লিটল ম্যাগাজিন মেলায় দু’দিন জমজমাট হয়ে রইল আসানসোল। ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি শহরের পুরনো আশ্রম মোড়ে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রাঙ্গণে এই মেলায় যোগ দেয় ২৬টি লিটল ম্যাগাজিন। ২২টি স্টলে নিজেদের পত্রিকা বিক্রি করলেন সম্পাদকেরা। মেলার উদ্বোধন করেন কলেজের অধ্যক্ষ দেবেশচন্দ্র মজুমদার, সাহিত্যিক সুনীলেন্দু প্রকাশ রায়। আসানসোল ‘সাহিত্যপ্রেমী, লেখক, কবি সমাবেশ’ আয়োজিত এই মেলা তৃতীয় বর্ষে পা দিল এ বার।
দু’দিনের এই মেলায় উপস্থিত ছিলেন এক ঝাঁক কবি ও সাহিত্যিক। মেলায় আসা লোকজনকে লিটল ম্যাগাজিন কিনতে অনুপ্রাণিত করছিলেন তাঁরা। এমনকী নিজেরাও ভিড়ে গেলেন বিক্রেতাদের সঙ্গে। দাঁড়িয়ে থেকে সম্পাদকদের সঙ্গে বিক্রি করলেন পত্রিকা। মেলায় যেমন ছিল নতুন পত্রিকার ভিড়, তেমনি সামিল হয়েছিল প্রায় তিন দশক ধরে প্রকাশিত হয়ে আসা পরিচিত পত্রিকাও। নতুন ও পুরনো পত্রিকার ভিড়ে হারিয়ে গেল প্রজন্মের ব্যবধান। ১৯৭৫ থেকে আসানসোলে প্রকাশিত হচ্ছে ‘তাপ উত্তাপ’। ফতেপুর থেকে বেরোচ্ছে ‘সাহিত্যভাবনা’। নয় নয় করে প্রায় ৩৩ বছর পার হয়ে গেল এই পত্রিকাটির। তারই প্রায় দু’বছর আগে থেকে বেরোচ্ছে দোমহানির ‘শিল্পভূমি’। রূপনারায়ণপুর থেকে ‘দিগন্ত’ প্রকাশিত হচ্ছে প্রায় ২৫ বছর ধরে। একাই তার হাল ধরে আছেন প্রবীণ সম্পাদক। আসানসোলের ‘আজকের যোধন’ও পার করে ফেলল ২৮ বছর। রূপনারায়ণপুরের মানুষের কাছে এই পত্রিকা দু’টির যথেষ্ট সমাদর। |
এই সব পুরনো পত্রিকার পাশাপাশি নতুনরাও জায়গা করে নিয়েছে। নব্বইয়ের গোড়া থেকে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনে সামিল হয়েছে ‘তবুও মানুষ’। এসেছিল আসানসোলের ‘দেখা’। প্রায় দশ বছর ধরে প্রকাশ হয়ে চলেছে এই পত্রিকা। ডিসেরগড়ের ‘বাংলা বিদ্যাসভা’ সংগঠনটি ২০০৫ থেকে প্রকাশ করে চলছেন তাঁদের পত্রিকা ‘বাংলা’। বয়স অপেক্ষাকৃত কম হলেও ইতিমধ্যেই পুরনো বাংলা সাহিত্য ও সাময়িক পত্রের বিচিত্র সংগ্রহ রয়েছে তাঁদের ঝুলিতে। মেলাতে সেই সংগ্রহের কিছু নিয়েও এসেছিলেন তাঁরা। ১৩৩৫ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত ‘প্রবাসী’র সংস্করণ থেকে শুরু করে ১৮৬০ সালে প্রকাশিত ‘তত্ত্ববোধিনী’র সংস্করণ, কী নেই সেখানে! প্রবাসীর ওই সংস্করণেই প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’। রয়েছে ১৮১৪ সালে মেয়েদের জন্য প্রথম প্রকাশিত পত্রিকা ‘বামাবোধিনী’। সম্পাদক ছিলেন উমেশচন্দ্র দত্ত। ১৯০২ সালে প্রকাশিত ‘তত্ত্বকৌমুদিনী’ পত্রিকার সংস্করণও রয়েছে তাঁদের সংগ্রহে। সংবাদপত্রের মধ্যে রয়েছে ১৯০১ সালের ‘হিন্দু’ বা রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে প্রকাশিত ‘কলকাতা গেজেটে’র সংস্করণও।
মেলায় এ বার প্রথম যোগ দিল ছোট পত্রিকা ‘ঊর্ণনাভ’। প্রকাশিত হল তাদের দ্বিতীয় সংখ্যা। আসানসোলের ‘কাল’ পত্রিকাও এ বার দু’বছরে পা দিল। বছর তিনেক ধরে প্রকাশিত হচ্ছে ‘ঠিকানা’। প্রতি বছর তারা বদলে দেয় পত্রিকার নাম। এ বার নাম হয়েছে ‘ছই’। অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিনের ভিড়ে জায়গা করে নিয়েছে ‘বিবেক এবং’, ‘সাঁকো’, ‘কাল্পনিক’, ‘অন্য নারীর অন্য কথা’, ‘চিত্ররূপ’ ইত্যাদি। ভাষার ব্যবধান ঘুচিয়ে মেলায় সামিল হয়েছে হিন্দি পত্রিকা ‘কালপত্র’ও।
পত্রিকা ছাড়াও ছিল আলোচনা সভা ও ছোট গল্প লেখার প্রতিযোগিতা। মেলার মঞ্চে প্রথম দিন বাংলা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেন সাহিত্যিক বিকাশ গায়েন, আইনজীবী তথা প্রাক্তন বিধায়ক অমিতাভ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। ছোট গল্প প্রতিযোগিতায় প্রথম হন মানস দাস, দ্বিতীয় হন তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছরের ছোট পত্রিকা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে ‘আজকের যোধন’। এ বছর পুরস্কৃত করা হয় তাদের।
মেলার তরফে দীপঙ্কর মজুমদার বলেন, “তৃতীয় বর্ষে মেলার ঐতিহ্য অমলিন রয়েছে। তা দেখে আমরা অভিভূত। ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই আমাদের লক্ষ্য।” |