তেলের ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় বাইক আরোহী এক যুবকের মৃত্যুকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল শিলিগুড়ি লাগোয়া বাড়িভাসা এলাকায়। বুধবার দুপুরে এনজেপি ফাঁড়ির ওই এলাকার ভিআইপি রোডে ঘটনাটি ঘটেছে। বাইকে ওই যুবকের সঙ্গে তাঁর পরিচিত এক তরুণীও ছিলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবকের নাম অনিকেত সরকার (২৭)। তাঁর বাড়ি শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ায়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি পেশায় জ্যোতিষী ছিলেন। জখম তরুণী মৌমিতা ধারার বাড়ি রাজগঞ্জের দেশবন্ধুপাড়া এলাকায়। ইগনুতে তিনি স্নাতক স্তরে পড়াশুনো করেন। |
ঘটনার পর এলাকার উত্তেজিত জনতা ৩টি ট্যাঙ্কার এবং ৪টি ট্রাক ভাঙচুর করেন। বাসিন্দারা মৃতদেহ আটকে রেখে ইস্টার্ন বাইপাস যাওয়ার ওই রাস্তা প্রায় দেড়ঘন্টা অবরোধ করে রাখেন। ট্যাঙ্কারের চালক গাড়িটি নিয়ে এনজেপি ফাঁড়িতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্তোষ পান্ডে বলেন, “গোলমালের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য এনজেপি ফাঁড়িকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” বাসিন্দাদের অভিযোগ, ইস্টার্ন বাইপাস হয়ে ওই রাস্তা দিয়ে এনজেপি এলাকায় ট্রাক, ট্যাঙ্কার, পিকআপ ভ্যান বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। পুলিশ গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে কোনও সঠিক ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। গত সপ্তাহেই ট্রাকের ধাক্কায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এর কিছুদিন আগে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী স্কুল যাওয়ার সময় ট্রাকে চাপা পড়ে। ওই রাস্তায় কোনও ‘বাম্পার’ বা গতিরোধক নেই। পুলিশ কয়েকটি ব্যারিকেড বসালেও বর্তমানে সেগুলি নেই। সমস্ত কিছুর সুষ্ঠু ব্যবস্থা না করা অবধি অবরোধ তোলা হবে না বলে বাসিন্দারা জানিয়ে দেন। |
তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা পুরসভার ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা গিয়ে বাসিন্দাদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন। ডেপুটি মেয়র বলেন, “পুলিশকে ওই এলাকায় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে কড়া হতে হবে। আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলব। সমস্ত পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা হবে।” বাড়িভাসার ওই এলাকাটি জলপাইগুড়ি জেলার ডাবগ্রাম (২) পঞ্চায়েত এলাকার অন্তগর্ত। এলাকাটি শিলিগুড়ি পুর এলাকা লাগোয়া। ইস্টার্ন বাইপাস থেকে কম সময়ে এনজেপি এলাকায় যাতায়াতের জন্য ভিআইপি রোডে অধিকাংশ গাড়ি যাতায়াত করে। ইন্ডিয়ান অয়েল, খাদ্য নিগমের গুদাম থাকায় দিনরাত ওই রাস্তায় ট্রাক, ট্যাঙ্কার চলাচল করে। অনিকেত এনজেপি’র দিক থেকে সাদা রঙের বাইকটি নিয়ে বাইপাসের দিকে যাচ্ছিলেন। পিছনে ওই তরুণী বসেছিলেন। ভিআইপি রোডের ভবেশ মোড়ে উল্টো দিক থেকে আসা ট্যাঙ্কারটির সঙ্গে বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। অনিকেত এবং ওই তরুণী ছিটকে রাস্তায় পড়েন। ঘটনার পর ওই তরুণীকে বাসিন্দারাই উদ্ধার করে শিলিগুড়ি হাসপাতালে পাঠান। তিনি অনিকেতের সঙ্গে কিছু প্রয়োজনীয় বইপত্র আনতে এক পরিচিতের বাড়ি যাচ্ছিলেন বলে তাঁর কাকিমা নমিতা ধারা জানিয়েছেন। অনিকেতের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে তাঁর পরিচয় জানা যায়। অনিকেতের বাবা রবীন্দ্রনাথবাবু সামরিক বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চাকরি করেন। খবর পেয়েই তাঁদের বাড়িতে যান স্থানীয় কংগ্রেস কাউন্সিলর সুজয় ঘটক। সুজয়বাবু বলেন, “মর্মান্তিক ঘটনা। ইস্টার্ন বাইপাসের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে।” |
বুধবার ছবি দু’টি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক। |