বিশেষ ছাড়ের আশা ছেড়ে ছোট-মাঝারি শিল্প গড়তে উত্তরবঙ্গের শিল্পোদ্যোগীদের ‘ময়দানে’ নামার পরামর্শ দিলেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
শনিবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে উত্তরবঙ্গ উৎসবের মেলা-মঞ্চে কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (নর্থ বেঙ্গল) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় যোগ দেন পার্থবাবু। সেখানে সিআইআইয়ের তরফে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বিশেষ ছাড়ের আর্জি পেশ করা হয়। শিল্পমন্ত্রী বলেন, “উত্তরবঙ্গে চা-পর্যটন শিল্প প্রসারের প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি ও ফুল-ফলনির্ভর শিল্পও হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে অসুবিধাও রয়েছে। সে জন্য বিশেষ ছাড় দরকার বলে অনেকেই বলছেন। আমার অনুরোধ, বিশেষ ছাড়ের বিষয়টি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ময়দানে নামুন, দেখবেন সব হয়ে যাবে। কারণ, কেউ সত্যিকারের শিল্প স্থাপনে উদ্যোগী হলে তাঁকে যত দ্রুত সম্ভব সমস্ত সহায়তা করছে রাজ্য সরকার।” |
তৃণমূল জোট রাজ্যে সরকার গঠনের পরে আট মাস কাটলেও উত্তরবঙ্গে অবশ্য কোনও শিল্প-কারখানা গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই ছয় জেলার শিল্প মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আলোচনা সভার মঞ্চ থেকেই শিল্পমন্ত্রী তাই উত্তরবঙ্গে এখনও পর্যন্ত যে ক’টি শিল্প-প্রকল্প গড়ার বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে তা ঘোষণা করেন। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসেই দার্জিলিং ও শিলিগুড়িতে ২-টি আইটি হাব তথা আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ার কাজ শুরু হবে। সে জন্য জমিও চিহ্নিত হয়েছে। কালিম্পঙে মুগা চাষ ভিত্তিক শিল্প প্রকল্প ও ভেষজ ওষুধ কারখানা গড়ার প্রস্তাবও প্রায় চূড়ান্ত। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগ করবে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গে অন্তত দুটি অটো-হাব গড়ার বিষয়ও চূড়ান্ত হয়েছে। শিল্পমন্ত্রী বলেন, “একটি ক্ষেত্রে মারুতি ওই লজিস্টিক হাব গড়বে। অন্য জায়গায় টয়োটা কোম্পানি তৈরি করবে বলে কথাবার্তা হয়েছে। ওই দুটি হাব চালু হলে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে।”
আলোচনা সভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে নিরাপত্তা, আলো-জল-বিদ্যুৎ-সহ যে সমস্যার কথা ওঠে তার যৌক্তিকতা স্বীকার করলেও বারেবারেই শিল্পোদ্যোগীদের ‘কিছু হচ্ছে না, কিছু পারছি না’ গোছের মনোভাব ঝেড়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “হচ্ছে না। পারছি না। এটা নেই। ওটা নেই। ছাড় চাই। এমন মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজে নামতে হবে। তা হলে উত্তরবঙ্গ পিছিয়ে থাকার গল্পটাও ক্রমশ শেষ হয়ে যাবে।” পাশাপাশি, সিআইআইয়ের তরফে সদস্য-প্রতিনিধিরা নির্দিষ্ট পর্যটন নীতি তৈরির মাধ্যমে চা-পর্যটন শিল্পের প্রসারের যে আর্জি জানান তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চাওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী। ওই আলোচনাসভায় চা-পর্যটন শিল্প গড়ার প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব উদ্যোগীদের সতর্কও করে দিয়েছেন। তাঁর বার্তা, “শিল্প গড়ার নামে চা বাগান উপড়ে কেউ যেন প্রোমোটারি করার চেষ্টা না-করেন। সরকার তা বরদাস্ত করবে না।” |