সরকারি ‘যন্ত্র’ আর হাতে নেই। রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পরে এই প্রথম ব্রিগেড সমাবেশ। দীর্ঘ দিনের ‘অভ্যাস’ ছেড়ে শুধু সংগঠনের জোরে ব্রিগেড ময়দান ভরানোই এ বার সিপিএমের কাছে ‘চ্যালেঞ্জ’। আগামী রবিবারের সেই সমাবেশ থেকেই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে আলিমুদ্দিন প্রমাণ দিতে চায়, পশ্চিমবঙ্গে তারা এখনও ‘মুছে’ যায়নি!
সিপিএমের ২৩ তম রাজ্য সম্মেলনের শেষে ব্রিগেডে প্রকাশ্য সমাবেশ আগামী ১৯ তারিখ। ইতিমধ্যে দুই দক্ষিণী রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ ও কেরল তাদের সম্মেলন উপলক্ষে সমাবেশে বিপুল জনসমাগম করে দেখিয়েছে। ওই দুই রাজ্যেই বামেরা ক্ষমতায় নেই। তিরুঅনন্তপুরমে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট এবং রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়ন খোলা জিপে চড়ে ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’-এর অভিবাদন পর্যন্ত গ্রহণ করেছেন। তার প্রেক্ষিতেই পার্টি কংগ্রেসের আগে দলীয় সমীকরণেই আলিমুদ্দিনের কাছে ব্রিগেড নতুন ‘চ্যালেঞ্জ’ হয়ে উঠেছে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, “আমাদের দেখাতে হবে, উই আর ডাউন বাট নট আউট!” সাধারণ সম্পাদক কারাট স্বয়ং ব্রিগেডের অন্যতম বক্তা।
সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের মতে, জেলা সম্মেলন উপলক্ষে সমাবেশগুলিতে ভিড় হয়েছিল যথেষ্ট। বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরে ‘খারাপ সময়ে’র প্রেক্ষিতে জেলাগুলিতে মানুষ ‘ভালই সাড়া’ দিয়েছেন বলে আলিমুদ্দিনের অভিমত। পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে সমাবেশ-ফেরত মানুষকে তৃণমূলের হামলার মুখে পড়তে হয়েছে বলে সিপিএমের অভিযোগ। এমতাবস্থায় আলিমুদ্দিন দেখতে চায়, ‘হুমকি’ এবং ফিরে গেলে ‘মারের ভয়’ উপেক্ষা করে জেলার মানুষ ব্রিগেডে আসেন কি না। সেলিম বলছেন, “জেলা সমাবেশগুলির মতো ব্রিগেডও আমাদের কাছে পরীক্ষা। এত দিন আমাদের বিরুদ্ধে প্রচার হত, প্রশাসন হাতে আছে বলে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে আমরা লোক আনছি! এ বার কী হয়, সেটা স্বভাবতই সকলে দেখতে চাইবেন।” দূরবর্তী জেলা থেকে লোক আনতে সমস্যা হবে ধরে নিয়েই সিপিএম অবশ্য ব্রিগেড ভরানোর জন্য বেশি ‘ভরসা’ রাখছে কলকাতার আশেপাশের জেলা কমিটিগুলির জন্য। সেই জন্যই কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা ও হাওড়া জেলা সিপিএম ব্রিগেডের প্রস্তুতি-সভায় অনেক বেশি জোর দিচ্ছে। ব্রিগেডের আগে শেষ রবিবার হিসাবে এ দিনই কলকাতায় প্রস্তুতি মিছিল ও সভা হয়েছে।
বস্তুত, দীর্ঘ দিন পরে বিরোধী আসনে গিয়ে প্রথম ব্রিগেড বলেই বক্তা তালিকাতেও ‘পরিবর্তন’ করেছে আলিমুদ্দিন। কারাট, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর পাশাপাশি বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও এ বার ব্রিগেডের বক্তা। সংখ্যালঘু ‘মুখ’ হিসাবে যথারীতি আছেন শ্রমিক নেতা ও পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ আমিন। বিরোধী আসনে দলের ভূমিকা স্পষ্ট করার জন্যই কি সূর্যবাবু ব্রিগেডে বক্তা? সেলিমের ব্যাখ্যা, “আমাদের দলে এটাই রীতি। এখন তো দলের তরফে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী নেই। জ্যোতি বসু বিরোধী দলনেতা থাকাকালীন তিনিও বক্তা থাকতেন।” সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুর পাশাপাশিই বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবুও এখন দলের ‘মুখ’ এই বার্তাই আরও স্পষ্ট হবে ব্রিগেডে। সূর্যবাবুকে অবশ্য ব্রিগেডে লোক জড়ো করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি সভাতেও এখন বলতে যেতে হচ্ছে!
গোটা রাজ্য থেকে প্রায় ৭০০ প্রতিনিধি নিয়ে আগামী বুধবার কলকাতায় শুরু হচ্ছে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন। পলিটব্যুরোর তরফে কারাট ছাড়াও সীতারাম ইয়েচুরি, এস আর পিল্লাইদের সম্মেলনে থাকার কথা। এর বাইরেও এ কে জি ভবনের প্রতিনিধি হিসাবে কেন্দ্রীয় স্তরের নেতৃত্বের আরও দু-এক জন হাজির থাকতে পারেন। |