষয়ে আইন মন্ত্রকের পরামর্শ চাওয়া সম্ভব নয়। কারণ খুরশিদ নিজেই ওই মন্ত্রকের দায়িত্বে। অ্যাটর্নি জেনারেলও আইন মন্ত্রকের অধীনে। এই অবস্থায় প্রণব মুখোপাধ্যায়, পি চিদম্বরম, এ কে অ্যান্টনির মতো প্রবীণ মন্ত্রীদের মত নিয়েই এগোতে চাইছেন মনমোহন। যে ফারুকাবাদ কেন্দ্রে প্রচারে গিয়ে খুরশিদ ‘বিধিভঙ্গ’ করেছেন, সেখানে প্রার্থী খুরশিদের স্ত্রী লুইস। সেখানে ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ। এই অবস্থায় কমিশনকে ‘সন্তুষ্ট’ করতে খুরশিদকে পরের দফায় প্রচারে যেতে বারণ করা হবে কি না, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে কংগ্রেসে। সমস্যা হল, খুরশিদ উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান। তাঁকেই প্রচার থেকে তুলে নেওয়া ঠিক হবে কি না, সেই প্রশ্নও রয়েছে।
আরও একটি কারণে কংগ্রেস অস্বস্তিতে। দলের অনেকেই মনে করছে, উত্তরপ্রদেশে দলের মুখ হিসেবে রাহুল গাঁধীরই প্রচারের আলোয় থাকা উচিত। সেখানে সংখ্যালঘু সংরক্ষণ নিয়ে আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে খুরশিদ ‘অহেতুক’ বিতর্ক তৈরি করেছেন। ফলে প্রচারের আলো অন্য দিকে ঘুরে যাচ্ছে।
তবে দলেরই একটি ছোট অংশ খুরশিদের পাশে থাকছে। তাদের বক্তব্য, সংখ্যালঘু সংরক্ষণের কথা বলে খুরশিদ কোনও ভুল করেননি। এতে উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘু ভোট টানতে দলের সুবিধাই হবে। খুরশিদ সংখ্যালঘু হলেও সমাজের অভিজাত শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত। এতে তাঁরও গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। দলের অন্যতম নেতা দিগ্বিজয় সিংহও এ দিন খুরশিদের সমর্থনেই মুখ খুলেছেন। কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলি যদি নিজেদের কর্মসূচির কথাও না বলতে পারে, তা হলে তো নির্বাচনী ইস্তেহারও বন্ধ করে দিতে হয়!”
রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়ে কমিশন ‘বাড়াবাড়ি’ করেছে কি না, অনেকে সে প্রশ্নও তুলছেন। একাংশের মতে, রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এক নির্বাচনী আধিকারিককে বদলি করেছিল কমিশন। এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তাঁকে পুনর্বহাল করা হয়। ফলে কমিশনের ভাবমূর্তিতে আঁচ পড়েছিল। এখন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই কড়া অবস্থান নিয়ে কমিশন নিজের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। কমিশন সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, প্রচারে গিয়ে সংখ্যালঘু সংরক্ষণের কথা বলায় খুরশিদকে আগেই ‘সতর্ক’ করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও খুরশিদ শুক্রবার প্রচারে গিয়ে কমিশনের বিরুদ্ধেই জেহাদ ঘোষণা করে বলেন, তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলালেও তিনি মুসলমানদের জন্য সংরক্ষণের কথা বলবেন। কমিশন নিজে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ‘সতর্ক’ বা ‘ভর্ৎসনা’ করা ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। কাজেই নিয়ম মেনেই রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এস কৃষ্ণমূর্তিও কমিশনের এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.