গত রেল বাজেটে প্রস্তাবিত রাধিকাপুর-নিউ জলপাইগুড়ি ডিএমইউ ট্রেন চালুর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ মহকুমার বাসিন্দাদের মধ্যে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১১ ফ্রেব্রুয়ারি দুপুর দেড়টায় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ওই ট্রেনের উদ্বোধন করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১০ মাস ধরে ওই ট্রেন চালুর দাবিতে রায়গঞ্জ মহকুমা জুড়ে আন্দোলন করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী সংগঠন, রেলযাত্রী ও নাগরিক সমিতি-সহ একাধিক সংগঠন। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম ভূষণ পটেল বলেন, “ট্রেন চালুর প্রস্তুতি আপাতত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ১১ ফ্রেব্রুয়ারি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ওই ট্রেনের উদ্বোধন হবে।” রেল সূত্রের খবর, মোট ৮ কোচের রাধিকাপুর-নিউ জলপাইগুড়ি ডিএমইউ ট্রেনটি সপ্তাহে ৬ দিন যাতায়াত করবে। রাধিকাপুর স্টেশন থেকে রবিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৬ টায় ছেড়ে ট্রেনটি বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছবে। অন্যদিকে, শনিবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল সওয়া ৫ টায় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ছেড়ে ট্রেনটি রাত ১০টা ৫০ মিনিটে রাধিকাপুর স্টেশনে পৌঁছবে। যাতায়াতের পথে ট্রেনটি ডালিমগাঁও, কালিয়াগঞ্জ, বাঙালবাড়ি, বামনগাঁওহল্ট, রায়গঞ্জ, ঝিটকিয়া হল্ট, কাচনা, দাচনা, বারসই, কিসানগঞ্জ, আলুয়াবাড়ি রোড, পোথিয়া, ভাইরাদপুর, ঠাকুরগঞ্জ, পিপরি থানা হল্ট, গলগলিয়া, অধিকারী, বাতাসি হল্ট, নকশালবাড়ি, বাগডোগড়া, মাটিগাড়া হল্ট, শিলিগুড়ি জংশন ও শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনে স্টপ দিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি ও রাধিকাপুর স্টেশনে পৌঁছবে। রায়গঞ্জ মহকুমার সঙ্গে শিলিগুড়ি হয়ে নিউ জলপাইগুড়ির রেল যোগাযোগ এতদিন ছিল না। মহকুমার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের রায়গঞ্জ থেকে বাসে চড়ে শিলিগুড়ি যেতে হত। রায়গঞ্জ থেকে বাসে ১৮৭ কিমি দূরের শিলিগুড়ি যেতে সাড়ে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বেহাল হয়ে পড়া এবং যানজটের জেরে শিলিগুড়ি যেতে ১০ ঘন্টারও বেশি সময় লেগে যায়। ২০১১ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় রেলবাজেটে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাধিকাপুর নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন চালুর কথা ঘোষণা করেন। ট্রেন চালুর খবরে খুশি রায়গঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত জানান, সরকারি ভাবে তাঁকে রাধিকাপুর নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন চালুর বিষয়ে জানানো হয়নি। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ বলেন, “রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জেরেই ট্রেনটি ঘোষণার এক বছর পর চালু হতে চলেছে বলে খবর পেয়েছি। ট্রেন চালু হওয়ায় খুশি।” রেলযাত্রী ও নাগরিক সমিতির সম্পাদক তপন চৌধুরী জানান, ট্রেন চালু হলে সংগঠনের তরফে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে ধন্যবাদ বার্তা পাঠানো হবে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অপূর্ব পাল বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের নানা কাজকর্মের সমালোচনা করলেও ট্রেন চালু হলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।” রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যসোসিয়েশনের সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ী ও ওয়েস্ট দিনাজপুর চেম্বার অফ কমার্সের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর কুন্ডু জানান, ট্রেন চালুর দাবিতে আন্দোলন সার্থক হয়েছে। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অরিন্দম সরকার বলেন, “প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে অপপ্রচার চালাতে রাধিকাপুর-নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন চালু হবে না বলে মহকুমার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রচার চালাচ্ছিলেন। তাঁরা জবাব পেলেন।” |