ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের গোলমালের জেরে নিগৃহীত হলেন কলেজের অধ্যক্ষ। শনিবার ঘটনাটি ঘটে কোচবিহারের হলদিবাড়ি কলেজে। অধ্যক্ষ তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিগ্রহের জেরে কলেজের ছাত্র সংসদ গঠনের প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।
অধ্যক্ষ তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, এ দিন ছাত্র ব্লকের পক্ষ থেকে দীপঙ্কর রায় নামে এক ছাত্র নেতা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে ছাত্র সংসদ গঠনের দাবি জানিয়ে প্যানেল জমা দেন। তাতে আপত্তি জানায় ছাত্র পরিষদ। তারা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য দু’দিন সময় চায়। অধ্যক্ষ ছাত্র পরিষদ সদস্যদের ত্রিশ মিনিট সময় দিতে চাইলে ছাত্র সংসদের নির্বাচন সংক্রান্ত ফাইলটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। দু’পক্ষের ধস্তাধস্তির সময়ে অধ্যক্ষের বাঁ-হাতের একটি আঙুলের নখ উঠে গিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। সমস্ত ঘটনা জানিয়ে অধ্যক্ষ পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অধ্যক্ষ বলেন, “আমার হাত থেকে ফাইল কেড়ে নেওয়া হয়। হাতে চোট লাগে। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে প্যানেল জমা দেওয়ায় ছাত্র ব্লকের পক্ষ থেকে দলের নেতা দীপঙ্কর রায়কে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্য দিকে, সন্ধ্যায় ছাত্র পরিষদ, এসএফআই এবং ছাত্র ব্লকের মিলিত জোটের ১৬ জনের নামের প্যানেল জমা দেয়।
মাথাভাঙার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সীতারাম সিংহ বলেন, “অভিযোগপত্রটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে।” অধ্যক্ষের উপরে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্র পরিষদের হলদিবাড়ির ব্লক সম্পাদক সঞ্জয় সাহা। তিনি বলেন, “তৃণমূল ছাত্র পরিষদ আমাদের সঙ্গে জোট করলেও সংসদ গঠনের সময়ে বিশ্বাসঘাতকতা করে। আমাদের কেউ অধ্যক্ষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেনি।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি ওই কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ২৬টি আসনের মধ্যে ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ১০টি করে আসনে জয়ী হয়। বাকি ৬টির মধ্যে ৩টি করে আসনে জয়ী হয় এসএফআই ও ছাত্র ব্লক। এ দিন ছিল ছাত্র সংসদ গঠনের দিন। ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে শুক্রবার বৈঠক করে তাঁরা ঠিক করেছিলেন সাধারণ সম্পাদক হবেন তাঁদের প্রসেনজিৎ দাস। এ দিন সকালে আচমকাই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে ছাত্র ব্লকের সঙ্গে জোট করে একটি প্যানেল অধ্যক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ছাত্র ব্লকের পক্ষ থেকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সেলিম সরকারের নাম প্রস্তাব করা হয়। সেটা জানার পরেই ছাত্র পরিষদের সমর্থকেরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে আলোচনার জন্য অধ্যক্ষকের কাছে ছাত্র সংসদ গঠনের দিন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। দু’পক্ষে তর্কাতর্কি শুরু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, বৈঠকে প্রসেনজিৎ দাস সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত হলে তারা আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু ছাত্র ব্লকের সঙ্গে তারা কোনও জোট করেনি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের হলদিবাড়ি ব্লকের সম্পাদক পবিত্র রায় বলেন, “ছাত্র ব্লকের পক্ষ থেকে যে প্যানেল জমা দেওয়া হয় আমরা তার সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। ওই প্যানেলে আমাদের সম্মতিও ছিল না। কিন্তু যে ভাবে অধ্যক্ষের উপরে হামলা করেছে তা মানা যায় না। ছাত্র পরিষদ যদি তাঁদের প্রার্থী পাল্টায় তবেই আমরা সমর্থন করব।”
ছাত্র ব্লকের হলদিবাড়ি ব্লকের সম্পাদক মোরসেদুল আরেফিন প্রধান বলেন, “দীপঙ্কর রায়কে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সদস্য সেলিম সরকারের নাম সম্পাদক পদে প্রস্তাব করার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। পুরোটাই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।” দীপঙ্কর রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। |