পরিবর্তনের ফুটবল বধ্যভূমিতে, অন্দরে তালিবানি ভাবনাই
নিজের বাড়ির দাওয়ায় বসে অপলক দৃষ্টিতে সামনের শহরটার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন বছর ষাটেকের বৃদ্ধ। চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ন। তবে প্রশান্ত। দেখে কোনও ভাবেই বোঝার উপায় নেই যে, বছর দুই আগেও এই শহরে ‘তালিবান-ত্রাসের’ হোতা ছিলেন এই বৃদ্ধ। মৌলবি কালামুদ্দিন। বর্তমানে, যিনি হামিদ কারজাই সরকারের শান্তি পরিষদের অন্যতম সদস্য। এই পরিষদের মূল লক্ষ্যই হল আফগানিস্তান থেকে তালিবানি নৃশংসতার অবসান ঘটানো।
তালিবানি আদর্শের ‘কিছু’ ত্রুটি সম্পর্কে সচেতন কালামুদ্দিন এখন বিশ্বাস করেন যে, ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার পরেও অতীতের সেই উগ্র তালিবানি-রাজ আর ফিরবে না। সুতরাং সাধারণ মানুষের ভয় পেয়ে আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার কোনও কারণ নেই।
কিন্তু বাইরেটা বদলে গেলেও আদৌ কি বদলাচ্ছে তালিবানি মৌলবাদী দর্শন? কালামুদ্দিনের অন্তত দাবি, “বদলাচ্ছে। বর্তমানে সমস্ত বিষয়ের প্রতিই তালিবানের ভাবনা অনেকাংশে বদলেছে।” তাঁর মতে, আধুনিকতার স্পর্শেই আসছে এই পরিবর্তন। নিজের উদাহরণ দিয়েই জানালেন, আগে কম্পিউটার সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। আজ কিন্তু কম্পিউটার ব্যবহারে তিনি যথেষ্ট পটু। পরিবর্তন এসেছে শিক্ষা-ভাবনাতেও। আর তাই বোধ হয়, এক সময়ে প্রথাগত শিক্ষার বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও কালামুদ্দিনের তিন ছেলেই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এখন, বৃদ্ধের বাড়ির সামনে দিয়েই মেয়েরা বইপত্র নিয়ে স্কুলে যায়। এমন জামাকাপড় পরে তালিবানি আমলে যা চূড়ান্ত ‘আপত্তিকর’ বলে ভাবা হত। যার জন্য জুটত শাস্তিও। আজ, সময়টা কিছুটা হলেও বদলেছে। যেমন, তালিবানি দর্শনে এখন ‘নতুন’ যে কোনও কিছুই ‘ধর্মবিরোধী’ নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ‘তিক্ত’ সম্পর্কেও ইতি টানার জন্য কাতারে অফিসও তৈরি করেছে তারা। বদল নজরে আসে বৃদ্ধ কালামুদ্দিনের বাড়ির কাছে ঘাজি স্টেডিয়ামে পা রাখলেও। তালিবানি আমলে যা ছিল বধ্যভূমি, সেখানে আজ ফুটবলের ছোটাছুটি। তবে বহিরঙ্গের এই বদলটাই শেষ কথা নয়। সুর কিছুটা নরম হলেও তালিবানের মৌলবাদী ‘মূল মন্ত্রে’ আমূল পরিবর্তন এসেছে, তেমনটা বলা যাচ্ছে না এখনও। কিছু বিষয়ে আজও অনড় কালামুদ্দিন। যেমন, কোনও মুসলমান দাড়ি না রাখলে আজও তাঁকে পাপী বলতে দ্বিধা করেন না এই বৃদ্ধ। ‘মহিলাদের অধিকার’ নিয়ে কালামুদ্দিনের অনমনীয় মনোভাবও যেন আগের সেই তালিবানি রক্তচক্ষুকেই মনে করিয়ে দেয়। এই প্রাক্তন তালিবান নেতার তিন ছেলে আধুনিক শিক্ষার পাঠ নিলেও, তাঁর দুই মেয়ে আজও ঘরবন্দি। মেয়েদের অন্তরালে রাখার তালিবানি দর্শন কি মানবাধিকারের পরিপন্থী নয়? প্রশ্ন করতেই বৃদ্ধের প্রত্যয়ী জবাব, “মানবাধিকার আমরা আপনাদের থেকে বেশি বুঝি, কারণ সেই অধিকারের কথা খোদ আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.