পাঁচামি ও তালবাঁধ এলাকায় সমস্ত পাথরশিল্পের কাজকর্ম বন্ধ রেখে বুধবার এই দিনটিকে কালাদিবস হিসেবে পালন করল আদিবাসী গাঁওতা। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার লিখিত ভাবে তাদের পক্ষ থেকে মালিকদের জানানো হয়েছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মহম্মদবাজারের তালবাঁধ গ্রাম লাগোয়া কমল খানের পাথর খাদানে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সেই সময় পাথরের টুকরো ছিটকে এসে পড়ে কয়েকটি আদিবাসী বাড়িতে। এর প্রতিবাদে অল্পবিস্তর হাতাহাতি হয় উভয়পক্ষের মধ্যে। এর পরেই আদিবাসীরা সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে আন্দোলন গড়ে তোলেন। পাথর শিল্পের সমস্ত কাজকর্ম কয়েকদিন বন্ধ থাকার পরে প্রশাসনের উদ্যোগে ফের কাজকর্ম শুরু হয়। কিন্তু ২০ এপ্রিল কাপাসডাঙার বাসিন্দা ব্যবসায়ী বসিরুল শেখকে বরোমেশিয়া গ্রামে মেরে ফেলার অভিযোগ ওঠে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার একদিন পরে অআদিবাসী সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার লোকজন সভা করার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়েছিলেন কাপাসডাঙায়। সাগরবাঁধি ও চাঁদা নামক দু’টি আদিবাসী গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরানো ও লুঠপাট, এমনকী এক ব্যক্তিকে পাথর দিয়ে মেরে কুয়োয় ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরে আদিবাসীরা পাল্টা আক্রমণ করেন। |
বন্ধ পাথরখাদান এলাকা। নিজস্ব চিত্র। |
পাথর শিল্পের বহু কার্যালয়, বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া এবং অআদিবাসী কর্মী-চালককে মারধর, পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ ওঠে। পুরো ঘটনায় ৪-৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় পাঁচামি ও তালবাঁধ এলাকার সমস্ত কাজকর্ম।
পাঁচামি মাইন অ্যান্ড ক্রাশার ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজির হোসেন মল্লিক বলেন, “খাদানে বিস্ফোরণ ঘটানোর সময়ে প্রয়োজনীয় সাবধানতা নেওয়া হয়। তবে পাথরের দু’দশটা টুকরো মাঝে মধ্যে ছিটকে যায়। তা নিয়ে কমবেশি বাকবিতণ্ডা হয়ে থাকে। প্রাথমিক স্তরে মিটেও যেত। কিন্তু ২০০৯-এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখনও পর্যন্ত যা যা ঘটেছে তা এক কথায় অকল্পনীয়।” তাঁর দাবি, “কেউ নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে গুটিকয়েক আদিবাসী লোকজনকে ভুল বুঝিয়ে অশান্তি পাকাচ্ছে। প্রশাসনকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। এখনও অধিকাংশ খাদান বন্ধ। গাঁওতার দাবি মেনে ৬ দিন কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল।” আদিবাসী গাঁওতার সম্পাদক রবীন সোরেন ও নেতা সুনীল সোরেন বলেন, “এত দিন আদিবাসীদের নানা ভাবে দাবিয়ে রেখে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে খাদানে বিস্ফোরণ ও পাথর কল চালিয়ে এসেছেন মালিকেরা। এ সবের প্রতিবাদ করায় বড় বড় কথা বলছেন পাথরশিল্প কর্তৃপক্ষ।” তাঁদের দাবি, “আমরাও শিল্পের পক্ষে। তবে সম্পূর্ণ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, এলাকায় বসবাসকারী লোকজনের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানীয় জল-সহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চলের মতো সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রযশাসনকে আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।” |