ফিরলেন অপহৃত মৎস্যজীবীরা
আধপেটা খাইয়ে বারবার খুনের হুমকি দিয়েছে ‘গামা’ জলদস্যুরা
দিন ধরে খাবার মিলছিল শুধু একবেলা। রাতে অল্প ভাত-তরকারি। পানীয় জলও মিলত শুধু রাতেই।
আর দিনভর শুনতে হচ্ছিল খুনের হুমকি।
প্রবল ঠান্ডার মধ্যে পরনে স্যান্ডো গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট। বাকি জামাকাপড় সবই লুঠ হয়ে গিয়েছিল। ট্রলার যে কোথায় ভেসে যাচ্ছিল, কোনও আন্দাজ পাচ্ছিলেন না তাঁরা। কারণ, সকলে যে ট্রলারের নীচের একটি কুঠুরিতে বন্দি।
বাংলাদেশের দুর্ধর্ষ জলদস্যু ‘গামা’ বাহিনীর হাতে ২৭ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬ দিন বন্দি অবস্থায় ওই ভাবে কাটানোর পরে অবশেষে শুক্রবার রাতে নিজেদের ট্রলারে চড়েই বাড়ি ফিরলেন কাকদ্বীপের ১০ মৎস্যজীবী। মুক্তি অবশ্য মিলেছিল গত ২ ফেব্রুয়ারি। সে দিন গভীর রাতে বাংলাদেশের সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের শেলারচর ক্যাম্পে মৎস্যজীবীদের নামিয়ে দেয় জলদস্যুরা। তার পরে শুরু বাড়ি ফেরার অপেক্ষা।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই মৎস্যজীবীদের নিয়ে ‘এফ বি তারা মা’ ট্রলার যখন কাকদ্বীপ মৎস্যবন্দরে ভিড়ল, তখন সেখানে হাজির প্রত্যেকের পরিবারের লোকজন। চোখে আনন্দাশ্রু। সর্বস্বান্ত হয়েছেন মৎস্যজীবীরা। খোয়া গিয়েছে জাল, টাকা-পয়সা, জামাকাপড়, জুতো সব কিছুই। তবু প্রাণ নিয়ে যে তাঁরা ফিরতে পেরেছেন, তাতেই খুশি। সকলেই বলছেন, “ঠাকুর রক্ষা করেছেন। মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরলাম।”
কাকদ্বীপের অক্ষয়নগর এবং ৮ নম্বর কালীনগর থেকে শতাধিক মৎস্যজীবী বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি ‘গামা’ বাহিনীর কবলে পড়েন। জলদস্যুদের এলোপাথাড়ি গুলিতে তিন মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়। চম্পট দেওয়ার সময়ে জলদস্যুরা ‘এফ বি তারা মা’ নামে ট্রলারটি টেনে নিয়ে যায়। সেই ট্রলারে ছিলেন ১২ জন মৎস্যজীবী। তাঁদের মধ্যে দু’জন সমুদ্রে ঝাঁপ দেন। এক জনকে উদ্ধার করা গেলেও আর এক জনের এখনও খোঁজ মেলেনি। বাকি ১০ জনকে বাংলাদেশের দিকে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। এক সময়ে নিজেদের ট্রলারে তারা মৎস্যজীবীদের তুলে নেয়। গত ২৯ জানুয়ারি পূর্ব সুন্দরবনের চাপড়াখালি থেকে খালি অবস্থায় ‘এফ বি তারা মা’ ট্রলারটি উদ্ধার করে বাংলাদেশের উপকূলরক্ষী বাহিনী।
জলদস্যুদের হাতে বন্দি থাকাকালীন মৎস্যজীবী নারায়ণ দাস, রতন দাস, রাজু দাস, সূর্য দাসরা ট্রলারেই দিন কাটিয়েছেন। আর সেই অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে শনিবার সকালেও কেউ কেউ আতঙ্কে চোখ বুজে ফেলছিলেন। নারায়ণবাবুর কথায়, “প্রথম দিন ১০-১২ ঘণ্টা চলার পরে আমাদের ট্রলার একটি চরে আটকে যায়। তার পরেই জলদস্যুরা ওদের ট্রলারে আমাদের তুলে নেয়।” রতনবাবু বলেন, “সব সময়েই যে ট্রলার চলত এমন নয়। কিন্তু ট্রলার দাঁড় করিয়ে রাখা হত মাঝসমুদ্রে। ওদের প্রত্যেকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। আমাদের যে কতবার খুনের হুমকি দিয়েছে ইয়ত্তা নেই। তখন ঠাকুরকে ডাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।” হরিধন দাস নামে আর এক মৎস্যজীবী বলেন, “আমাদের ট্রলারের উপরে উঠতে দিত না। কুঠুরিতে বন্দি ছিলাম। রাতে শুধু অল্প ভাত-তরকারি আর জল দিত। স্নান করতে দিত না। কী ভাবে যে দিন কাটিয়েছি!”
২ ফেব্রুয়ারি রাতে নারায়ণবাবু, হরিধনবাবুদের সকলকে যখন কুঠুরি থেকে বের করে আনা হয়, তখন সকলেই ইষ্টনাম জপছেন। বুঝতে পারছিলেন না এ বার কী হতে যাচ্ছে। কিন্তু শেলারচর ক্যাম্পে তাদের যখন নামিয়ে দিয়ে জলদস্যুরা চলে গেল, তখন মুক্তির আনন্দে মৎস্যজীবীরা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন। এর পরে বাংলাদেশের বন দফতরের নজরে পড়া। দু’দিন সেখানকার রেঞ্জ অফিসে, তার পরে স্থানীয় মঙ্গলা থানার পুলিশ হেফাজতে কাটানো। বৃহস্পতিবারই তাঁরা নিজেদের ট্রলার ফিরে পান। তার পরে শুক্রবার ফেরা।
কয়েক দিন বাড়িতে কাটিয়ে আবার সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে হবে নারায়ণবাবু, হরিধনবাবুদের। এ ছাড়া যে তাঁদের আর কোনও জীবিকা নেই। কিন্তু আবার যদি এমন অভিজ্ঞতার সামনে পড়তে হয়? সকলের একটাই উত্তর“কী আর করব? পেট চালাতে হবে তো।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.