উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার আর্থিক সঙ্কট মোকাবিলায় এ বার বেশ কিছু ডিপো ও স্টেশন কমানো হচ্ছে। এর আগে ঠিকাদার নিযুক্ত কিছু কর্মীকে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
এনবিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগন বলেন, “সংস্থার বেহাল দশা ঘোচাতে আমরা খরচ কমাতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি। সেই জন্যই কিছু ডিপো ও স্টেশনের সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা হয়েছে। এতে যাত্রী পরিষেবা ব্যাহত হবে না।” নিগমের চেয়ারম্যান বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, আপাতত সংস্থার কিছু ছোট ডিপো ও স্টেশনের সংখ্যা কমানো জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “সংস্থাকে ঘুরে দাঁড় করাতে বাড়তি খরচের ভার না কমালে চলছে না বলেই ওই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে এসেছিলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তিনি বলেন, “রাজ্যের যে কয়েকটি পরিবহণ সংস্থা ধুঁকছে তার মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর জায়গায় এক নম্বরে রয়েছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি)। কর্মীদের ঘুরে দাঁড়ানোর এই লড়াই জারি রাখতে হবে। কর্মীদের কাজের দক্ষতা বিচার করে ইনসেনটিভ চালু করা হবে।”
লোকসানে চলা এই সংস্থাটি সম্প্রতি নিজের পায়ে দাঁড়াতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় দীর্ঘদিন বেহাল হয়ে পড়ে থাকা ১০টিরও বেশি ডিপো ও স্টেশন বসিয়ে দেওয়ার তালিকায় রয়েছে। ইতিমধ্যে ওই ব্যাপারে বিভিন্ন ডিপো কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। |
নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পরিকল্পনায় কোচবিহারের-১ ও ২ নম্বর ডিপোকে মিশিয়ে একটি ডিপো করা, জোড়াই ডিপোকে আলিপুরদুয়ারের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া, ময়নাগুড়ি ও মালবাজার ডিপোকে জলপাইগুড়ির সঙ্গে যুক্ত করা, ইসলামপুর ডিপোকে শিলিগুড়ির সঙ্গে যুক্ত করা, তুফানগঞ্জ স্টেশনকে নতুন ভাবে তৈরি করে কোচবিহার ডিপোর সঙ্গে যুক্ত করা এবং চাঁচলকে মালদহের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের কৃষ্ণনগর ডিপোকেও রানাঘাটের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি ফরাক্কা ডিপো বহরমপুর ডিভিশনের পরিবর্তে রায়গঞ্জ ডিভিশনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিগমের কর্তারা।
নিগমের কয়েকজন আধিকারিক বলেন, “ডিপো ও স্টেশনের সংখ্যা কমানো হলে সেখানকার খরচ কমবে। বিভিন্ন ডিপো ও স্টেশনে বসে থাকা কর্মীদেরও কাজে লাগানোর সমস্যা থাকবে না। নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যাও কমানো সম্ভব হবে।” নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টরও বলেন, “দায়িত্ব নেওয়ার পরে দেখি মালবাজার ডিপো থেকে মাত্র ১টি বাস চলছে। অথচ কর্মী আছেন ১৪ জন। পরে তা কমিয়ে ৩ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ ভাবেই অতিরিক্ত কর্মীদের প্রয়োজন মতো কাজে লাগাতে চাইছি।”
সিটুর এনবিএসটিসি এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক জগৎজ্যোতি দত্ত বলেন, “তাড়াহুড়ো না করে আরও আলোচনা করে ডিপো ও স্টেশন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল। এর ভালমন্দের দায় কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে মনে করেন, “রাজ্য সরকার উত্তরবঙ্গের ওই পরিবহণ শিল্প তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে।” |