ফের ইনফোসিসের প্রকল্প ঘিরে সংশয়ের অন্ধকার।
শনিবার বেলুড় মঠে একটি আলোচনাসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে সংস্থার প্রাণপুরুষ নারায়ণমূর্তি বলেন, “চুক্তির
কিছু শর্ত পূরণের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। রাজ্য সরকার সেই শর্ত পূরণ করলেই এখানে সানন্দে কাজ করব।” কারণ নারায়ণমূর্তি মনে করেন, প্রতিযোগিতার বাজারে অন্য সংস্থার তুলনায় কম সুবিধাজনক অবস্থায় কাজ করা সম্ভব নয়। এমনকী, অন্যান্য রাজ্যে ইনফোসিসের প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধার সঙ্গেও তুলনামূলক জায়গায় থাকতে হবে এ রাজ্যের ক্যাম্পাসকে।
তাঁরা কোন শর্ত পূরণের অপেক্ষায়, তা নারায়ণমূর্তি মুখে না-বললেও সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, সেটা আসলে বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের (এস ই জেড) তকমা। ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আর্থিক ফলাফল অনুযায়ী ইনফোসিসের মোট ব্যবসার পরিমাণ ১৬২ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার। এই রাজস্বের ৯৮ শতাংশই বিদেশের বাজার থেকে আসে। বিশেষ আর্থিক অঞ্চল গড়লে স্বাভাবিক ভাবেই কর ছাড় পাবে ইনফোসিস। যেমনটি তারা পেয়ে থাকে বেঙ্গালুরু, পুণে, হায়দরাবাদ, গুড়গাঁও-সহ দেশ জুড়ে থাকা এগারোটি কেন্দ্র থেকে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের সুযোগ-সুবিধা না পেলে সংস্থার পক্ষে মুনাফা বাড়ানো কঠিন। বস্তুত, নারায়ণমূর্তি নিজেই এ দিন এই ইঙ্গিত দেন। |
বেলুড় মঠে আলোচনাসভায় নারায়ণমূর্তি। নিজস্ব চিত্র |
কিন্তু, ক্ষমতায় আসার আগেই তৃণমূল জানিয়ে দিয়েছিল, তারা বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের পক্ষে নয়। তার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও একাধিক বার সে কথা জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এই নীতির কারণেই ইনফোসিসের প্রকল্পকে বিশেষ আর্থিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করতে গড়িমসি করছে রাজ্য। কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের তকমা পাওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের সুপারিশ প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় শিল্প মন্ত্রকের ‘বোর্ড অফ অ্যাপ্রুভাল’ বা অনুমোদন পর্ষদের কাছে সরাসরিও আবেদন করতে পারে সংস্থা। তবে সে ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের ভূমিকা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। কিন্তু রাজ্য সরকার
এখনও এই সুপারিশ পাঠায়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। এ দিকে ‘বিশেষ আর্থিক অঞ্চল আইন’ অনুযায়ী ২০১৪ সালের মধ্যে প্রকল্প চালু না হলে আর্থিক সুবিধা পাওয়া যাবে না।
তবে নারায়ণমূর্তির এ দিনের মন্তব্য যে বিশেষ আর্থিক অঞ্চল প্রসঙ্গে,
সে কথা মানতে নারাজ রাজ্য। পার্থবাবু বলেন, “উনি অন্যান্য রাজ্যের সুযোগ-সুবিধার কথা বলেছেন। আমরাও অনেক সুবিধা দিয়ে থাকি। তা-ও যদি মনে
হয় অন্যান্য রাজ্য বেশি সুবিধা দিচ্ছে,
তা হলে সংস্থা তা আমাদের জানাতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমরাও সে সব সুবিধা দেওয়ার
কথা বিবেচনা করব।”
কিন্তু ঘটনা হল, এ রাজ্যে বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের তকমা পাওয়া ঘিরে সংশয়ের ইঙ্গিত রয়েছে ইনফোসিসের আর্থিক ফলাফলের রিপোর্টেও। ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ইনফোসিসের হাতে জমি তুলে দিয়েছে রাজ্য সরকার। সংস্থাও প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সম্পত্তির তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের নাম নেই। অধিগৃহীত জমির হিসেবেও এই ক্যাম্পাসের ৫০ একরের উল্লেখ নেই।
বস্তুত, এ রাজ্যে ইনফোসিসের লগ্নির সম্ভাবনা বাস্তবায়িত হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে প্রথম দিন থেকেই। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় এসে নারায়ণমূর্তি জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করতে চান তিনি। ৫০০ কোটি টাকা লগ্নি ও ৫ হাজার জনের কর্মসংস্থানের প্রস্তাব দেন তিনি। ২০০৬ সালে প্রকল্পের জন্য ১০০ একর জমি সরকারের কাছে চান তাঁরা। কিন্তু জমির দাম নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। সেই জট কাটিয়ে অবশেষে ২০১০ সালের শেষে ৫০ একর জমি বরাদ্দ করা হয় সংস্থার জন্য। জমি ইনফোসিসের হাতে তুলে দেওয়া হয় গত নভেম্বরে। |