রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় • শুশুনিয়া |
পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে শুশুনিয়া। বন দফতর শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে গড়ে তুলছে ‘ইকো-ট্যুরিজম কটেজ’। সেখান থেকে সবুজে ঘেরা পাহাড় পরিপূর্ণ দেখা যাবে। বন দফতর জানিয়েছে, নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। শীঘ্রই তারা এই ‘কটেজ’ চালু করতে চলেছেন।
শুশুনিয়ার ঝর্ণাতলা থেকে কয়েকশো মিটার দূরে ছোট্ট টিলার ওপর তৈরি হচ্ছে দুটি ‘কটেজ’। কটেজের প্রবেশ পথে রয়েছে ছোট্ট সেতু। তার নীচে লম্বা জলাশয়। সেখানে পদ্মের চাষ করা হচ্ছে। অল্প পাকদণ্ডী পথ পেরিয়ে পৌঁছতে হবে কটেজে। সেখানে এক সঙ্গে চারটি পরিবার থাকতে পারবে। ইচ্ছা করলে পর্যটকরা সেখানে রান্না করতে পারবেন। বন দফতরেরও রাঁধুনী থাকবে। সামনের খোলা মাঠে ছোটদের দোলনা-সহ নানারকম মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা থাকছে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে এই কটেজ তৈরি করা হচ্ছে।
কটেজের কাছে গাছগাছালিতে ঘেরা সবুজ ছোট বনাঞ্চল রয়েছে। হাঁটা পথে শুশুনিয়ার ঝর্ণাতলা খুব দূরে নয়। ইচ্ছা করলেই পাথুরে চড়াই রাস্তা বেয়ে পাহাড়ে চড়া যায়। কিংবা, শরীর না চাইলে পাহাড়তলিতে পাথরের নানা উপকরণ নিয়ে বসে থাকা শিল্পীদের কাছ থেকে শিল্প সামগ্রীও কেনা যায়। আগ্রহ থাকলে শিল্পীর পাশে বসে পাথর কুঁদে শিল্প সামগ্রী তৈরির কাজও দেখা যায়। প্রায় ৪৪০ মিটার উঁচু এই পাহাড় সবুজে ঢাকা। পাহাড়ের গায়ে অনেক নাম না জানা গাছের রঙীন ফুল পরিবেশপ্রেমীদের নজর কাড়ে। খাড়া পাথরে অনেকে ‘ট্রেকিং’ করতেও আসেন। পাহাড়ের পিছনে রয়েছে মহারাজা চন্দ্রবর্মার শিলালিপি। অনেক পর্যটক তা দেখতে যান। |
এতদিন এখানে দুটি বেসরকারি ছোট লজ ছাড়া পর্যটকদের থাকার মতো কোনও জায়গা ছিলনা। একটি যুব আবাস তৈরি হলেও সেখানে বেশ কয়েক বছর ধরে ছোটদের স্কুল চলছে। ফলে, শুশুনিয়ায় রাত্রিবাস করার ইচ্ছা থাকলেও সে সুযোগ না থাকায় অনেক পর্যটককে বাঁকুড়া শহরের লজ বা হোটেলে ফিরে যেতে হত। বাঁকুড়া উত্তর বিন বিভাগের ডিএফও এস কুলন ডেইভালের মতে, সেই সব পর্যটকদের দুঃখ এবার ঘুচতে চলেছে। তিনি বলেন, “দুটি ‘কটেজ’ তৈরি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি কটেজ তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে।” তিনি জানান, ‘ইকো-ট্যুরিজম কটেজ’ প্রকল্পের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। উদ্ধোধন করার পরেই পর্যটকরা ‘বুকিং’ করতে পারবেন।
বন দফতরের এই উদ্যোগে খুশী এলাকার পাথর শিল্পী থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় লোকশিল্পী কৃষ্ণদুলাল চট্টোপাধ্যায় ও উত্তম কর্মকার বলেন, “বহু পর্যটককে দেখেছি এখানে থাকতে না পেরে ফিরে গেছেন। সন্ধ্যার পরে পর্যটকেরা থাকেন না বলেই আঁধার নামলেই শুশুনিয়া পাহাড়তলি সুনসান হয়ে যায়। বন দফতর আরও কটেজ তৈরি করলে আরও পর্যটক রাতে এখানে থাকতে পারবেন। সন্ধ্যাতেও পাহাড়তলি জমজমাট থাকবে। এলাকার অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে।” |