‘গয়া গ্যাং’-এর সাফাই কায়দায় এটিএম জালিয়াতি চলছেই
পুলিশের খাতায় তাদের পরিচয় ‘গয়া গ্যাং’। তবে, শহর জুড়ে খুনখারাপি বা অপহরণের মতো অপরাধ তারা করে না। এদের শিকার আম-আদমি। পলকের অসতর্কতায় ফাঁকা করে দিচ্ছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। লালবাজারের গোয়েন্দাদের ঘুম কার্যত কেড়ে নিয়েছে এই ‘গ্যাং’।
লালবাজার সূত্রের খবর, শহরে এটিএম জালিয়াতি বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিন এ ধরনের কোনও না কোনও ঘটনার অভিযোগ আসছে। গোয়েন্দাদের অভিজ্ঞতা বলছে, বছর দুয়েক ধরে শহরে প্রায় প্রতিটি এটিএম জালিয়াতির সঙ্গেই গয়া গ্যাং-এর যোগ আছে।
এক গোয়েন্দা অফিসার জানান, বছর দুয়েক আগে একটি এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় গয়ার এক যুবকের জড়িত থাকার কথা জানা যায়। তাকে ধরতে রওনা দেয় লালবাজারের একটি দল। গয়ায় গিয়ে দেখা যায়, শুধু কলকাতা নয়, দিল্লি, মুম্বই-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুলিশের দল আসছে গয়ায়। এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় একাধিক যুবককে গয়া, ফতেপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরেও এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় লালবাজারের অফিসারেরা যত জনকে ধরেছেন, তারা অধিকাংশই গয়া ও ফতেপুরের বাসিন্দা। সেই থেকে, পুলিশের খাতায় এটিএম জালিয়াতি আর গয়া গ্যাং প্রায় সমার্থক।
এই গ্যাংয়ের কাজের পদ্ধতিও অভিনব। কেউ এটিএম মেশিনে কার্ড ঢোকালেন। মেশিন বলল, পাসওয়ার্ড দিতে। কিন্তু তা দেওয়া মাত্র মেশিনটি ‘হ্যাং’ করে গেল। কোনও শব্দ না পেয়ে গ্রাহক টাকা লেনদেন না করেই কাউন্টার ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন। এর পরেই সেখানে ঢুকবে বাইরে অপেক্ষমাণ এক যুবক। একটু খুটখাট করতেই মেশিন ঠিক। টাকা তুলে বেরিয়ে যাবে সে। আর সেই ব্যক্তি খবর পাবেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, অপেক্ষমাণ ওই যুবক গয়া গ্যাং-এর সদস্য। এটিএম মেশিনের ‘0’ এবং ‘#’ বোতাম দু’টির তলায় আঠা লাগিয়ে সাময়িক বিকল করে রেখেছিল সে। তাই পাসওয়ার্ড দেওয়া মাত্র মেশিনটি ‘হ্যাং’ করে যায়। গ্রাহক কাউন্টার ছেড়ে বেরোনো মাত্রই জালিয়াতেরা ওই বোতাম দু’টি সক্রিয় করে মেশিনটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটিএম মেশিন হ্যাং করলেও কার্ডের সব তথ্য তাতে রয়ে যায়। এর ফলে মেশিন স্বাভাবিক হলে সহজেই টাকা হাতিয়ে নিতে পারে জালিয়াতেরা।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, জালিয়াতদের সহজ শিকার এটিএম কার্ডের নতুন বা অনভিজ্ঞ গ্রাহকেরা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, তাঁদের সাহায্য করার অছিলায় পিন জেনে নেয় দুষ্কৃতীরা। এর পরে হাতসাফাই করে ওই গ্রাহকের কার্ডটি বদলে দেয়। গ্রাহক সরতেই সেই কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলে তারা। এ ছাড়া, কখনও ঋণ পাওয়ানোর টোপ দিয়ে, কখনও ফোনে কার্ড সংক্রান্ত তথ্য জেনে নিয়েও জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে।
গোয়েন্দা দফতর সূত্রের খবর, শহরের নানা এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় আরমান খান, পয়গম খান, আশাদ খান-সহ কয়েক জন ধরা পড়তেই এই গ্যাং-এর কথা জানা যায়। কিন্তু এই চক্রের পাণ্ডা কে বা কারা, সে সম্পর্কে এখনও সব তথ্য আসেনি পুলিশের হাতে।
পুলিশ বলছে, এটিএম জালিয়াতির জন্য জালিয়াতদের সহজ লক্ষ্য রক্ষী এবং ক্লোজ্ড সাকিট ক্যামেরাহীন এটিএম কাউন্টার। এর উপরে যদি সেই কাউন্টারে একাধিক মেশিন বসানো থাকে, তা হলে সোনায় সোহাগা। লেনদেনের অছিলায় কাউন্টারের ভিতরে থেকেই গোটা কাজটি করতে পারে তারা। এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, “এই জালিয়াতদের তুখোড় বুদ্ধি। শিক্ষাগত যোগ্যতাও তাক লাগানোর মতো। জেরায় অনেকেই জানিয়েছে, সহজে টাকা কামানোর জন্যই এই পেশায় হাত পাকিয়েছে তারা।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.