জয়দীপকে আটকাতে লবির খেলা, আশায় দুই পূর্বসুরি
দুই যুগ পরে অলিম্পিকের সিংহদরজায় বাঙালি শুটার
জুরিখ থেকে দেড় ঘণ্টার রাস্তা বুশউইল গ্রাম। সেখানে রাইফেল কিনতে চললেন নাগেরবাজারের এক বঙ্গসন্তান।
সুইজারল্যান্ডের অত্যাশ্চর্য সেই ছবির মতো গ্রাম রাইফেল কারখানার জন্য বিখ্যাত। যে রাইফেল তিনি কিনতে চান, ভারতীয় মুদ্রায় তার দাম প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা।
ওই সুইস রাইফেল দিয়ে কি বাঙালির স্বপ্ন পূরণ হবে?
আঠাশ বছর পরে কি খুলতে পারে বাঙালি তরুণ রাইফেলধারীর অলিম্পিক সিংহদরজা?
অলিম্পিকে প্রতিনিধি পাঠাতে নয়াদিল্লিতে চলছে লবির পরে লবি। বাঙালি শুটারের রাইফেল-রাজপথ আটকাতে নানা আইন কানুনের ফাঁক দেখছেন অনেকে।
নাগেরবাজার অমরপল্লির বত্রিশ বছরের জয়দীপ কর্মকারকে অত করেও আটকানো এ বার কঠিন। ভারতীয় শুটিং সংস্থার সাম্প্রতিকতম র্যাঙ্কিংয়ে জয়দীপ উঠে এলেন এক নম্বরে। যার অর্থ অলিম্পিক টিকিট।
দশ বছর বয়স থেকে বন্দুক চালাচ্ছেন জয়দীপ। সিডনি বিশ্বকাপে রুপো পেয়েছেন বেজিং অলিম্পিকে সোনাজয়ীর থেকেও বেশি পয়েন্ট পেয়ে। এখন তিনি আর এক নজিরের সামনে দাঁড়িয়ে। অলিম্পিক দল ঘোষণার এক সপ্তাহ আগে জয়দীপের গলায় লন্ডন অলিম্পিক নিয়েই প্রত্যাশার সুর।
বেলগাছিয়া শুটিং ক্লাবে নিয়মিত প্র্যাক্টিস করতে আসেন জয়দীপ। সম্প্রতি মা’র অসুস্থতার জন্য প্র্যাক্টিস ছিল বন্ধ। মা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরে জয়দীপের লক্ষ্য এখন একটাই। “মনে হচ্ছে, অলিম্পিকে যেতে পারব।” মিত্তল ফাউন্ডেশনের অনুদান পাওয়ায় এখন শুটিংয়ের মতো খরুচে খেলায় সমস্যা নেই জয়দীপের। তাঁর জন্য প্রথম থেকে স্পনসরের জন্য দৌড়োদৌড়ি করতেন কোচ স্বপন সান্যাল। তাঁর গলাতেও উচ্ছ্বাস। “শেষ পর্যন্ত বাঙালি পুরুষ শুটার আবার অলিম্পিকে!”
অলিম্পিকের প্রতীক্ষায়। বাড়িতে জয়দীপ। বৃহস্পতিবার। ছবি: উৎপল সরকার
চুরাশির অলিম্পিকে সোমা দত্তের (তিনি পরে আরও দু’বার যান) সঙ্গে গেছিলেন এক বঙ্গসন্তান ভগীরথ সামুই। এখন আসানসোলের কাছে দিশেরগড় পাওয়ার স্টেশনে সিকিউরিটি অফিসার। অলিম্পিকে সুযোগ পেলেও তদানীন্তন রাজ্য সরকার কিছুই করেনি ‘অর্জুন’ ভগীরথের জন্য। জয়দীপকে ছোট থেকেই দেখে আসা ভগীরথ বলছিলেন, “আমি তো চোর তাড়ানোর কাজেই পনেরো বছর কাজ করছি। সরকার পুরস্কার দেবে বলেছিল। ফাইল জমা দিয়েও লাভ হয়নি। কলকাতায় এত খেলা হয়, কেউ আমায় ডাকেও না। জয়দীপ আশা করি, গুরুত্ব পাবে। আমাদের মতো অবহেলা পাবে না।” বলছিলেন মেদিনীপুরের ছেলে ভগীরথ।
এত স্বপ্ন ও আশার মধ্যে বড় প্রশ্ন, জয়দীপের মিশন সফল হবে তো? দিল্লিতে ফোন করে জানা গেল, এখনও ভারতের এক নম্বর জয়দীপের অলিম্পিক টিকিট নিয়ে জটিলতা রয়েই গিয়েছে। সোজা হিসেব, তবু জটিলতা।
তাঁর ইভেন্ট ৫০ মিটার ফ্রি রাইফেল প্রোনে ভারতের জন্য ‘কোটা’ এনেছিলেন অন্য শুটার হরিওম সিংহ। তিনি আবার ক্রমপর্যায়ে তিন নম্বর, গগন নারাংয়ের সঙ্গে। হরিওম নিজে ভারতের ‘কোটা’ জোগাড় করেছেন বলে টিকিট চাইছেন। আবার সেনাবাহিনীর লবি চাইছে, ক্রমপর্যায়ে দু’নম্বর, সেনাকর্মী সুশীল ঘালেকে পাঠাতে। জয়দীপ যা শুনে শান্ত গলায় বললেন, “গত অলিম্পিকের পরেই কিন্তু নিয়ম হয়ে গিয়েছে, কেউ ‘কোটা’ জিতলে সেটা ব্যক্তিগত কারও হবে না। দেশের হবে। সেই বিচারে তো আমারই যাওয়ার কথা। বাংলার শুটিং সংস্থার কর্তারা বলছেন, আমি যাব।”
চল্লিশ বছর আগে মিউনিখ অলিম্পিকে ভারতের পতাকা বয়েছেন শুটার পরিমল চট্টোপাধ্যায়। চন্দননগরের অবসরপ্রাপ্ত রেল অফিসার এখন শুটার তৈরির কাজে ব্যস্ত। তাঁর মনে পড়ছে, হায়দরাবাদে এক টুর্নামেন্টে অভিনব বিন্দ্রাকে জয়দীপের হারানোর দৃশ্য। শুটিং নিয়ে মাঝেমাঝেই পরিমলের কাছে পরামর্শ নিয়েছেন জয়দীপ। এবং সব দেখেশুনে আবার উৎসাহ পাচ্ছেন চল্লিশ বছর আগের অলিম্পিয়ান শুটার, “খবরটা শুনে মনে হচ্ছে, বাঙালিরাও পারে। শুধু একটু সুযোগ পেলেই হল!”
বাংলার লিয়েন্ডার পেজ গত চার বারের মতোই থাকছেন অলিম্পিকে। হকি দলের অধিনায়ক, কালিম্পংয়ের ছেলে ভরত ছেত্রী লন্ডনে যেতে পারবেন কি না, তার পরীক্ষা ক’দিন পরে। টেবল টেনিসে পৌলমী ঘটক- মৌমা দাস-সৌম্যদীপ রায়দের অলিম্পিক টিকিটের পরীক্ষা এপ্রিলে। বরাহনগরের দুই তিরন্দাজ রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, অতনু দাসের ভাগ্য পরীক্ষা অলিম্পিকের ঠিক এক মাস আগে। অ্যাথলেটিক্সে বাংলার একমাত্র আশা সেই পুরনো মুখ সুস্মিতা সিংহরায়। অলিম্পিকের আগে তিনি তিন বার সুযোগ পাবেন ছাড়পত্র পাওয়ার। বাকি সব খেলা অন্ধকার।
জয়দীপ এই অন্ধকারে উজ্জ্বলতম আলো। আঠাশ বছর, ছটি অলিম্পিক পেরিয়ে এত দিনে হয়তো গেমসে আর এক জন বাঙালি তরুণ শুটার! রাজনীতি যদি পাথর না হয়ে দাঁড়ায়।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.