বিয়ের আসরে গিয়ে নাবালিকার বিয়ে রুখল প্রশাসন। ঘটনাটি বিষ্ণুপুর থানার দমদমা গ্রামের।
ওই গ্রামেই বাড়ি সোমা সাঁতরার। সংসারে চরম অভাবের জন্য বছর ষোলোর এই কিশোরী পড়াশোনা করেনি। বাবা মারা গিয়েছেন। মা পারুল সাঁতরা দিনমজুরি করে কোনও রকমে সংসার চালান। অনেক দিন ধরেই মেয়ের জন্য পাত্র দেখছিলেন পারুলদেবী। শেষে পাশের গ্রাম আইচবাড়ির বাসিন্দা লখিন্দর মেনার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় সোমার। লখিন্দরও পেশায় দিনমজুর। বুধবার ছিল বিয়ের দিন। প্রশাসনের কাছে আগেই খবর ছিল যে ওই এলাকায় নাবালিকা বিয়ে হচ্ছে।
ব্লক সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্প আধিকারিক (সিডিপিও) দেবরঞ্জন রায় মঙ্গলবারই এক সুপারভাইজারকে প্রথমে মেয়ে ও পরে ছেলের বাড়িতে পাঠান। ওই সুপারভাইজার দু’পক্ষকেই বাল্যবিবাহ বেআইনি বলে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। দুই পরিবারই প্রশাসনের অনুরোধে কান না দিয়ে বিয়ের আয়োজন চালিয়ে যায়। বিডিও সুদীপ্ত সাঁতরার কানে যায় খবরটি। তিনি ঘটনাটি অতিরিক্ত জেলাশাসক সুশান্ত চক্রবর্তীকে জানান। তাঁর নির্দেশে বুধবার সন্ধ্যায় সিডিপিও নিজেই পুলিশ নিয়ে হাজির হন বিয়ের আসরে। তাতেও অবশ্য বিয়ে বন্ধ করতে রাজি হতে চাননি দুই বাড়ির লোকজন। শেষ পর্যন্ত আইনি ব্যবস্থার কথা বললে কিছুটা ভয় পেয়েই বিয়ে বন্ধ করতে রাজি হয় দুই পরিবার। পাত্র লখিন্দরকে দিয়ে সিডিপিও মুচলেকা লেখান যে, মেয়েটির ১৮ বছর বয়স হলে সে তাকেই বিয়ে করবেন। সিডিপিও পারুলদেবীকে বলেন, যদি এই ক’বছর মেয়েকে তিনি বাড়িতে রেখে প্রতিপালন করতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে সোমাকে সরকারি হোমে রাখার ব্যবস্থা প্রশাসন করবে।
দেবরঞ্জনবাবু পরে বলেন, “দুই পরিবারকে বুঝিয়ে শেষ অবধি যে নাবালিকার বিয়ে ঠেকানো গিয়েছে, এতেই আমরা খুশি।” অতিরিক্ত জেলাশাসকের কথায়, “আজও বাঁকুড়ার কিছু প্রত্যন্ত গ্রামে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটছে। তার প্রতিরোধে আমরা বিভিন্ন গ্রামে সচেতনতা শিবির করব। প্রচার কর্মসূচিও জোরদার করা হবে।” |