|
|
|
|
তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’কে দুষছে দল |
গ্রামের মানুষ ব্রিগেডে আসবেন কি, চিন্তা সিপিএমে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
যে ব্রিগেড সমাবেশকে পঞ্চায়েত ভোটের ‘প্রস্তুতি’ হিসেবে কাজে লাগাতে চায় সিপিএম, সেখানেই গ্রামের মানুষের যোগদান নিয়ে ‘সংশয়ে’ আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’ উপেক্ষা করে সমাবেশে গ্রামের মানুষ আসবেন কি না, সংশয় তা নিয়েই। এই পরিস্থিতিতে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারির ব্রিগেড ভরাতে মূলত কলকাতা ও লাগোয়া জেলার উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে প্রধান বিরোধী দলকে।
পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতিতে ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েতি রাজ সম্মেলন করেছে কংগ্রেস এবং তৃণমূল। অথচ অধিকাংশ জেলা পরিষদ হাতে থাকলেও সিপিএম তেমন কিছু করে উঠতে পারেনি। অথচ ক্ষমতায় থাকাকালীন সিপিএম পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি শুরু করত বিরোধীদের অনেক আগে। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন শুরু। সম্মেলন শেষে ১৯ তারিখ ব্রিগেড সমাবেশ থেকেই পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতিতে নামতে চায় সিপিএম। আলিমুদ্দিনে দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক শেষে বুধবার দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও বলেছেন, “ব্রিগেডে সুবিশাল সমাবেশ করার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে।”
এ বারও প্রত্যেক জেলা নেতৃত্বকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন যথাসম্ভব বেশি মানুষকে গ্রাম থেকে আনার চেষ্টা করেন। জেলার নেতারা বিমানবাবুকে জানিয়েছেন, ফসলের দাম না-পাওয়ায় কৃষকদের একাংশের মধ্যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে গ্রাম থেকে বহু মানুষ ব্রিগেডে আসতে চান। কিন্তু সমাবেশ-শেষে গ্রামে ফিরে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসের শিকার’ হলে তাঁদের কে নিরাপত্তা দেবে? এই পরিস্থিতিতে কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হাওড়া থেকে ব্রিগেডে বেশি মানুষ আনার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই কলকাতা জেলা সিপিএম জানিয়েছে, তারা দু’লক্ষ লোক আনার চেষ্টা করবে। তবে রবীন দেব, অনাদি সাহুরা সে কাজে শেষ পর্যন্ত কতটা ‘সফল’ হবেন, তা নিয়ে আলিমুদ্দিন সন্দিহান। শনিবার দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির বৈঠকে গৌতম দেব জেলার নেতাদের বলেন, ব্রিগেডে দু’লক্ষ লোক নিয়ে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে ব্যারাকপুর ও দমদম শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন পুর এলাকার উপরই সিপিএম বেশি নির্ভর করছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীও জানিয়েছেন, ওই জেলা থেকে লক্ষাধিক মানুষ আসবেন ব্রিগেডে। তবে অন্যান্য বারের মতো সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মানুষ আসবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। হাওড়া জেলার ক্ষেত্রে শহরাঞ্চল থেকেই বেশি মানুষ আসার সম্ভাবনা। বর্ধমান জেলার সম্পাদক অমল হালদার নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, ব্রিগেডে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে গ্রামের মানুষের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ থাকলেও ফেরার পর বাস ভাঙচুর বা তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসের শিকার’ হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। একই পরিস্থিতি হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়।
রাজ্যের অধিকাংশ জেলা পরিষদ এখনও বামফ্রন্টের হাতে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মূলত জেলাশাসকরাই জেলার প্রশাসনিক কাজ চালাচ্ছেন। বামেদের হাতে থাকা জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতিগুলি কার্যত ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’। রাজ্য সম্মেলনের জন্য যে খসড়া রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে, তাতেও এই বিষয়টির উল্লেখ আছে।
রাজ্য কমিটিতে প্রতিটি জেলার তরফেই জেলা সম্মেলনের ভিত্তিতে রিপোর্ট পেশ করা হয়। সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও তাঁর মন্ত্রিসভার কাজে সমালোচনা করেন বিভিন্ন জেলার নেতা। আবার পার্টি পরিচালনার ক্ষেত্রে সমালোচিত হন বিমানবাবু-সহ আলিমুদ্দিনের নেতৃত্ব। রাজ্য কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সর্বত্রই আত্মসমালোচনা ও পর্যালোচনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সম্মেলন-পর্ব পরিচালিত হয়েছে’। খসড়া রিপোর্টে পাহাড়ে জাতিসত্তার আত্মপরিচয়, সংখ্যালঘু, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের সমস্যার কথা উল্লেখ করা হলেও তাদের মধ্যে নতুন করে ‘জনসংযোগ’ গড়ে কী ভাবে সমস্যা মোকাবিলা সম্ভব, তা নিয়ে বিশদে কিছু বলা হয়নি। এ নিয়ে রাজ্য কমিটির একাধিক সদস্য সংশোধনী জমা দিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। বৈঠকে একাধিক রাজ্য কমিটির সদস্য বলেন, পার্টি-কর্মীদের কাজকর্ম নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করতে গিয়ে অনেক সময়েই বিরোধীদের হাতে ‘অস্ত্র’ তুলে দিচ্ছেন দলীয় নেতৃত্ব। তাঁদের মতে, পার্টির মধ্যে জোরদার সমালোচনা, আত্মসমালোচনা হোক। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলায় দলের নেতা-কর্মীরা হেয় হলে সে কাজ ‘আত্মহনন’-এর পর্যায়ে পড়ে। অবিলম্বে তা বন্ধ হওয়া উচিত। |
|
|
|
|
|