|
|
|
|
মাওবাদী হামলা |
নিহতদের পরিবারের তথ্য-সংগ্রহ শুরু |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
মাওবাদী হামলায় নিহতদের পরিবারের বিস্তারিত তথ্য-সংগ্রহ শুরু করেছে সরকার। বর্তমানে এককালীন ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই নিহত যিনি হয়েছেন, তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। তাঁর মৃত্যুর পরে এককালীন ক্ষতিপূরণ সংসারের ভবিষ্যৎ-সুরক্ষায় পর্যাপ্ত নয় বলেই নানা মহলের মত। এই প্রেক্ষিতেই ভবিষ্যতে পরিবারগুলির জন্য আরও কোনও রকম সহায়তার ব্যবস্থা করা যায় কি না, সে নিয়ে সরাকরি-স্তরেও চিন্তাভাবনা চলছে। আর সে কারণেই এখন থেকে পরিবারগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে রাখতে চাইছে প্রশাসন। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠীর বক্তব্য, “মাওবাদী হামলায় নিহতদের পরিবার-সংক্রান্ত সমস্ত নথি-সংগ্রহ করতে বলেছে সরকার। আমরা তা করছি। শীঘ্রই প্রতিটি পরিবার নিয়ে তৈরি করা তথ্যপঞ্জি সরকারের কাছে পাঠানো হবে।”
পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াজঙ্গলমহলের তিন জেলায় মাওবাদী হামলায় গত কয়েক বছরে কয়েকশো মানুষ নিহত হয়েছেন। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরেই সংখ্যাটা ৩২৫। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়াতেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছিল আগেই। ২০০৯ সালের ২১ জুনের পর যাঁরা মাওবাদী হামলার শিকার হবেন, তাঁদের পরিবারের জন্য ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। পশ্চিম মেদিনীপুরে কয়েক জন নিহতের পরিবার ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সাহায্যের টাকা পেয়েওছেন। রাজ্য সরকার প্রথমে নিহতদের পরিবারের জন্য এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছিল। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে নিহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বাড়িয়ে ২ লক্ষ টাকা করা হয়। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, আগে নিহতদের পরিবারকে এক লক্ষ টাকাই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। ২০১১-র এপ্রিলের পরে নিহতদের পরিজনেরাই ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাবেন। রাজ্য সরকার তাদের প্রদেয় ক্ষতিপূরণের টাকা দিতেও শুরু করেছে সম্প্রতি। জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, প্রায় দেড়শো জন নিহতের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের টাকা এসেছে। রবিবার গোয়ালতোড়, সোমবার শালবনি, মঙ্গলবার মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে শিবির করে বেশ কয়েক জন নিহতের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণের চেক তুলেও দেওয়া হয়েছে।
এই সাহায্যের পাশাপাশিই রাজ্য সরকারের নির্দেশে নিহতদের পরিবার সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য-সংগ্রহও শুরু করেছে পুলিশ। নিহতের নাম-ঠিকানা, কোন পেশায় ছিলেন, পরিবার কী ভাবে চলছে, যোগ্য উত্তরাধিকারী কে--স্ত্রী না ছেলে--তিনি কোনও পেশায় জড়িত কি না, শিক্ষাগত যোগ্যতা কী, কৃষি-জমি রয়েছে কি না, কী ধরনের কাজে তাঁর আগ্রহ--এ সব তথ্যই সংগ্রহ করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাওবাদী হামলায় নিহতদের উত্তরাধিকারীর জন্য এককালীন ক্ষতিপূরণের অতিরিক্ত ভবিষ্যতে সরকারি-স্তরে অন্য রকম সাহায্যের পরিকল্পনাও হতে পারে। এ কারণেই এই বিস্তারিত তথ্য-সংগ্রহের উদ্যোগ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসের মধ্যেই তিন জেলা থেকে ‘তথ্যপঞ্জি’ রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। |
|
|
|
|
|