|
|
|
|
পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি তৃণমূলের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পশ্চিম মেদিনীপুরে পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিল তৃণমূল। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর শহরে তৃণমূলের এক সভা হয়। দলীয় বিধায়ক, জেলা কোর-কমিটির সদস্য, শাখা সংগঠনগুলির সভাপতি ও প্রতিটি ব্লক থেকে ৫ জন করে কর্মী যোগ দেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সুব্রত বক্সী, ছাত্র নেতা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। এই দু’জনেই দলের তরফে পঞ্চায়েত ভোটে এ জেলায় দলের দায়িত্ব পেয়েছেন।
সভায় সুব্রতবাবু বলেন, “পূর্ব মেদিনীপুরে স্বপ্নপূরণ হয়েছে। এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরেও স্বপ্নপূরণ করতে হবে। জেলা পরিষদ দখল করতে হবে।” এই স্বপ্নপূরণ করতে হলে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছেড়ে বেরোতে হবে, তা-ও মনে করিয়ে দেন রাজ্য সভাপতি। তাঁর কথায়, “ঘরের ঝগড়া ঘরেই রাখুন।” পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, “পঞ্চায়েত ভোটে দুই মেদিনীপুর এক সঙ্গে কাজ করবে। ইতিমধ্যেই শুভেন্দুর (অধিকারী) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।”
গত বিধানসভা ভোটের আগে পর্যন্তও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের ‘শক্তঘাঁটি’ বলেই পরিচিতি ছিল। কিন্তু, রাজ্যে পালাবদলের পর সমীকরণ পাল্টেছে। জেলার বিস্তীণর্র্ এলাকাই এখন তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণে। যদিও জেলার ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ২৭টিই সিপিএমের দখলে। ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যেও এক সময়ে ২২৩টিই সিপিএমের দখলে ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পর কয়েকটি পঞ্চায়েতে হাতবদল হয়েছে। এই অবস্থায় আগামী পঞ্চায়েত ভোটে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের অধিকাংশ আসনই নিজেদের দখলে আনতে মরিয়া তৃণমূল। এখন থেকেই সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এ জন্য শুরুতে মহকুমাস্তরে সম্মেলন ও পরে ব্লক ও বুথস্তরেও পঞ্চায়েত-সম্মেলন হবে।
কিন্তু জেলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব লেগেই রয়েছে। এই দ্বন্দ্বের কথা রাজ্য নেতৃত্বেরও অজানা নয়। বৃহস্পতিবারের সভাতেও উপদলীয় কাজকর্মের কথা ঘুরেফিরে আসে। জেলা সভাপতি দীনেন রায়, কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ-রা বলেন, “সকলকেই শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। কোনও রকম অন্যায়কে বরদাস্ত করা হবে না। উপদলীয় কাজকর্ম করলে শাস্তি পেতেই হবে।” জেলার বিভিন্ন এলাকাতেই অভিযোগ উঠেছে, ‘পুরনো’ কর্মীরা এখন সন্মান পাচ্ছেন না। ‘নব্য’ কর্মীরাই ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। অথচ, ক’মাস আগেও তাঁরা সিপিএমের সঙ্গে ছিলেন। সভায় অবশ্য রাজ্য সভাপতি বলেন, “কারও কারও মনে হচ্ছে অনেক দিন দল করেছি। এখন আমাকেই বোধহয় যুদ্ধ করে দলে থাকতে হবে। এই ধারণা ভুল। কেউ বঞ্চিত হবেন না। কর্মীরা যোগ্য সন্মান পাবেন।” সেই সঙ্গেই সুব্রতবাবুর বক্তব্য, “কর্মীদের কথা শুনতে হবে নেতাদের। না-হলে তাঁকে দল থেকে চলে যেতে হবে। মানুষের কথা না-শুনলে দলে থেকে লাভ কী? দল সকলের উপরেই নজর রেখেছে। ”
বস্তুত, পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলায় এসে নিজের বক্তব্যে এ দিন আগাগোড়াই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের উপরে উঠে সুশৃঙ্খল ভাবে এগোনোর বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সুব্রতবাবু। সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার হলে দল যে কখনওই তা মেনে নেবে না, সভায় তা-ও মনে করিয়ে দেন রাজ্য সভাপতি। তাঁর কথায়, “নিরাপত্তা চেয়েছেন বলেই মানুষ আমাদের জিতিয়েছেন। নিরাপত্তার বদলে মানুষের উপর অত্যাচার দল কখনওই মেনে নেবে না। সুশৃঙ্খল হয়ে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে আমাদের এগোতে হবে।” পঞ্চায়েত ভোটের আগে যেখানে যে স্তরেরই সভা হোক না-কেন, সেই সভায় সংশ্লিষ্ট এলাকার দলের বিভিন্ন শাখা সংগঠনগুলির পদাধিকারীদের ডাকতে হবে বলে জানিয়ে সুব্রতবাবু বলেন, “যে ডাকতে পারবে না, তার দলে থাকারও দরকার নেই।” সভা থেকেই জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ঘোষণা করেন, আগামী ২০ তারিখ দাসপুরে, ২২ তারিখ খাকুড়দায় ও ২৩ তারিখ জামবনিতে পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে মহকুমা-স্তরের সম্মেলন হবে। |
|
|
|
|
|