আট দিন পরে মা’র কোলে গিয়ে কেঁদে ফেলল বৈষ্ণবী
মাকে দেখতে পেয়ে লাফিয়ে কোলে উঠে পড়ে বৈষ্ণবী। আধফোটা কথায় অনেক কিছু বলতেও চেষ্টা করে। হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে ফিরে পেয়ে কেঁদে ফেলেন তার মা লক্ষ্মীদেবীও। মাকে কাঁদতে দেখে কাঁদতে থাকে বৈষ্ণবীও।
বছর তিনেকের বৈষ্ণবীর ঠাঁই হয়েছিল বাঁকুড়ার একটি হোমে। বুধবার জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে গেল সে।
গত শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারি কাশীপুর থেকে পুলিশ বছর তিনেকের ওই শিশুকন্যাটিকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। আধো আধো কথায় নিজের নামটুকু বলেওছিল। কোনও রকমে বোধা গিয়েছিল, তার বাবা হলেন রঞ্জিত পাত্র ও মা লক্ষ্মী পাত্র। তবে বৈষ্ণবীর কাছে এর বেশি আর কিছুই জানতে পারেনি পুলিশ। মেলেনি তার বাড়ির ঠিকানাও। গত শুক্রবারই শিশুটিকে আদ্রায় নিয়ে এসে তার বাড়ির লোকের বিস্তর খোঁজ খবর করেছিল পুলিশ। তবে বাবা-মায়ের কোনও হদিশ না মেলায় তাকে পাঠানো হয় পুরুলিয়ার শিশুকল্যাণ কমিটির কাছে। সে দিনই বাঁকুড়ার ছাতনার চামটাগড়ার আদিবাসী মহিলা সমিতির হোমে ঠাঁই মেলে বৈষ্ণবীর।
মা-বাবার সঙ্গে হাসিমুখে। ছবি: সুজিত মাহাতো।
জেলা শিশু কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, হোমে বেশ ভালই ছিল বৈষ্ণবী। তবে সে যাতে আবার বাড়ি ফিরতে চায় সে জন্য বিভিন্ন ভাবে তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন হোমের কর্মীরাও। কর্মী অনুপ খাঁ জানালেন, বারবার বৈষ্ণবীর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিন্তপুর নামের একটি গ্রামের নাম জানতে পেরেছিলেন বৈষ্ণবীর কাছে। কিন্তু সেখানে গিয়েও খোঁজ মেলেনি তার বাবা-মায়ের। এ ব্যাপারে পুলিশকে জানানো হলে পুলিশও কোনও হদিস দিতে পারেনি। পুলিশ জানায়, কোনও নিখোঁজ ডায়েরিও পায়নি তারা।
বৈষ্ণবীর ব্যাপারে জানতে পারেন হোমের সঙ্গে যুক্ত স্বপন চেল। তিনি জানান, নিশ্চিন্তপুরে খোঁজ না পেয়ে মনে হয়েছিল আশেপাশের কোনও গ্রামেই হয়ত শিশুটির বাড়ি। স্বপনবাবু নিশ্চিন্তপুরের বাসিন্দা। বুধবার পুরুলিয়ায় এসে পেশায় রেশন ডিলার স্বপনবাবু জানান, রেশন গ্রাহকদের তালিকা খুঁজে দেখার পরে পাশের পাত্রতিকরা গ্রামে রঞ্জিত ও লক্ষ্মী পাত্রের সন্ধান মেলে। স্বপনবাবুই ওই দম্পতির সঙ্গে দেখা করে বৈষ্ণবীর হোমের ঠিকানা দেন।
সোমবার চামটাগড়া গ্রামে এসেছিলেন রঞ্জিতবাবুরা। তবে সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথি সঙ্গে না থাকায় বৈষ্ণবীকে সঙ্গে করে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি তাঁরা। বুধবার সকালে ফের স্বপনবাবুর সঙ্গে পুরুলিয়ার জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরের অফিসে আসেন ওই দম্পতি। হোমের কর্মী অনুপবাবুর সঙ্গে পুরুলিয়ায় আসে বৈষ্ণবীও। সমাজ কল্যাণ দফতর আধিকারিক অনুপ দীনের উপস্থিতিতে তাকে বাবা মায়ের হাতে তুলে দেয় শিশু কল্যাণ সমিতি।
পেশায় রং মিস্ত্রি রঞ্জিতবাবু জানান, গত বৃহস্পতিবার আসানসোলের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। ট্রেনে আলাপ হও এক ব্যাক্তির সঙ্গে। রঞ্জিতবাবু বলেন, “আদ্রায় নেমে টিকিট কেটে ফিরে এসে দেখি স্ত্রী একা রয়েছেন। মেয়ে নেই। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি মেয়েকে খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছেন ট্রেনে আলাপ হওয়া ওই ব্যাক্তি। তার পরে বিস্তর খোঁজ করেও আর সন্ধান মেলেনি তার।” তবে ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে জানাননি কেন? কোনও উত্তর দিতে পারেননি রঞ্জিতবাবু।
শিশুকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অমিতা মিত্র বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই চেষ্টা করেছিলাম শিশুটিকে তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে। ও যে আবার বাড়ি ফিরতে পেরেছে সেটা ভেবেই আনন্দ হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.