নিজস্ব সংবাদদাতা • বোলপুর |
আজ সোমবার বোলপুর শহর ও লাগোয়া এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করল প্রশাসন। শনিবার রাত থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ মাইক নিয়ে প্রচার করা শুরু করেছে। তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী সোমবার বোলপুর শহরে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। অন্য গোষ্ঠীও পাল্টা জমায়েত করতে পারে বলে খবর ছিল পুলিশের কাছে। শহরের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছিল। এখন শহরে জেলা বইমেলা চলছে। তার উপরে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করায় ক্ষুব্ধ অনেকেই। তবে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী জানিয়েছে, তাঁরা এ দিন শহরে সমাবেশ স্থগিত রেখেছেন। বোলপুরের মহকুমাশাসক প্রবালকান্তি মাইতি বলেন, “পুলিশ জানিয়েছে, বোলপুরে সোমবার একটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশ রয়েছে। তাই শহরের শান্তি রক্ষার স্বার্থে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ওই ব্যবস্থা থাকবে। নিয়ম ভাঙা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি জানান, পাঁচ জনের বেশি এক সঙ্গে চলা ফেরা করা যাবে না। বীরভূমের জেলা পুলিশ হৃষিকেশ মিনা বলেন, “তৃণমূলের দু’টি সভা-সমাবেশ করার কথা রয়েছে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এতে শহরের শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। তাই বোলপুরের মহকুমা শাসককে সোমবার বোলপুর শহরে ১৪৪ ধারা জারি করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।” তিনি জানান, শহরে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগে সোমবার বোলপুরের এসডিপিও-র কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিল তৃণমূলের অন্যতম জেলা সম্পাদক মোস্তাক হোসেন ও তাঁর অনুগামীরা। তিনি তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধী গোষ্ঠী বলে রাজনৈতিক মহলে পরিচিত। পুলিশ জানিয়েছে, মোস্তাক সাহেবের কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে অনুব্রতবাবুর গোষ্ঠীর লোকেরা সোমবার শহরে সমাবেশ করতে পারে বলে তাদের কাছে খবর রয়েছে। সে ক্ষেত্রে দু’পক্ষের লোকজন মুখোমুখী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কারণ, কয়েক দিন আগে পাড়ুই থানার লেবড়া গ্রামে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। দু’পক্ষ পুলিশের কাছে পরস্পরের ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। ওই ঘটনায় মোস্তাক সাহেবের নামেও অভিযোগ করা হয়। পুলিশ তাঁর অনুগামী দু’জনকে গ্রেফতার করে। মোস্তাক সাহেবের অভিযোগ, “পুলিশ মিথ্যা মামলায় আমাদের দলের কর্মীদের জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করছে। তারই প্রতিবাদে সোমবার বোলপুরের এসডিপিও-কে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। এসডিপিও-র আগাম অনুমতিও নিয়ে রেখেছিলাম। দলের এক রাজ্য নেতাও কর্মসূচি অনুমোদন করেছেন। তবে, প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করায় আমরা স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তবে, অনুব্রতবাবুর দাবি, “সোমবার বোলপুরে আমাদের দলের কোনও কর্মসূচি ছিল না। তবে কেউ কেউ শহরের শান্তিভঙ্গ করার চেষ্টা করছেন বলে শুনেছি। পুলিশ তা দেখছে।”
১৪৪ ধারা জারি করায় জনজীবন বিপর্যস্ত হবে বলে বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন। তাঁদের মতে, তৃণমূল এখন রাজ্যের শাসক দল। তাঁদের সভা-সমাবেশকে ঘিরে প্রশাসন শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করায় আমাদের ভুগতে হবে। তৃণমূলের কর্মীদের উপরে দলের নেতাদের রাশ নেই বলেই এমনটা হচ্ছে। শাসক দল হিসেবে আমরা তাদের কাছে আরও দায়বদ্ধতা আশা করছি। তৃণমূল কর্মীদের একাংশের মতে, এই ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হল। তবে এ ব্যাপারে অনুব্রতবাবু কিছু বলতে চাননি। মন্তব্য করতে চাননি তাঁর বিরোধী গোষ্ঠী বলে পরিচিত তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সিপিএমের বোলপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক উৎপল রুদ্র রবিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ তোলেন, “তৃণমূল সরকারে রয়েছে। আর সেই দলের কর্মীদের সমাবেশ থেকে প্রশাসন অশান্তির আঁচ করছেন? আমরা সরকারে থাকার সময়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে বইমেলা হয়েছে। আর এ বার ১৪৪ ধারা জারি হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরাও স্কুল-কলেজে যেতে সমস্যায় পড়বে।” তিনি জানান, পুলিশের নির্দশে সোমবার বোলপুর শহর লাগোয়া রাইপুর-সুপুর এবং রূপপুর পঞ্চায়েতে তাঁরা দলীয় পদযাত্রা বাতিল করেছেন। |