সম্পাদকীয় ২...
চাপ চলিবে না
লেজ শিক্ষকদের অবসরের বয়স কত হওয়া উচিত? প্রশ্নটি অকিঞ্চিৎকর নহে। কিন্তু, অবসরের বয়স এখনই ষাট হইতে বাড়াইয়া পঁয়ষট্টি না করা হইলে কর্মবিরতি পালন করা হইবে, এমন হুমকি অতি অবাঞ্ছিত, অনৈতিক। কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন ওয়েবকুটা এই হুমকিটি দিয়াছে। কর্মবিরতি এবং পথসভার মধ্যে যে চরিত্রগত ফারাক আছে, তর-তম ভেদ আছে, এই কথাটি বঙ্গীয় রাজনীতির ঘোলা জলে বহু কাল পূর্বেই নিমজ্জিত হইয়াছে। কিন্তু, স্বল্পশিক্ষিত শ্রমিকদের সংগঠন যেই কথাটি না-ও বুঝিতে পারে, কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন তাহা বুঝিতে ব্যর্থ হইবে কেন? কোন যুক্তিতে তাঁহারা কর্মবিরতির দাবি করিতেছেন? দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই এখন পশ্চিমবঙ্গের সমাজের অভিজ্ঞান। শিক্ষকরাও, দেখা গেল, সেই চলতি হাওয়ার পন্থী। অবিলম্বে এই হুমকি প্রত্যাহার করাই বিধেয়।
শিক্ষক সংগঠন যদি নিজেদের দায়িত্ব বুঝিতে ব্যর্থ হয়, তবে রাজ্য প্রশাসনের কর্তব্য, তাঁহাদের সেই কথাটি সম্যক রূপে স্মরণ করাইয়া দেওয়া। বুঝাইয়া দেওয়া, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ব্ল্যাকমেল-এর স্থান নাই। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই পথে হাঁটিতে সম্ভবত আগ্রহী নহে। চাপের নিকট নতিস্বীকার করিতে সরকার এক পা বাড়াইয়াই আছে। শিক্ষকদের অবসরের বয়স কত হইবে, তাহা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। বিভিন্ন দেশে অবসরের বয়স বিভিন্ন। অবসর গ্রহণের প্রকৃষ্ট বয়স ক্ষেত্রবিশেষে পৃথক ভাবে নির্ধারিত হওয়াই বাঞ্ছনীয়। দেখা প্রয়োজন, কত বয়স পর্যন্ত শিক্ষকরা সম্পূর্ণ কর্মক্ষম থাকেন। এই বিশদ আলোচনার একটি নির্দিষ্ট রূপ থাকে। বিশেষ করে, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এই সিদ্ধান্তটি রাজ্যবিশেষের ক্ষেত্রে পৃথক হওয়া অনুচিত। সমগ্র দেশেই যাহাতে এক ব্যবস্থা হয়, তাহার জন্য কেন্দ্রীয় স্তরে আলোচনার প্রয়োজন ছিল। প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। এবং, যথার্থ কারণেই সেই সময় দেওয়া প্রয়োজন। তাড়াহুড়ায় সিদ্ধান্ত করিলে ভ্রান্তির সম্ভাবনা বাড়ে। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভুল পথে চলিতেছে। শিক্ষামন্ত্রী জানাইয়াছেন, বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট আসিয়াছে, এখন বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর বিবেচনাধীন। আশঙ্কা হয়, প্রয়োজনীয় আলোচনা ছাড়াই হয়তো সিদ্ধান্ত হইবে।
অবশ্য, আলোচনার পথ কেন্দ্রীয় সরকারও বন্ধ করিয়া রাখিয়াছে। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রক জানাইয়াছে, অবিলম্বে অবসরের বয়স ষাট হইতে পঁয়ষট্টি না করিলে শিক্ষকদের বর্ধিত বেতনের বকেয়া টাকা দেওয়া হইবে না। মন্ত্রকটি কপিল সিব্বলের অধীন, এবং এই সিদ্ধান্তের কাণ্ডজ্ঞানহীনতায় মন্ত্রীর ছাপ স্পষ্ট। একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্রীয় সরকার যে উচ্চতর অবস্থানে নাই, রাজ্যগুলির উপর যথেচ্ছ দাদাগিরি করিবার অধিকার যে তাঁহাদের নাই, এই কথাটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা মাঝেমধ্যেই বিস্মৃত হন। সিব্বলও কথাটি ভুলিয়াছেন। অবসরের বয়সের সহিত বকেয়া বেতনের কী সম্পর্ক? ইহাও ব্ল্যাকমেল-এর পথ, এবং সমান নিন্দনীয়। কেন্দ্রের এই চাপের নিকট আত্মসমর্পণ করা মুখ্যমন্ত্রীর অনুচিত হইবে। তিনি স্পষ্ট ভাবে বলুন, এই অনধিকারচর্চাটি তিনি ভাল চোখে দেখিতেছেন না। কেন্দ্রের উচিত ছিল আলোচনার প্রক্রিয়াটি শুরু করা, বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে সচেষ্ট হওয়া। এই দায়িত্ব পালনে কেন্দ্র সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই ব্যর্থতাটি দেখাইয়া দেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষকদের অবসরের বয়স বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হউক, সব দিক বিচার করিয়া সিদ্ধান্ত করা হউক। কিন্তু শিক্ষক সংগঠন বা কেন্দ্রীয় সরকার, কোনও পক্ষের অন্যায্য চাপই মানিয়া লওয়ার কোনও প্রশ্ন নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.