অবশেষে সংশয়ের দোলাচল সরিয়ে গ্রিস নিয়ে আশার আলো দেখতে শুরু করল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সেই সঙ্গে কিছুটা হলেও স্বস্তির শ্বাস ফেলল সারা বিশ্ব। কারণ, দীর্ঘ টালবাহানার পর বৃহস্পতিবারই রাজনৈতিক বিরোধকে পাশে সরিয়ে রেখে ব্যয় সঙ্কোচ ও আর্থিক সংস্কারের শর্ত মেনে নিতে একমত হল গ্রিসের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে গ্রিস-সহ ইউরোপের আর্থিক সঙ্কট যে মিটে গেল তা নয়। কিন্তু এই শর্ত মানার দৌলতে এথেন্সের পক্ষে অনেকটাই সহজ হবে ১৩ হাজার কোটি ইউরোর ত্রাণ প্রকল্প হাতে পাওয়া। যা না-পেলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেউলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হত তারা। ফলে, এই রাজনৈতিক ঐকমত্য কিছুটা হলেও অক্সিজেন জোগাবে গ্রিক অর্থনীতিকে। অন্তত সময় দেবে ঘুরে দাঁড়ানোর। যা না-হলে ২০০৮ সালের মন্দার পুনরাবৃত্তি প্রায় সময়ের অপেক্ষা ছিল বলে আশঙ্কা করছিলেন অনেকে।
তবে এ দিনও ঐকমত্যে পৌঁছনোর ঘোষণা ছিল নাটকীয়তায় মোড়া। এর আগে বহু বার আলোচনার পরও এ নিয়ে একমত হতে পারেনি গ্রিসের রাজনৈতিক দলগুলি। এমনকী ত্রাণ প্রকল্পের অর্থ পেতে ইইউ এবং আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার জন্য এ দিন গ্রিক অর্থমন্ত্রী যখন ব্রাসেলসের বিমান ধরেন, ঐকমত্যে পৌঁছনো সম্ভব হয়নি তখনও। কিন্তু প্রায় শেষ মুহূর্তে ফ্রাঙ্কফুর্টের সাংবাদিক সম্মেলনে ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট মারিও দ্রাঘি জানান, “কয়েক মিনিট আগেই ফোন এসেছে গ্রিক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। শর্ত মানতে একমত হয়েছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি।” কিছু ক্ষণ পরে এই ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী লুকাস পাপাদেমস নিজেও।
অর্থনৈতিক ভাবে তিন বছর ধরেই গভীর সমস্যায় ইউরোপ। আর তা কাটিয়ে অদূর ভবিষ্যতে ইউরোপীয় অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাকে বার বারই প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে গ্রিসের এই আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার হতাশা। কারণ, দেউলিয়া ঘোষণা রুখতে তার ঋণের ৫০ শতাংশ মকুব করার শর্ত নিয়ে আলোচনা চলছে দীর্ঘ দিন ধরেই। ওই সব শর্তের উপর নির্ভর করছে তাদের ত্রাণ প্রকল্পের পরবর্তী কিস্তি পাওয়াও। কিন্তু বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের (যারা গ্রিসকে ঋণ দেবে) সঙ্গে গ্রিস-সরকারের ওই আলোচনায় মতানৈক্য ছিল বিস্তর। মতের ফারাক ছিল রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও। কারণ, ঋণদাতাদের শর্ত ছিল যে, এ জন্য ব্যয় সঙ্কোচের রাস্তায় হাঁটতে হবে এথেন্সকে। বন্ধ করতে হবে অপ্রয়োজনীয় খরচ। অনেকখানি কমাতে হবে সরকারি কর্মীদের বেতন এবং অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের অঙ্ক। প্রয়োজনে আয় বাড়াতে বসাতে হবে কর। হাঁটতে হবে আর্থিক সংস্কারের পথেও। যা মানতে রাজি ছিল না রাজনৈতিক দলগুলি।
তাই অনেকের আশঙ্কা ছিল, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঐকমত্যে না পৌঁছলে, ত্রাণ প্রকল্পের অর্থ পাবে না গ্রিস। ফলে দেউলিয়া ঘোষণায় বাধ্য হবে তারা। আর এক বার তা হলে, পথে বসবে বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বিশেষত সেই সব ব্যাঙ্ক, যারা ওই দেশকে ঋণ দিয়েছে। ডুববে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানও, যেখানে ওই ঋণ বিমা করে রেখেছে ব্যাঙ্কগুলি। সব মিলিয়ে ২০০৮ সালের মন্দার দিন ফের ফিরে আসার আশঙ্কা। তাই এ বার গ্রিস-সহ ইউরোপীয় অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সময় পেল বলে মনে করছেন অনেকে।
তবে এ দিনই সরকারি ব্যয় সঙ্কোচের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে কর্মী সংগঠনগুলি। শুক্র ও শনিবারে গ্রিস জুড়ে বনধে্র ডাক দিয়েছে তারা। |