‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ কি শুধুই দু’জনের
প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে।
তবে আর গোটা একটা প্রেমদিবস শুধু এক জনের সঙ্গে কেন? এক জনের হাতে হাত, অন্য কারও চোখে চোখ, আর কারও ঠোঁটে ঠোঁট রেখেই তো কাটতে পারে সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে রাত।
আঠারো থেকে আঠাশও তাই-ই বলছে। ‘‘সকালে এক জন থাক, বিকেলে অন্য কেউ।’’ ধরা পড়ার ভয়? “এক জন নর্থের, আর এক জন সাউথের। কিংবা এক জন স্কুল, অন্য জন কলেজ। ব্যস, ঝামেলা শেষ।”
কলেজপড়ুয়া থেকে পঁচিশ পেরোনো কর্পোরেট, সকলের বক্তব্যই মোটামুটি এক। জেন ওয়াই তাই সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেয়, একসঙ্গে একের বেশি কাউকে ভাল লাগাটা তো আর অপরাধ নয়। ভ্যালেস্টাইন্স ডে-তে তা হলে একের বেশি ‘ডেট’-এ গেলেই বা ক্ষতি কী? প্রেসিডেন্সির দেবার্ঘ্য যেমন প্রেমদিবসে একাধিক ‘ডেট’-এরই পক্ষে। তার মতে, ‘‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে ব্যাপারটাই এখন ঠাট্টা-ইয়ার্কি-মজার। তাই একের বদলে দু’তিনটে ‘ডেটে’ গেলে মন্দ কী! আর ডেট মানে তো একে অন্যকে চিনে-জেনে নেওয়ার জন্য সময় কাটানো। তাতে আবার ক্ষতি কী। তাতে যদি ভাল লাগা বাড়ে, তবে তো সিরিয়াস প্রেমের প্রশ্ন।” যাদবপুরের অভিষেক, ঋতব্রত, শৌনক, কল্যাণরা আবার সাফ বলে, “দু’তিন জনকে ভাল লাগতেই পারে। একের বেশি জনের সঙ্গে ডেট না করলে বুঝব কী করে, কার সঙ্গে মনের মিলটা বেশি? তার সঙ্গেই তো প্রেমটা জমবে ভাল।” ওদেরই সহপাঠী সঙ্কলিতা, শ্রীজিতা, অঙ্কিতারাও প্রেমদিবসে একাধিক ডেটে তেমন আপত্তির কিছু দেখছে না। “যতগুলো ডেট, ততগুলো গিফ্টও তো পাব!”, হাসতে হাসতেই বলে ফেলে অঙ্কিতা।
আর একটু বড়রা, যাদের একটা স্থায়ী সম্পর্কের ঢুকে পড়ার ‘চাপ’টা বেশি? সাতাশের ব্যস্ত কর্পোরেট সোহিনী বলছেন, “চাকরি করতে এসে তো ইনভেস্ট-রিটার্নটাই শিখতে হয় আগেভাগে। তাই কার উপরে সময় ইনভেস্ট করলে রিটার্নটা ভাল মিলবে, সেটা বুঝে নিতেও অন্তত দু’চার জনের সঙ্গে অল্পস্বল্প প্রেম তো করে দেখতে হবে!” সদ্য অফিস যেতে শুরু করা রোহনও বলেন, “দু’চার জনের সঙ্গে ডেট করলে তবে তো বুঝতে পারব কার সঙ্গে বারবার বেরোতে ইচ্ছে করবে। সম্বন্ধ করে বিয়েতেও তো দু’তিন জন বা তার-ও বেশি পাত্র-পাত্রীর সঙ্গে আলাপ করা হয়। তাতে তো দোষ দেখেন না কেউ! তবে আর দু’ তিন জনকে ডেট করতে ক্ষতি কী! আর তা যদি করা যায় প্রেমদিবসে, তবে তো আরও জমজমাট।”
যাঁদের কথায় ভরসা পায় এই সময়ের তরুণেরা, তেমনই এক ‘ইউথ আইকন’ রুদ্রনীল ঘোষ এ বিষয়ে বলেন, “মন যা চাইছে, তা করলে ক্ষতি কী? শুধু খেয়াল রাখতে হবে, তাতে যেন নিজের বা অন্য কারও অসুবিধে না হয়। বন্ধুদের দেখাদেখি দু’তিন জনের সঙ্গে ঘুরতে গেলে সমস্যা হতে পারে। নিজের ওজন বুঝে এগোলেই ভাল হয়।’’ আলাদা করে একটা প্রেমদিবস পালনে বিশ্বাসী না হলেও বিশেষ এক জনকে খুঁজে নিতে একাধিক ডেটে তেমন আপত্তির কিছু দেখছেন না স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, “এই যুগটার বিশেষত্বই হল সময় কম, ধৈর্য কম, এমনকী প্রেম-ভালবাসাও কম। পাঁচ বছর একটা সম্পর্কে থাকার পরে যদি মনে হয়, সময়টাই নষ্ট হল, তা তো কোনও কাজের কথা নয়। তাই এখনকার ছেলেমেয়েরা যদি চার-পাঁচ জনের সঙ্গে একটু ঘুরেফিরে মনের মতো সঙ্গীকে খুঁজে চায়, ভালই তো!”
তবে কি একাধিক প্রেমে ডুব দেওয়াটাই যুগের হাওয়া?
‘গা বাঁচিয়ে’ চলতে চায় অনেকেই। প্রেসিডেন্সির সৌমাল্য, রাজর্ষি, অর্ণবদের বক্তব্য, ডেটে গিয়ে অল্পস্বল্প প্রেমটা মজার জন্য ঠিক আছে। কিন্তু ‘সিরিয়াস’ প্রেম হোক এক জনের সঙ্গেই। তবে অন্য জনও ডেট ব্যাপারটাকে খেলাচ্ছলেই দেখছে কি না, সেটা বুঝে নেওয়াটা জরুরি, বলছে সম্বুদ্ধা, সঞ্চারী, সায়নীরা। তাদের মতে, স্থায়ী সম্পর্কে যাওয়ার আগে ‘খুচরো’ প্রেমে তেমন ক্ষতি নেই। যাদবপুরের উপমা, শ্রীজিতা, সঙ্কলিতারাও আবার মনে করিয়ে দেয়, একাধিক প্রেম হোক, কিন্তু এক সময়ে এক জনই।
তবে কারও কারও কাছে নীতির ‘খোঁচা’ই সবচেয়ে বড়। প্রেসিডেন্সিরই অপালা, শ্রীজিতা, পৃথা, অনিন্দিতাদের কথায়, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে শুধু সেই ‘বিশেষ’ এক জনের সঙ্গেই বেরোনো যায়, যার সঙ্গে একটা স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ওরা তাই সাফ জানিয়ে দেয়, নিজেরা তো একাধিক ‘ডেটে’ যাবেই না। এমনকী, বন্ধুরা গেলেও ভাল চোখে দেখবে না।


...তবু মনে রেখো
প্রবাদে আছে না, ‘টু ইজ কম্পানি, থ্রি ইজ ক্রাউড’? তাই ভিড়
বাড়িয়ে আর লাভ কী! দু’জনের কথা দু’জনের থাকাই ভাল।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
লেখা পড়ে দেখি মেয়েরাই শুধু ভ্যালেন্টাইন হতে চায়, ছেলেরা
তেমন সাহস করে ওঠে না। সত্যিই যদি কেউ প্রেম নিবেদন করে, উত্তরে
বড়জোর মুচকি হাসতে পারি। তবে ব্যাপারটা উপভোগ করব নিঃসন্দেহে।
সুচিত্রা ভট্টাচার্য
আমি ব্যক্তিগত ভাবে কী মনে করি, তা স্বতন্ত্র। যুগের দাবিতে
কিছু জিনিস লিখতেও হয়। তবে একটা প্রশ্ন থেকেই যায় এ কোন
সময় এল, যেখানে ভালবাসার জন্য একটা দিন নির্দিষ্ট করে দিতে হয়?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

যাদবপুরের সঙ্কলন, অরিজিৎ, প্রেসিডেন্সির সায়নী, সঞ্চারীরা এতটা কড়াকড়িতে বিশ্বাসী নয়। অনেকেই একাধিক ডেটে নিজে তেমন স্বচ্ছন্দ না হলেও অন্যেরা গেলে আপত্তির কোনও কারণ দেখছে না। মোদ্দা কথা, নিজের ব্যক্তিগত জীবনে কে ক’জনের সঙ্গে ঘুরছে, তা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি নয় বেশির ভাগই।
আর এক ‘ইউথ আইকন’ রূপম ইসলামও এ প্রজন্মের এই দু’তিনটে ডেটের মানসিকতাকে খারাপ-ভাল কোনওটাই বলতে রাজি নন। তাঁর মতে, “প্রেম জিনিসটাই ব্যক্তিগত। তা কে এক জনের সঙ্গে করবে আর কে চার জনের সঙ্গে, সেটা তাদের নিজেদের ব্যাপার। তার আর খারাপ-ভাল হয় নাকি?”

ছবি: সুমন বল্লভ
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.