বাড়িতে যায়নি লাইন,
জল মেলে পাইপ ফুটো করেই

পানীয় জলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই ভুক্তভোগী পূর্বস্থলীর দু’টি ব্লকের বাসিন্দারা। আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা বা বিশুদ্ধ পানীয় জল, কোনওটাই ঠিক মতো মেলে না।
বিশুদ্ধ জলের দাবিতে পূর্বস্থলীতে বাসিন্দারা গড়ে তুলেছিলেন ‘জেলা আর্সেনিক প্রতিরোধ ও প্রতিবিধান কমিটি’। বিশুদ্ধ জলের জন্য গ্রামে গ্রামে তৈরি হয় কিছু কুয়ো। এই কমিটির আন্দোলনে নড়েচড়ে বসে প্রশাসনও। মাদ্রা-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তৈরি হয় জনস্বাস্থ্য কারিগরির প্রকল্প। কিন্তু স্থানীয় মানুষজনের দাবি, জনস্বাস্থ্য কারিগরি প্রকল্পের বিশুদ্ধ জল এক-একটি পঞ্চায়েত এলাকার সবাইকে পরিষেবা দিতে পারেনি। শ্রীরামপুর-সহ বেশ কিছু পঞ্চায়েত এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরির জল ধরে রাখার রিজার্ভারই নেই। ফলে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলে তবেই জল মেলে। ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে পড়লে বাসিন্দাদের ভরসা হয়ে দাঁড়ায় সেই মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক মিশে থাকা টিউবওয়েলের জল।
পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দোগাছিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান প্রণব রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এলাকায় বাড়ি বাড়ি জনস্বাস্থ্য কারিগরির জলের লাইন নেওয়ার জন্য আগ্রহ থাকলেও এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে অনেকেই প্রকল্পের পাইপ ফুটো করে জল সংগ্রহ করেন। তা বেআইনি। তবু মানুষের প্রয়োজনের স্বার্থে কিছু করা যায় না।’
পূর্বস্থলী-২ ব্লকের কল্যাণপুর গ্রামে আর্সেনিকের বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনের পরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর একটি পরিকল্পনা হাতে নেয়। এলাকার কোমলনগর গ্রামে ভাগীরথীর জলকে দূষণমুক্ত করে ৬৪টি মৌজায় সরবরাহ করা। পরীক্ষামূলক ভাবে কিছু এলাকায় এই প্রকল্পের জল বণ্টন চালু হলেও এখনও তা পূর্ণাঙ্গ আকারে শুরু করার ক্ষেত্রে রয়েছে নানা সমস্যা।
জেলা আর্সেনিক প্রতিরোধ ও প্রতিবিধান কমিটির তত্ত্বাবধানে আর্সেনিক নিয়ে বেশ কয়েকটি আলোচনা চক্র হয়েছে। সেখানে প্রতি বারই চিকিৎসকেরা বিশুদ্ধ পানীয় জল বিলির উপরে জোর দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের নিদান, ভূগর্ভের উপরিভাগের জলকে বিশুদ্ধ করে বেশি মাত্রায় ব্যবহার করা প্রয়োজন। কিন্তু পূর্বস্থলী ১ ব্লকে মাত্র এক জায়গাতেই এই কাজ হয়েছে। বাঁশদহ বিলের পাড়ে কোবলা গ্রামের এই প্রকল্পে প্রথমে পাইপের মাধ্যমে নদীর জল তুলে আনা হয় একটি ট্যাঙ্কে। ওই ট্যাঙ্কের মধ্যেই জল শোধন করে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়। স্থানীয় শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের দাবি, বড়কোবলা, ছোটকোবলা-সহ তিন গ্রামের বাসিন্দারা গত পাঁচ বছর ধরে ওই জল পান করে সুস্থ রয়েছেন। পূর্বস্থলী ১ ব্লকে ভাগীরথী ছাড়াও রয়েছে বাঁশদহ বিল, চাঁদের বিল ইত্যাদি কিছু জলাশয়। ভূগর্ভের উপরিভাগের জল ব্যবহারের উপযোগী করে বিলি করার কাজ এলাকায় যে বিশেষ এগোয়নি, তা স্বীকার করেছেন আর্সেনিক প্রতিরোধ এবং প্রতিবিধান কমিটির সম্পাদক তথা পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন, “বহু দিন ধরেই এলাকায় এই ধরনের আরও প্রকল্প গড়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে আনার চেষ্টা শুরু হয়েছে।”
আর্সেনিক প্রতিরোধ ও প্রতিবিধান কমিটির সভাপতি তথা সমুদ্রগড় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেবাশিস নাগের মতে, ভূগর্ভের উপরিভাগের জল ব্যবহারের পাশাপাশি সেই জল যাতে যথেচ্ছ ব্যবহার না করা হয়, সে দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। তাঁর বক্তব্য, “সব্জি-সহ বেশ কিছু চাষে পূর্বস্থলীর দু’টি ব্লকে প্রচুর পরিমাণে ভূগর্ভের জল তোলা হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, মাটির তলার জল যত বেশি তোলা হবে, ততই আর্সেনিকের প্রকোপ বাড়বে। তাই এই বিষয়টিতে সতর্ক থাকতে হবে প্রশাসনকে।”
শুধু বিশুদ্ধ জল সরবরাহ নয়, সমস্যা রয়েছে আর্সেনিকোসিস আক্রান্তদের চিকিৎসা পরিকাঠামো নিয়েও। প্রচারের অভাবে এই রোগ ছোঁয়াচে বলেও ভ্রান্ত ধারণা রয়ে গিয়েছে অনেকের মধ্যেই। আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য উপযুক্তও নেই পূর্বস্থলীর দু’টি ব্লকেই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ ব্যাপারেও উদাসীন প্রশাসন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.