জুয়া খেলা, মদ খাওয়া নিয়ে প্রতিবাদের জের
মেয়েকে খুন করে, স্ত্রীকে কুপিয়ে ধৃত স্বামী
জুয়া খেলা, মদ খাওয়া নিয়ে প্রতিবাদ করায় ছোট মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুন করে এবং স্ত্রী ও আর এক মেয়েকে কুপিয়ে পালানোর সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ল এক ব্যক্তি। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ থানার বগিরুলা মোড়ের কাছে একটি ইটভাটায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে মিনাখাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তায় মারা যায় ছোট মেয়ে মানসরা খাতুন (২)। মা আজমিরা বিবি ও আর এক মেয়ে বছর পাঁচেকের তৈয়াবা খাতুনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁদের কলকাতায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আজমিরা বিবি বিপণ্মুক্ত হলেও তৈয়াবার অবস্থা সঙ্কটজনক। বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে সাংসারিক অশান্তির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। আজমিরা বিবির অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর স্বামী আবু করিম মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
ধৃত আবু করিম মোল্লা।-নিজস্ব চিত্র
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর আট নম্বর তিতিকুমার গ্রামের বাসিন্দা আজমিরা বিবির সঙ্গে আট বছর আগে বিয়ে হয় মিনাখাঁর খড়িবেড়িয়ার আবু করিম মোল্লার। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীতে অশান্তি লেগেই ছিল। প্রতিবেশীরা জানান, দিন মজুর আবু করিমের জুয়া খেলা, মদ খাওয়ার অভ্যাস ছিল। দিন মজুরির সব টাকা ওই বাবে উড়িয়ে দিতে সে। এ নিয়ে নিত্য স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হত। স্ত্রীকে মারধরও করত করিম। ইতিমধ্যে দুই কন্যাসন্তান হওয়ায় সংসারের খরচ বাড়লে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন আজমিরা। স্বামীর সঙ্গে একটি ইটভাটায় কাজ নেন। দুই মেয়েকে নিয়ে ইটবাটাতেই থাকতেন তাঁরা। দিন কয়েক ধরে জুয়া খেলা ও মদ খাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছিল করিম। অনের রাত করে ঘরে ফিরত। মঙ্গলবার রাতেও অনেক দেরি করে বাড়ি ফিরলে স্বামী-স্ত্রীতে তুমুল ঝগড়া বাধে। ইদানীং রাত করে বাড়ি ফেরা নিয়ে অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক আছে ভেবে স্বামীকে সন্দেহ করতেন আজমিরা। এ দিনও সেই সন্দেহ করায় খেপে যায় করিম। ঘরেই ঘুমোচ্ছিল দুই মেয়ে। রাগের মাথায় আবু করিম ছোট মেয়ে মানসারার গলা টিপে ধরলে সে বিছানায় নেতিয়ে পড়ে। চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় তৈয়াবার। বোনের ওই অবস্থা দেখে বাবাকে বাধা দিতে গেলে ভোজালি দিয়ে মেয়ের গলায় কোপ মারে করিম। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। এর পরে স্ত্রীকেও ভোজালি দিয়ে কোপাতে তাকে। কোনওরকমে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে চিৎকার করতে থাকেন আজমিরা। চিৎকারে লোকজন ছুটে এলে পালিয়ে যায় করিম। স্থানীয় বাসিন্দারাই তিনজনকে মিনাখাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তায় মারা যায় মানসারা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তল্লাশি শুরু করলে কাছেই একটি মেছোঘেরির আলাঘর থেকে করিমকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, জেরায় করিম জানিয়েছে, অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তাকে সন্দেহ করত স্ত্রী। তা নিয়ে ঝগড়া লেগেই ছিল। এ দিন জুয়ায় হেরে গিয়ে মদে খেয়ে সে বাড়ি ফেরার পরে ফের স্ত্রী সঙ্গে ঝগনা বেধে যায়। নেশার ঘোরে সে মাথা ঠিক রাখতে না পেরে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
আজমিরা বিবি মা সাহিদা বিবি বলেন, “বিয়ের পর থেকে জামাই রোজ মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে মেয়েকে মারধর করত। ইদানীং সে জুয়া খেলো শুরু করেছিল। এ ছাড়া অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। ওই দিন সন্ধ্যায় আমার মেয়ের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে গিয়ে তা বিক্রি করে জুয়া খেলে, মদ খেয়ে ঘরে ফেরে। মেয়ে তার প্রতিবাদ করাতেই ওকে ও দুই মেয়েকে খুনের পরিকল্পনা করে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.