ট্যাক্সির রং বদলাতে চাইছে রাজ্য সরকার। হলুদের বদলে সেই রং হবে নীল-সাদা, জানিয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র।
কেন এই রং বদল? মন্ত্রী বলেন, “শহরের রং বদলেছে। তা হলে ট্যাক্সির রং-ই বা বদলাবে না কেন? বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ছবি দেখলে যেমন সিপিএমের সন্ত্রাসের কথা মনে পড়ে, তেমন হলুদ রং বাম জমানার সন্ত্রাসের সমার্থক।”
পরিবহণ মন্ত্রীর এই মন্তব্যকে কটাক্ষ করেছেন সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, “মদনবাবুর মন্তব্য শুনে আমার দু’টো কথা মনে হচ্ছে। তা হল দুরাত্মার ছলের অভাব হয় না, আর নেই কাজ তো খই ভাজ।”
রাজ্যের মানুষ অবশ্য ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দের রং আকাশ-নীল। তাই কলকাতা শহর সেজে উঠছে নতুন রঙে। রাস্তার অধিকাংশ রেলিঙে নীল-সাদা রঙের প্রলেপ পড়ছে। মহাকরণেও ঝুলছে একই রঙের আলোর মালা। শহরের ময়দান এলাকায় যত মূর্তি আছে, তা-ও সাজানো হয়েছে নীল-সাদা আলোয়। সে কথা মাথায় রেখেই পরিবহণ মন্ত্রীর এ হেন উদ্যোগ বলে মনে করছেন তাঁর দফতরের অফিসারেরা।
হলুদ রঙে মদনবাবু সন্ত্রাসের ছায়া দেখতে পেলেও শহরের প্রতিষ্ঠিত চিত্রশিল্পীদের অনেকেই অন্য কথা বলেছেন। তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ শিল্পী সমীর আইচ বলেন, “আমার কাছে সন্ত্রাসের রং লাল ও কালো। হলুদ রঙের সঙ্গে সন্ত্রাসের কোনও যোগ আছে বলে আমি মনে করি না। থাকার কোনও যুক্তিও নেই।” বরং তিনি মনে করেন, ট্যাক্সির রং হলুদ থাকাই বাঞ্ছনীয়। তাঁর কথায়, “পরিবহণ বিজ্ঞান মেনেই ট্যাক্সির রং হলুদ করা হয়েছে, যাতে অতি সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। একই কারণে রাস্তার মাইলস্টোনের রং-ও করা হয় হলুদ-কালো।”
আর এক শিল্পী সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেন, তাঁর কাছে সন্ত্রাসের রং কোনও মতেই হলুদ নয়। তিনি বলেন, “সন্ত্রাস বললেই আমার যে রংগুলোর কথা মনে পড়ে, তা হল কালচে লাল, সিঁদূরে মেঘ কিংবা আগুন লাগার রং।” তবে শহরে নীল-সাদা রঙের ট্যাক্সি চললে তাঁর কোনও আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন সুব্রতবাবু। মনে করেন, সুন্দর রঙের ট্যাক্সি দেখতে তাঁর ভালোই লাগবে।
শিল্পী যোগেন চৌধুরী বলেন, “আমার চোখে সন্ত্রাসের রং কালচে-লাল বা খয়েরি লাল। তবে ট্যাক্সির হলুদ রঙকে সন্ত্রাসের প্রতীক হিসেবে বোঝাতে গিয়ে মদনবাবু ঠিক কী বলেছেন, তা পুরোটা না জেনে কিছু বলব না।”
ট্যাক্সির রং বদলানোর পাশাপাশি আরও বেশি পরিষেবা দিতে সরকার গুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে বলে এ দিন মহাকরণে জানান মদনবাবু। বলেন, “১৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার সব ট্যাক্সি ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠক করব। সেখানে সরকারের তরফে ১২ দফা দাবি পেশ করা হবে।” কী সেগুলো? মন্ত্রী বলেন, “ট্যাক্সিতে প্রিন্টারযুক্ত ইলেকট্রনিক মিটার লাগানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। চালকদের পরিষ্কার পোশাক পরতে হবে। যাত্রী প্রত্যাখান করা যাবে না।” মন্ত্রী জানান, প্রত্যাখান রুখতে পরিবহণ দফতর কন্ট্রোল রুম খুলবে। ট্যাক্সির নম্বর দিয়ে সেখানে অভিযোগ জানালে সংশ্লিষ্ট চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |