যে কোনও মুহূর্তে গ্রেফতার করা হতে পারে মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাসিদকে। বিক্ষোভ, অবরোধ, সংঘর্ষের মধ্যেই দেশের একটি দায়রা আদালত মহম্মদ নাসিদ এবং দেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। আর দেশে নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নাসিদের স্ত্রী এবং মেয়েকে কলম্বোয় উড়িয়ে আনা হয়েছে বলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে মলদ্বীপের সঙ্কট ক্রমেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে। আর পড়শি রাষ্ট্রটির রাজনৈতিক অচলাবস্থায় যথেষ্ট ‘উদ্বিগ্ন’ ভারত। |
মলদ্বীপের পরিস্থিতি নিয়ে আজই নয়াদিল্লিতে একটি বৈঠকে বসেন সাউথ ব্লকের কর্তারা। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নাসিদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে বিরোধী নেতার ভূমিকা পালন করার পর ক্ষমতায় আসেন তিনি। দীর্ঘদিন বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় কিছুটা একরোখা এবং একগুঁয়ে চরিত্রের হয়ে যান নাসিদ। ক্ষমতায় আসার পরেও তাঁর এই চরিত্রের পরিবর্তন ঘটেনি। বিগত কয়েক বছরে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট একের পর এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা মলদ্বীপের পর্যটক-নির্ভর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তাঁর এই একরোখা, একগুঁয়ে মনোভাবের জন্যই তাঁকে সরতে হয়েছে বলে মনে করছেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা।
কিন্তু অবস্থানগত কারণে ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রটির শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকা ভারতের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভারত-বন্ধু কোনও প্রেসিডেন্ট সে দেশের ক্ষমতায় থাকুন, এমনটাই চায় দিল্লি। কিন্তু নাসিদ গ্রেফতার হলে পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই বিদেশ মন্ত্রক চাইছে নাসিদ নিজের পথ থেকে কিছুটা সরে এসে সামান্য নমনীয় হয়ে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে অবিলম্বে আলোচনা শুরু করুন। |
দেশে অশান্তি ছড়ানোর জন্য আজ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর সমর্থকদেরই দায়ী করেছে মলদ্বীপ প্রশাসন। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে নাসিদ-সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ৮০ জন। দেশের ১৮টি থানা এবং বেশ কিছু আদালত চত্বরে ভাঙচুর চালিয়েছে নাসিদের সমর্থকেরা। রাজধানী মালে শহরে মারমুখী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। একটি টিভি চ্যানেল দাবি করেছে, সভা চলাকালীন কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটলে সমর্থকদের সঙ্গে আহত হন নাসিদও। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আপাতত রাজধানীতে নিজের বাড়িতেই রয়েছেন। তাঁর বাড়ির সামনে প্রায় দু’শোরও বেশি সমর্থক জড়ো হয়েছেন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে নাসিদ বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, দেশের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে আমিই প্রথম যাঁকে সারা জীবন জেলে থাকতে হবে।” মলদ্বীপের পরিস্থিতির উপর আন্তর্জাতিক মহল নজর রাখছে বলে তিনি আশাবাদী। তাই তাঁর আশা, তাঁকে জেলে ধরে রাখার চেষ্টা করা হলে নিশ্চয় এই দ্বীপরাষ্ট্রটির উপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াবে। ক্রমেই বেড়ে চলা হিংসা ঠেকাতে মরিয়া নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ ওয়াহিদ হাসান এ দিন মন্ত্রিসভায় দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ দু’জনকে স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদে বসান তিনি।
এরই মধ্যে, মলদ্বীপের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে মার্কিন বিদেশ দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সচিব রবার্ট ব্লেক খুব শীঘ্রই সে দেশে যাবেন বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। |