উদ্ধার হওয়া যে সদ্যোজাতের থাকার কথা ছিল সরকারি হোমে, হাসপাতালের ‘ভুলে’ সেই শিশুকে বাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন ‘উদ্বারকারী’ দম্পতি। শেষ পর্যন্ত সেই দম্পতির বাড়ি থেকে মঙ্গলবার রাতে শিশুটিকে উদ্ধার করেছে জেলা শিশু কল্যাণ সমিতি।
ঘটনাটি পুরুলিয়ার। জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে দিন কুড়ির শুভশ্রীকে। আবার শিশুটি কোলছাড়া হওয়ায় মানসিক কষ্টে ভুগছেন ওই নিঃসন্তান দম্পতি। শিশুটিকে ফিরে পাওয়ার জন্য তাঁরা সমিতির কাছে এ দিন মৌখিক ভাবে আবেদনও জানান। পুলিশ ও সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৯ জানুয়ারি সাঁতুড়ি থানার বাগালবেড়িয়া গ্রামে রাস্তার পাশ থেকে ওই সদ্যোজাতকে উদ্ধার করেন গ্রামের আদিবাসী দম্পতি সুনীল হাঁসদা ও তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীদেবী। পুলিশের হস্তক্ষেপে শিশুটিকে ভর্তি করানো হয় সাঁতুড়ি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। পুলিশ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তরফে অজ্ঞাতপরিচয় শিশু উদ্ধারের ঘটনা শিশুকল্যাণ সমিতিকে জানানো হয়েছিল।
ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের শিশুটির চিকিৎসা ঠিকমতো সম্ভব নয় বলে তাকে ভর্তি করানো হয় রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালে। ২৫ জানুয়ারি শিশুটিকে সেখান থেকে ‘রেফার’ করা হয় পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। রেফার করার নথিতে ভুল করে রঘুনাথপুর হাসপাতাল অজ্ঞাতপরিচয় লেখার বদলে প্রযত্নে ওই দম্পতির নাম উল্লেখ করেছিল। শিশুকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অমিতা মিত্র বলেন, “রঘুনাথপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুধু নথিতেই ভুল করেছেন, এমন নয়। নিয়ম অনুযায়ী অজ্ঞাতপরিচয় শিশুকে রেফার করার আগে সমিতিকে তা জানানোর কথা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা করেননি।” রঘুনাথপুর হাসপাতালের সুপার সুভাষচন্দ্র ঘাটা বলেন, “কেন এমন ভুল হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |
অন্য দিকে, রঘুনাথপুর হাসপাতালের পাঠানো নথিতে ‘অভিভাবকের’ নাম দেখে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার পরে শিশুটিকে হাঁসদা দম্পতির হাতেই তুলে দেন। শিশুটিকে নিয়ে বাগালবেড়িয়ায় নিজেদের বাড়ি চলে যান ওই দম্পতি। দিন ১০-১২ সেখানেই শিশুটির লালনপালন করছিলেন তাঁরা। নাম রাখেন শুভশ্রী। ইতিমধ্যে শিশুটির খোঁজখবর শুরু করে শিশুকল্যাণ সমিতি। হাসপাতালে খোঁজ না পেয়ে পুলিশের সাহায্যে সমিতি শেষ পর্যন্ত শিশুটির হদিস পায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অমিতাদেবী বাগালবেড়িয়ায় গিয়ে শিশুটিকে নিয়ে আসেন। তবে ‘মেয়েকে’ কাছছাড়া করতে না চেয়ে সদর হাসপাতালে চলে আসেন লক্ষ্মীদেবীও। অমিতাদেবী জানান, আপাতত পর্যবেক্ষণের জন্য শিশুটিকে সদর হাসপাতালেই রাখা হয়েছে। পরে নিয়ম অনুসারে হোমে পাঠানো হবে। আদিবাসী দম্পতির আবেদনের প্রেক্ষিতে অমিতাদেবী বলেন, “মানবিকতার দিক থেকে আবেদনের যৌক্তিকতা যথেষ্ট। কিন্তু আইন অনুযায়ী শিশুটিকে পেতে গেলে ওই দম্পতিকে আবেদন করে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।”
এক দিকে, নিয়মের জাঁতাকল, অন্য দিকে অপত্য স্নেহ— দুইয়ের মাঝে পড়ে কিছুটা দিশাহারাই হয়ে পড়েছেন হাঁসদা দম্পতি। |