তৃণমূল নেতা কৃপাসিন্ধু সাহা খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আরও এক জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবার রাতে কেতুগ্রামের আমগোড়িয়া বাজার থেকে ইসলাম মল্লিক নামে ওই ব্যক্তিকে ধরা হয়। পুলিশ জানায়, তৃণমূল কর্মী ইসলামের বিরুদ্ধে তিনটি খুন-সহ ১০টি নানা অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের হিসেবে বেশ কয়েক মাস ধরে ফেরার ছিলেন তিনি। ধৃতের থেকে ২টি মাস্কেট ও চার রাউন্ড কার্তুজ পাওয়া গিয়েছে। তবে ওই খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হারা শেখকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ।
কৃপাসিন্ধু সাহা খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত চাঁদ শেখ গত সপ্তাহে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পুলিশের দাবি, তাদের হেফাজতে থাকাকালীন চাঁদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই জেরা থেকেই খুনের অন্যতম চক্রান্তকারী হিসেবে ইসলামের নাম উঠে আসে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ‘ফেরার’ ইসলাম কয়েক মাস আগে গ্রামে ফিরেছেন। কিন্তু রাতে বাড়িতে থাকছিলেন না। কয়েক বার তল্লাশি চালিয়েও তাঁকে ধরা যায়নি। শুক্রবার বিকেলে সাদা পোশাকে পুলিশ আমগোড়িয়ায় যায়। এক পুলিশকর্মী জানান, সন্ধ্যার মুখে বাজারে বসেছিলেন ইসলাম। তখনই তাঁকে ধরা হয়। পুলিশ জানায়, ধৃতের থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ মিলেছে। এ দিকে, রবিবার কেতুগ্রামের কান্দরা মোল্লাপাড়ায় চাঁদ শেখের বাড়ির কাছে রাস্তা খুঁড়ে তিনটি মাস্কেট ও তিনটি কার্তুজ মিলেছে। পুলিশের দাবি, চাঁদকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই অস্ত্রগুলি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ শনিবার সন্ধ্যায় ইসলামকে গ্রেফতার করার কথা বললেও আমগোড়িয়ার তৃণমূল সভাপতি রহিম মির্জার দাবি, ওই দিন সকালেই তাঁকে ধরা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “সাদা পোশাকের পুলিশ আচমকা ইসলামের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সিপিএমের লোকজন হামলা চালিয়েছে মনে করে এগিয়ে গেলে পুলিশ আমাকে মারধর করে।” পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে। কেতুগ্রাম থানার আইসি আব্দুল গফ্ফর বলেন, “কৃপাসিন্ধু সাহা খুনে অন্যতম চক্রান্তকারী হিসেবে ইসলামের নাম উঠে এসেছে। এ ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। অনেক দিন ধরেই তাঁর খোঁজ চলছিল। তাঁকে ধরার সময়ে পুলিশ কাউকে মারধর করেনি।” রবিবার ধৃতকে আদালতে তোলা হলে ৬ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, ২০১০ সালে ২০ মে আমগোড়িয়ার দুই সিপিএম কর্মী বাণেশ্বর হাজরা ও লক্ষ্মী হাজরাকে কোমরপুর হাটতলা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে খুন করা হয়। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ইসলাম। বিধানসভা ভোটের পরে আমগোড়িয়ায় সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে মোবারক মির্জা নামে এক সিপিএম কর্মী নিহত হন। সেই ঘটনাতেও অভিযুক্ত ইসলাম। এ ছাড়া বোমাবাজি, সংঘর্ষ, বাড়িতে অগ্নি সংযোগের মতো নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সদস্য ফারুক মির্জা ও তপন কাজির অভিযোগ, “ইসলাম এক জন দুষ্কৃতী। তার জন্য আমাদের কর্মীরা গ্রামছাড়া। তৃণমূল নেতা খুন হল বলে পুলিশ তাকে দেখতে পেল!” ইসলাম এলাকায় তৃণমূলের কেতুগ্রাম ১ ব্লক সভাপতি রত্নাকর দে-র অনুগামী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ইসলামের গ্রেফতার হওয়া প্রসঙ্গে রত্নাকরবাবু বলেন, “আমাদের সরকারের আমলে পুলিশ নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। আমরা পুরো বিষয়টি জেনে উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।” |