বিনোদন মমতাকে ‘মা-মাটি-মানুষে’র গান
গেয়ে শোনাতে চান বৃদ্ধ খোকন

মতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মা-মাটি-মানুষের স্লোগান তুলছিলেন, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কটাক্ষ করে বলেছিলেন, এ যেন যাত্রাপালা।
আশির দশকে এ রাজ্যের গ্রাম-গঞ্জ মাতিয়ে রেখেছিল যে যাত্রাপালা, সত্যিই তার নাম ‘মা-মাটি-মানুষ’। মানুষের মুখে মুখে ফিরত সে পালার গান, ‘মা আমার মাটি আমার আমার মানুষ রে।’ শিল্পী ছিলেন খোকন বিশ্বাস। নটী বিনোদিনী, মা মাটি মানুষ, অচল পয়সা, গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম বিভিন্ন পালায় বিবেকের ভূমিকায় যাঁর গান আম জনতা থেকে শুরু করে ইন্দিরা গাঁধী এবং রবিশঙ্করকেও আপ্লুত করেছিল। রাজ্যে মা-মাটি-মানুষের সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু মা-মাটি-মানুষের শিল্পী আজও অবহেলার অন্ধকারে।
অথচ দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে তিনকড়ি ভট্টাচার্য, গুরুদাস ধাড়ার সঙ্গে বাংলার অন্যতম ‘বিবেক’ ছিলেন খোকন বিশ্বাস। জীবনের প্রথম অংশটা কেটেছিল বরিশালে। কলকাতার নট্ট কোম্পানির একটি শাখা ছিল সেখানে। সেই শশীভূষণ নট্ট কোম্পানিতেই হাতেখড়ি। তার পর এ পারে এসে ১৯৬৪ সালে যোগ দিলেন নট্ট কোম্পানিতে। প্রথম অভিনয় ‘পতিতের ভগবান’ পালায়। ১৯৭৩ সালে এল ‘নটী বিনোদিনী’। বিনোদিনীর ভূমিকায় বীণা দাশগুপ্ত। সেই পালায় দুর্গা সেনের সুরে গান গেয়ে বিপুল খ্যাতি পান খোকন। শিব যদি মা তোমার স্বামী, মন ভুলো না কথার ছলে, ন্যাংটা মায়ের ন্যাংটা খোকা মহাজাতি সদনে খোকনের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন রবিশঙ্কর। খোকন মনে করতে পারেন, আড়াই হাজার টাকা ‘নাইট’ দিয়ে শুরু করে বছর ঘুরতেই বিনোদিনীর বায়না পৌঁছেছিল ২৫-৩০ হাজার টাকায়। মাইক ছাড়াই ৫০-৬০ হাজার দর্শককে গান শোনাতে হত। ইন্দিরা গাঁধীর উদ্যোগে দিল্লিতে যে বিরাট যাত্রা উৎসব হয়েছিল, সেখানেও খোকনের গান উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পায়।
অনটনেই দিন কাটছে খোকন বিশ্বাসের।-নিজস্ব চিত্র
যাত্রার আসরে তখনও ঐতিহাসিক-পৌরাণিক পালারই জয়জয়কার। বাংলায় সামাজিক পালার সূত্রপাত কিন্তু মূলত ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘মা মাটি মানুষ’ দিয়েই। ১৯৮১-তে এই পালা থেকেই শুরু হল যাত্রায় মাইকের ব্যবহার। আর এই পালা থেকেই নট্ট কোম্পানিতে সুরকার হিসেবে যোগ দিলেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। দীর্ঘ ১২ বছর মানবেন্দ্রর সুরে গান গেয়েছেন খোকন। কাজ করেছেন অনিল বাগচি (করুণাসিন্ধু বিদ্যাসাগর) এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের (চিড়িয়াখানা) সঙ্গেও। উৎপল দত্ত বলতেন, ‘‘যাত্রার গান মানে বাউল ভাটিয়ালি নয়। বিবেকের কণ্ঠ শুনতে হলে যাও নট্ট’র খোকন বিশ্বাসের কাছে।’’ ৫০ টাকা মাস মাইনে থেকে শুরু করে এক সময় ১০ হাজার টাকা মাইনে পেতেন খোকন। ১৯৯১ সালে নট্ট কোম্পানি ছাড়তে হল। যাত্রাশিল্পে তখন ভাটার টান। তার পরেও অনেক দল ডেকেছিল। যাননি। গোবরডাঙার বাড়িতেই থাকেন। রাধামাধবের পুজো করেন, কীর্তন গান। ৭২ বছর বয়সেও খোকনের কণ্ঠ এখনও সজীব। অনায়াসে গেয়ে ওঠেন, ‘মন চল নিজ নিকেতনে।’
নট্ট কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং মাখনলাল নট্ট গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছেন উত্তর কলকাতার বাড়িতে। নট্ট কোম্পানির ‘বিবেক’ অনটনে কাটাচ্ছেন। বাম আমলে কয়েক বার দুঃস্থ শিল্পীদের মাসোহারার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিছুই হয়নি। সরকারি সাহায্য বা সম্মান কিছুই পাননি। এমনকী ফণিভূষণ বিদ্যাবিনোদ মঞ্চের উদ্বোধন অনুষ্ঠানেও ডাক পাননি খোকন। এলাকার বাসিন্দা, স্থানীয় নাট্যদলের পরিচালক আশিস চট্টোপাধ্যায় উদ্যোগী হচ্ছেন কিছু করার জন্য। বললেন, ‘‘আগের সরকারকে বলে তো কোন লাভ হয়নি। এ বার মা মাটি মানুষের সরকারের কাছে আবেদন জানাব।” যাত্রা আকাদেমির যুগ্মসচিব পল্লব মুখোপাধ্যায় বললেন, “আবেদন পেলে অবশ্যই সাহায্য করার চেষ্টা করব আমরা।”
এক সময় গ্রামের মানুষ মাঠে কাজ করতে করতে গেয়ে উঠতেন ‘মা মাটি মানুষে’র গান। কোন দিন ভেবেছিলেন সেটা এত বড় রাজনৈতিক স্লোগান হবে? খোকন বলেন, ‘‘না ভাবিনি। এখন দেখে খুব
ভাল লাগে। খুব আনন্দ হয়।’’ সেই সঙ্গে দানা বাঁধে একটা স্বপ্ন। ‘‘শুনেছি মুখ্যমন্ত্রী গান খুব ভালবাসেন। একটা দিন ওঁকে গান শোনাতে খুব ইচ্ছে করে। মা মাটি মানুষের গান।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.