অর্থাভাবে এত দিন ভাল ভাবে ধান কেনা যায়নি বলে দাবি করলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। জঙ্গলমহলে ধান কেনার কাজ দেখতে এসে বুধবার বাঁকুড়ার ওন্দায় তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, “জঙ্গলমহলে ধান কেনার ৭০টি শিবির করা হবে। নিকুঞ্জপুরে একটি সমবায় সমিতিতে ধান কেনার আনুষ্ঠানিক সূচনা করতে গিয়ে মন্ত্রী সভায় বলেন, “অর্থাভাব থাকায় ধান কেনার কাজ ভাল রকম ভাবে শুরু করতে দেরি হল। ৩৪ বছরের বাম জমানায় রাজ্যের খাদ্য দফতরকে শুষে নেওয়া হয়েছে। দফতরে টাকার সঙ্কট রয়েছে। সেই কারণে আমাদের নতুন সরকারকে ক্ষমতায় এসে এই ধাক্কা খেতে হল।” তবে তাঁর আশ্বাস, এ বার বাঁকুড়া জেলায় ধান কেনার গতি বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “অত্যাবশকীয় পণ্য সরবরাহ নিগম, বেনফেড, ন্যাফেড আর এনসিসিএফ-এই চারটি সংস্থা জেলার ৬৪টি সমবায় সমিতির মাধ্যমে ধান কেনা শুরু করতে চলেছে। আগামী সপ্তাহ থেকেই তারা পুরোদমে ধান কেনার কাজ শুরু করবে।” তিনি জানান, এর মধ্যে ১২টি সমবায় সমিতি মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় শিবির করে ধান কিনবে।
রাজ্য সরকার জঙ্গলমহলকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বললেও ধান কেনার কাজ ওই এলাকায় সে ভাবে শুরু না হওয়ায় বিরোধী বাম নেতারা কটাক্ষ করেছেন। মন্ত্রী নিজেও বলেন, “বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল এলাকায় চালকল নেই। সমবায়ের সংখ্যাও খুব কম। তাই এত দিন ওই এলাকায় ভাল ভাবে ধান কেনা যায়নি। |
তবে আগামী সপ্তাহ থেকে মাওবাদী এলাকাগুলিতে ভাল করে মাইকে প্রচার করে ধান কেনার শিবির করা হবে।” বাঁকুড়ার জেলা খাদ্য নিয়ামক শঙ্কর নারায়ণ বাঁকুড়া বলেন, “এ দিন থেকেই অত্যাবশকীয় পণ্য সরবরাহ নিগমের একটি সমবায় সমিতি সারেঙ্গার ব্রাম্ভ্রণডিহা এলাকায় শিবির করে ধান কেনা শুরু করেছে। বাকি এলাকাগুলিতে শীঘ্রই ধান কেনা শুরু হবে।” খাদ্য দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল এলাকায় ৬ হাজার টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টন ধান কেনা হয়েছে। সামগ্রিক ভাবে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেকের বেশি ধান কেনা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বাঁকুড়া জেলায় ৭৫ হাজার টন ধান কেনার লক্ষ্য ছিল। ইতিমধ্যে ৪১ হাজার টন ধান আমরা কিনেছি। রাজ্যের অন্যান্য জেলার তুলনায় এখানে ভাল ধান কেনা চলছে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে বাঁকুড়া সার্কিট হাউসে খাদ্যমন্ত্রী খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি নির্দেশ দেন, যে সমস্ত এলাকায় চালকল নেই, দ্রুত সেই সব এলাকায় সমবায় সমিতিগুলিকে ধান কিনতে নামাতে হবে। এ দিন সকালে তিনি জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি-সহ তিন মহকুমাশাসক ও বিডিওদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আধিকারিকরা মন্ত্রীকে জানান, বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলমহল তথা খাতড়া মহকুমা এলাকায় চালকল নেই। এরপরেই মন্ত্রী বিডিওদের নির্দেশ দেন, ওই জায়গাগুলিতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বেশি করে শিবির করতে হবে। অত্যাবশকীয় পণ্য সরবরাহ নিগমকে বলা হয়, ওই এলাকাগুলিতে প্রথম দফায় অন্তত ৭০টি ধান কেনার শিবির করতে হবে। বাকি দুই মহকুমা এলাকার যেখানে চালকল নেই, সেই এলাকাগুলিতেও শিবির করা হবে। শিবিরে সংশ্লিষ্ট বিধায়ক ও বিডিওদের মন্ত্রী উপস্থিত থাকতে বলেছেন। খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে ধান কেনার গতি বাড়াতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগমকে ৩৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে মন্ত্রী এ দিন সাধারণ ধান চাষিদের সঙ্গে কথা না বলায় তাঁরা হতাশ হন।
জঙ্গলমহলের রেশনের সুবিধা বাড়াতে নতুন করে আরও আটটি দোকান খোলা হবে বলে মন্ত্রী জানান। জেলার বাকি এলাকায় আরও ২২টি রেশন দোকান খোলা হচ্ছে। মাওবাদী উপদ্রুত এলাকা বিশেষত রানিবাঁধ ও রাইপুরে রেশন ব্যবস্থা নির্বিঘ্নে করার জন্য পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। তিনি এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার প্রণব কুমারের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি আরও জানান, বাঁকুড়া জেলা থেকে সংগ্রহ করা ধান ভেঙে চাল তৈরি করে এই জেলায় রেশনে দেওয়ার জন্য এফসিআইকে বিক্রি করা হবে। |