নিজস্ব সংবাদদাতা • মালবাজার |
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের ঠিক মুখে ফের আন্দোলনের হুমকি দিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। বুধবার ডুয়ার্সের মালবাজারে শিপচু-কাণ্ডের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ জানান, মোর্চার দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠনের ছাড়পত্র না-মিললে ওই চুক্তিপত্র পোড়ানোর পরে এপ্রিলে আন্দোলনে নামবেন তাঁরা। গুরুঙ্গ বলেন, “জিটিএ চুক্তি কার্যকর করার জন্য রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে আমরা ২৭ মার্চ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছি। এর মধ্যে তা গঠনের ছাড়পত্র চাই। ওই সময়ের মধ্যে জিটিএ ছাড়পত্র না-পেলে আমরা কিছু দিন টানা পাহাড়ে ঘুরে রণনীতি তৈরি করব। তার পরে ১৭ এপ্রিল জিটিএ চুক্তির কপি পুড়িয়ে আলাদা গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে শেষ লড়াই করবে।” আগামীকাল, ১০ ফেব্রুয়ারি উত্তরবঙ্গ উৎসবের উদ্বোধন করতে শিলিগুড়ি আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সময়তেই মোর্চার তরফে এমন হুমকি দেওয়া হল কেন? গুরুঙ্গ এই দিন অভিযোগ করেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করছি না। কিন্তু, চুক্তি রূপায়ণের ব্যাপারে গত ৬ মাস ধরে কেন কিছু করা হল না? এত ঘটা করে যে চুক্তি হল, সেটা বাস্তবায়িত হচ্ছে না কেন? জিটিএ-তে তরাই ও ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তির দাবি খতিয়ে দেখতে কমিটি গড়া ছাড়া গত ৬ মাসে রাজ্য সরকার কিছুই করেনি। ১৭ এপ্রিল থেকে যে আন্দোলন শুরু হবে, তার জন্য রাজ্য সরকারই দায়ী থাকবে।” |
জনসভায় বিমল গুরুঙ্গ। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক |
তবে মোর্চার একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের তরফে জিটিএ বিল পাস করিয়ে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হলেও সেখানে ছাড়পত্র মেলার প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে। মোর্চার আন্দোলনের হুমকিতে ফের পাহাড়ে অশান্তি ছড়াতে পারে, এই আশঙ্কা সামনে রেখে কেন্দ্রের উপরে রাজ্যও জিটিএ নিয়ে চাপ বাড়াতে পারবে বলে দলের নেতাদের একাংশ মনে করেন। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানান, জিটিএ গঠনে দেরির বিষয়টিকে মোর্চা বিরোধী দলগুলি যাতে হাতিয়ার
করতে না-পারে, সেটা তাঁদের
মাথায় রাখতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে শিলিগুড়ি সফরে প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে জিটিএ গঠনের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী যাতে বার্তা দেন, সেটাও গুরুঙ্গ নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন বলে মোর্চার ওই প্রবীণ নেতার অভিমত।
মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বলেন, “আমরা চাই শিলিগুড়ির মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জিটিএ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলুন। দেখা যাক কী হয়!” প্রসঙ্গত, জিটিএ চুক্তি রূপায়ণের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের ভুমিকা জানিয়ে সম্প্রতি রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন মোর্চা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে রাজ্যপাল জানান, জিটিএ গঠনের বিষয়টি এখন দিল্লির হাতে। মোর্চা সূত্রের খবর, ১৩ মার্চ মোর্চার একটি প্রতিনিধি দল কলকাতায় যাবেন। সেখানে আদিবাসী
বিকাশ পরিষদের বহিষ্কৃত নেতা জন বার্লাও থাকবেন বলে মোর্চার এক নেতা জানান।
এদিকে, একই সময়ে জিটিএ-র বিরোধিতা করে তরাই ও ডুয়ার্সে লাগাতার আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়ে আদিবাসী বিকাশ পরিষদও। পরিষদের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকি জানিয়েছেন, ১৩-১৯ ফেব্রুয়ারি ডুয়ার্সে সাইকেল র্যালি এবং মার্চ মাস থেকে জিটিএ চুক্তির বিরোধিতা করে লাগাতার আন্দোলনে নামবেন তাঁরা।
গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি মোর্চার পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে শিপ চুতে গোলমাল হয়। পুলিশের গুলিতে ৩ মোর্চা সমর্থক মারা যান। ওই ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এদিন শিপচুতে আয়োজিত ওই সভায় মোর্চার প্রথম সারির নেতা হরকা বাহাদুর ছেত্রী, রোশন গিরি, বিনয় তামাং, পি অর্জুন ছাড়াও আদিবাসী বিকাশ পরিষদের বহিষ্কৃত নেতা জন বার্লাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে মোর্চা সভাপতি অভিযোগ করেন, ছত্রে সুব্বার মুক্তির পরে তাঁর অনুগামীরা পাহাড়ে, জঙ্গলে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এদিন মোর্চার জনসভা উপলক্ষে ওই এলাকায় জঙ্গলের মধ্যেই তারস্বরে মাইক বাজানো হয় বলে অভিযোগ। রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন জানান, তাঁরা মোর্চাকে জনসভার অনুমতি দেননি। জনসভার অনুমতির ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। |