|
প্রধান শিক্ষক নেই, নেই চাবিও, অতএব স্কুল ছুটি
নিজস্ব সংবাদদাতা • কৃষ্ণনগর |
|
প্রধানশিক্ষক না আসায় তালা খোলা যায়নি স্কুলের। বুধবার, তাই শেষপর্যন্ত হাঁসখালির গাজনা আঞ্চলিক বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরে ছুটিই ঘোষণা করে দিতে বাধ্য হল স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুলের চাবি থাকে প্রধান শিক্ষকের কাছে। বাবা অসুস্থ, তাই এ দিন তিনি আসতে পারেননি। স্কুলের আরও একটি চাবি অবশ্য রয়েছে। তা থাকে স্কুলের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর কাছে। কাকতালীয় ভাবে এ দিন আসেননি তিনিও। শিক্ষকেরা বলছেন, চেষ্টা করেও দু’জনের কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা যায়নি। অতএব, ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষার পরে শেষ পর্যন্ত ছুটিই ঘোষণা করে দেন শিক্ষকেরা।
স্কুলের প্রধানশিক্ষক বিপ্লব বিশ্বাস অবশ্য বলছেন, ‘‘বাবা মরণাপন্ন। কলকাতার একটি হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার চলছে। পুরো ঘটনাটি হঠাৎ করে হওয়ায় আমি বিকল্প কোন ব্যবস্থা করার সুযোগই পাইনি। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’’ কিন্তু আর একটি চাবি কী হ’ল? সেই চাবি দিয়ে কেন স্কুল খোলা হ’ল না? বিপ্লববাবু বলেন, ‘‘আর একটি চাবি স্কুলের যে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীর কাছে থাকে তিনিও আগে থেকে কিছু না জানিয়ে এ দিন স্কুলে আসেননি। তাঁর সঙ্গেও আমি চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারলাম না।’’ ঘোষণা করে দেওয়া হ’ল বাড়ি ফিরে গেল স্কুলের ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষকরা এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী থেকে শুরু করে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকও স্কুলের ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ১৭০০ অন্যান্য দিনের মত এদিনও ব্যাগ কাঁধে ছাত্রছাত্রীরা হাজির হয়েছিল স্কুলে চলে আসেন শিক্ষক শিক্ষিকারাও কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও দেখা মেলেনি প্রধানশিক্ষকের প্রধানশিক্ষক না আসায় স্কুলের গেটও খোলা যায়নি ফলে স্কুলের সামনে অভিভাবক ও ছাত্র ছাত্রীরা রীতিমত বিক্ষোভ দেখাতে থাকে
নবম শ্রেণীর ছাত্রী সুস্মিতা সিংহ বলে,‘‘ স্কুলে গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ স্কুলগেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন শিক্ষক শিক্ষিকারা কিন্তু তাঁরা কেউই স্কুল খোলার ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি পরে জানতে পারি স্কুলের চাবি প্রধানশিক্ষকের কাছে তিনি স্কুলে না আসায় শেষপর্যন্ত আমাদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়’’ স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় অভিভাবকদের ক্ষোভ বাড়তে থাকে সাড়ে এগারোটা নাগাদ ফোন করা হয় প্রধানশিক্ষককে তিনি আসতে পারবেন না জানিয়ে দিলে স্কুলের ছুটি ঘোষনা করে দেওয়া হয়
তবে এ ঘটনা সহজ ভাবে নিচ্ছেন না নদিয়া জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বিশ্বজিৎ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘লজ্জাজনক বিষয়। চাবি নেই বলে স্কুল খোলা লে না? এ’টা আবার হয় নাকি! বিষয়টি কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না। প্রধানশিক্ষকের উচিৎ ছিল একটি বিকল্প ব্যবস্থা করে ভবিষ্যতে যাতে এই ধরণের ঘটনা না ঘটে তার জন্য স্কুল কতৃপক্ষকে সতর্ক করা।’’
সাত সকালেই দূরের গ্রাম থেকে স্কুলে এসে ছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদেরই একজনের অভিভাবক সুকন্যা সিংহ বলেন, ‘‘কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে এ ভাবে একটা স্কুলে ছুটি দেওয়া হয় বুঝতে পারছেন? প্রধানশিক্ষক যদি আসতে না পারেন তাহলে তো অন্য কাউকে স্কুল খুলতে হবে। এটাই তো স্বাভাবিক। ছেলে মেয়েরা কত দূর থেকে স্কুলে এল, একটা চাবি নেই বলে তারা ফিরে যাবে?”
পাশাপাশি, ধুবুলিয়ার গাবরকুলি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রটি সোমবার থেকে বন্ধ। এই স্কুলের প্রধানশিক্ষককে দিন কয়েক আগে মিড ডে মিলের চাল চুরির অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। সোমবার থেকে বন্ধ হয়ে রয়েছে সেই সল্কুলটিও। কৃষ্ণনগর-২ ব্লকের বিডিও সৌরভ বারিক বলেন, ‘‘ওই স্কুলে এক জন শিক্ষক ছাড়া বাকিরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সেই কারণেই স্কুলটি বন্ধ ছিল। যদিও বৃহস্পতিবার থেকে স্কুল খোলার জন্য কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ |